• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ অপরাহ্ন

টাকার হাটেও বেড়েছে টাকার দাম

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪

ঈদের সালামি হোক বা বকশিশ, সবক্ষেত্রেই নতুন টাকার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। অনেকে আবার দান-খয়রাত কিংবা ফিতরাতেও নতুন টাকা বিতরণ করেন। ফলে ঈদকেন্দ্রিক নতুন টাকার চাহিদা থাকে অনেক বেশি। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে এ চাহিদা আরও বেশি। এসব বিষয় বিবেচনা করে ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ব্যাংকও নতুন টাকা ছাড় করে থাকে। যেগুলো বিভিন্ন ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। এবারও বিভিন্ন ব্যাংকের ৮০ শাখায় মিলবে নতুন টাকা।

তবে ব্যাংক ছাড়াও ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকার ফুটপাতে সারাবছরই চলে নতুন টাকার কেনাবেচা। অনেকেই এগুলোকে বলে থাকেন টাকার হাট। ঈদকে সামনে রেখে ফুটপাতের টাকার হাটেও বাড়ে নতুন টাকার চাহিদা। রাজধানীর গুলিস্তান ও মতিঝিলে এরই মধ্যে জমে উঠেছে অস্থায়ী টাকার হাট। তবে এবার নতুন টাকার সরবরাহ কম থাকার অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।

ফুটপাতের এসব বিক্রেতা নতুন টাকা সংগ্রহ করেন বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে। পরে তারা এ টাকা বিক্রি করেন সাধারণ মানুষের কাছে। গুলিস্তান ও মতিঝিলের অস্থায়ী হাটে নতুন টাকা বিক্রি হয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও এখানে ক্রেতা আসেন টাকা সংগ্রহ করতে। এর সঙ্গে ছেঁড়া-ফাটা টাকার বিনিময়ও করা যায় তাদের কাছে।

নতুন টাকা কিনতে গুলিস্তানে আসেন শফিকুল ইসলাম। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই এখান থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করে থাকি। ব্যাংকে অনেক ভিড় থাকে, আবার নিজেরও অফিস আছে। সব মিলিয়ে বাড়তি ভোগান্তি এড়াতে গুলিস্তান থেকে নতুন টাকা কিনে বাড়ি পাঠাই। তবে এবার বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম চাচ্ছেন। প্রতি বান্ডিল বা ১০০ পিস টাকার দাম (পরিমাণভেদে) ৮০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি নেওয়া হচ্ছে।’

একই অভিযোগ তানিশা নামের আরেক ক্রেতার। গণমাধ্যমকে তানিশা বলেন, ‘দুই টাকা ও পাঁচ টাকার কয়েক বান্ডিল নতুন নোট লাগবে আমার। এসে দেখি গুলিস্তান ও মতিঝিলের ফুটপাতে নতুন টাকার দাম গতবারের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর ঈদে দুই টাকার এক বান্ডিল নোট কিনেছিলাম ২৮০ টাকায়। এবার তা ৩৮০ থেকে ৩৯০ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে। পাঁচ টাকার বান্ডিলে গতবারের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। এভাবে টাকার দাম বাড়ানোর মানে কী বুঝলাম না। এটাতো মরিচ-পেঁয়াজের বাজার না। এখানে তো বাড়তি খরচ নেই।’

তবে বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখনো এবারের ঈদের জন্য নতুন টাকা ছাড়া হয়নি। এ কারণে মার্কেটে এখনো সেভাবে নতুন টাকা মিলছে না। যাদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে সেখান থেকে বাড়তি দামেই টাকা কিনতে হচ্ছে। এতে টাকার দাম কিছুটা বাড়তি মনে হতে পারে। তবে আমরা প্রতি বান্ডিলে ২০ টাকার বেশি লাভ রাখি না। যা বাড়তি পাই এতেই সংসার চলে।

কথা হয় গুলিস্তানের টাকা বিক্রেতা সোহেলের সঙ্গে। গণমাধ্যমকে সোহেল বলেন, ‘এখনো নতুন টাকা আসা শুরু হয়নি। গত বছরের টাকাই বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে দাম কিছুটা বেশি। তবে খুব বেশি বাড়েনি। আবার বেচাকেনাও সেভাবে বাড়েনি। ব্যবসা তেমন ভালো যাচ্ছে না।’

একই কথা বলেন আরেক বিক্রেতা আনিস। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমরা যে দামে টাকা (বান্ডিল) সংগ্রহ করি তার চেয়ে ২০ টাকা বেশি রাখি। ক্রেতা বেশি হলে দাম বেশি রাখা হয় এ অভিযোগ সঠিক নয়। ঝড়-বৃষ্টি, রোদ উপেক্ষা করে সারাদিন খোলা জায়গায় বসে আমরা টাকা বিক্রি করি। এতে দিনে কারও ৫০০ টাকা লাভ থাকে, কারওবা ৭০০ টাকা। যা দিয়ে সংসার-সন্তানের খরচ মেটাই।’

আসছে সপ্তাহে বাজারে নতুন টাকার সরবরাহ বাড়লে দাম ওঠানামা করতে পারে বলেও জানান আনিস।

এবার সবচেয়ে বেশি দাম রাখা হচ্ছে দুই টাকার নতুন নোটে। দুই টাকার প্রতি বান্ডিলের (১০০ পিস নোট) দাম ২০০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বান্ডিলে বাড়তি রাখা হচ্ছে ১৮০ টাকা। পাঁচ টাকার বান্ডিল (৫০০ টাকা) বিক্রি হচ্ছে ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকায়। ১০ টাকার বান্ডিল (এক হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১৮০ টাকায়। এছাড়া ২০ টাকার বান্ডিল (২ হাজার টাকা) ২ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০ টাকার বান্ডিল (৫ হাজার টাকা) বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়া ১০০ টাকার বান্ডিলে ২০০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। ৩০০ টাকা বাড়তি রাখা হচ্ছে ২০০ টাকার বান্ডিলে।

প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারে নতুন টাকা ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ৩১ মার্চ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা থেকে নতুন নোট সংগ্রহ করতে পারবেন গ্রাহকরা। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৮০টি শাখা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন অফিসের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় নতুন টাকা বিনিময় করা হবে। এবার ঈদ উপলক্ষে ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকা মূল্যমানের নতুন নোট নিতে পারবেন গ্রাহকরা। তবে একই ব্যক্তি একাধিকবার নতুন টাকার নোট নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ছুটির দিন ছাড়া আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে নোট বিনিময়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ