• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ পূর্বাহ্ন

বিএনপি নেতা সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

ফরিদপুর
নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিমকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করে একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে। যে সব দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা হলো বিএনপি’র কেন্দ্রীয় দপ্তর ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর। এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক মুকসুদপুরের একটি জনসভায় দেওয়া তার বক্তব্যে এই অভিযোগের বিষয়টি এলাকায় প্রকাশ পায়।
অভিযোগ দিয়েছেন মুকসুদপুরের টেংরাখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আসমা খানম ও ফরিদপুর সদরের বাসিন্দা তানজীমুল ইসলাম। তাদের জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর গোপালগঞ্জসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের মানুষ যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে শুরু করেছে তখন এ অঞ্চলে দানবের ভূমিকায় আবির্ভাব ঘটেছে সেলিমুজ্জামান সেলিম নামে নেতৃস্থানীয় এক ব্যক্তির। নিজেকে বিএনপির এই ব্যক্তি তার নিকটতম কয়েকজনকে দিয়ে বসিয়েছেন চাঁদার হাট, দখল করছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ভাগ বসিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। অভিযোগ রয়েছে মুকসুদপুরে ও ফরিদপুরের বিএনপির বিতর্কিত নেতাদের প্রায় সবাই সেলিমের অনুসারী। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে লিখিত ও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে মৌখিক অভিযোগে আসমা খানম জানান ‘সেলিমুজ্জামান সেলিমের নির্দেশে মুকসুদপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পরিচয়দানকারী তারিকুল ইসলাম রাজু তার কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে উপজেলা পরিষদ আয়োজিত সরকারি একটি অনুষ্ঠানে তাকে চরমভাবে নাজেহাল করেন। পরের দিন তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন, টাকা না দিলে তার পদত্যাগপত্র এখনই জমা দিতে হবে। ওই সময় পদত্যাগপত্র না দিলে তাকে রাস্তাঘাটে যেখানে যে অবস্থায় পাওয়া যাবে সেই অবস্থায় তাকে হেনস্তা করা হবে। এই বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে আসমা খাতুন জেলা প্রশাসক মুহাম্মাদ কামরুজ্জামানকে জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। আসমা খাতুন আরও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মুকসুদপুর থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে বল্লেও মুকসুদপুর থানার ওসি তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। উপরন্ত সেলিমুজ্জামানের নির্দেশে তাকে তারিকুল ইসলাম রাজুর নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত চাঁদার টাকা পরিশোধ, হুমকি ধামকি এবং টাকা না দেওয়া পর্যন্ত স্কুলে আসা নিষেধ এবং ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে পদত্যাগের হুমকি দেওয়ায় তিনি বাধ্য হয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সেলিমুজ্জামান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন।
আসমা খাতুন আরও জানান ‘দলীয় হাই কমান্ড বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর কাছে অন্তর্জাল (ইন্টারনেট) এর মাধ্যমে আবেদনপত্র পৌছালে তিনি দলীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএনপির জ্যৈষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে পাঠান। দলীয় মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিষয়টি তদন্তের জন্য দলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি প্রতিবেদন দিলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গৃহীত হবে বলে তিনি আশাবাদী। আসমা খাতুন আরও জানিয়েছেন দলীয় হাই কমান্ডে সেলিমুজ্জামানের বিরেুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার পরে তার সাঙ্গপাঙ্গরা আর আগের মত বিরক্ত করছে না। তবে বিভিন্ন মহল দিয়ে বিষয়টি নিস্পত্তি এবং অভিেেযাগ প্রত্যাহারের চাপ দিচ্ছে। এসব অভিযোগ ছাড়াও তিনি জানান ৫ আগষ্ট এর পট পরিবর্তনের পরেই মুকসুদপুরের হাঁট বাজার, বাস স্টান্ড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল করতে থাকেন সেলিমুজ্জামান ও তার পরিবার এবং সাঙ্গপাঙ্গ। ইতোমধ্যে সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাগেছে সেলিমুজ্জামান কাশিয়ানী এমএ খালেক ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বড়ির সভাপতি এবং তার স্ত্রী সাবরিনা বিনতে আহম্মদ জয়নগর ইয়ার আলী খান ডিগ্রি কলেজের সভাপতির পদ দখল করেছেন। মুকসুদপুর কলেজ সরকারি হওয়ায় গর্ভনিং বডিতে না যেতে পারলেও বাটিকামারি, উজানী এবং জলিরপার কলেজে তার লোকজন দখল করার জন্য প্রশাসনিক
ভাবে পায়তারা করছেন।
মুকসুদপুরে সর্বত্র আওয়ামী সমর্থিত ব্যানার ফেষ্টুন হঠাৎ উড়ে গিয়ে সেলিমুজ্জামান সেলিমের পোষ্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে। মনে হচ্ছে তিনি মন্ত্রী উপদেষ্টা মহলের একটা কিছু। অভিযোগে জানা গেছে সেলিমুজ্জামানের বাড়ীর কাছেই বিগত সরকারের আর্শীবাদপুষ্ট স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাসুদুর রহমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেবা গ্রীণ লাইন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে চান। নইলে তার সাথে আপোষের প্রস্তাব দিয়ে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করেন। ব্যবসায়ী মাসুুদুরর রহমান তার ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিনা পুঁজিতে তার প্রতিষ্ঠানের ১০% মালিকানা দিতে রাজী হন। কিন্ত সব রকম দরকশাকশি শেষে বিনা পুজিঁতে ৩০% মালিকানা প্রায় পেয়ে যাচ্ছেন সেলিমুজ্জামান সেলিম।
অপর দিকে ফরিদপুরের বাসিন্দা তানজীমুল ইসলাম তার দেয়া অভিযোগে সুনিদ্দিষ্ট ১০টি অভিযোগ দিয়ে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা দাবি করেছেন। সে গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযোগ হলো নিজের কোনো ব্যবসা বাণিজ্য না থাকলেও সেলিমুজ্জামান সেলিম চলেন দামি গাড়িতে। থাকেন রাজনীতির অভিজাত মগবাজার এলাকায় ডুপ্লেক্স বাড়িতে। বিএনপির কাকে কোথায় পদে বসাতে হবে, কাকে বাদ দিতে হবে এই লেনদেনও করেন জলসায় বসে। পোস্টিং বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ও বিএনপির পদ বাণিজ্যও করেন রাজধানীর অভিজাত ক্লাবে বসে। এ ছাড়া তার অতি ঘনিষ্টজন বলে পরিচিত সাবেক অ্যাডিশনাল আইজি মনিরুল ইসলামের অবৈধ সম্পদের রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন সেলিম। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর সেলিম তাকে দেশ থেকে পালাতে সহায়তা করেন। মনিরুল ইসলামের সব অবৈধ সম্পদ সেলিমের জিম্মায় রয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপির সব গোপন তথ্য সেলিম মনিরুল ইসলামের কাছে ফাঁস করতো। নিজের মতের বাইরে কেউ গেলে সেলিম তাকে মনিরকে দিয়ে গ্রেফতার করাতো। সেলিমুজ্জামান সেলিম মূলত মনিরের সোর্স হিসেবে বিএনপিতে কাজ করতো। এছাড়া গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা দিদার হত্যা মামলার আসামি পপা চৌধুরীসহ কয়েক জনের নাম কাটানোর কথা বলে সেলিমুজ্জামান সেলিম কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ আসনে সেলিমুজ্জামান সেলিমকে চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেয়ায় রাজধানীর গুলশান বিএনপি অফিসের সামনে শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও তার ছেলের উপর হামলা করে সেলিমের সন্ত্রাসী বাহিনী। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে গত ৬ বছর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীরের ছেলে, দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পরে সম্পূর্ণ সাদা মনের রাজনীতিক শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর এর ছেলে এখনও অপ্রকৃতিস্থ রয়েছেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হয়েও পুলিশ প্রোটকলে গোপালগঞ্জে চলাফেরা করেন সেলিম। কাশিয়ানী-মুকসুদপুরের ইউএনও-ওসিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে বসিয়ে রাখেন। গোপালগঞ্জের ডিসি-এসপিকে অন্যায় আবদার পূরণে বাধ্য করেন। নিজেকে ভবিষ্যৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে প্রশাসনকে ব্যবহার করেন।
তাই, বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বহুরূপী প্রতারক সেলিমুজ্জামান সেলিমকে আইনের আওতায় এনে শাস্তিপ্রদান করতে প্রধান উপদেষ্টার মর্জি কামনা করা হয়।
প্রতিবেদক একাধিকবার তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার অপারগতা প্রকাশ করায় দৈনিক প্রথম আলো গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি নতুন শেখ এবং চ্যানেল ২৪ প্রতিনিধি বাদল সাহার মাধ্যমে সেলিমুজ্জামান সেলিমের কাছে তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্রেফ বলেন এসব অভিযোগ সত্য নয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ