রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল খেলা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয়ে উপাচার্য স্যার বলেন,
দুটি বিভাগের মধ্যে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা আমরা দেখলাম তা আমাকে লজ্জিত ও ব্যথিত করেছে। তবে এই লজ্জার বড় দায়ভার যাদের, তাদের ভেতর অনুশোচনা বা লজ্জার তেমন কোন লক্ষণ দেখতে পাই নি। এটা আরেক লজ্জা।
ছাত্রছাত্রীদের মূল কাজ পড়াশোনা। জ্ঞান অর্জন। নিজেদের তৈরি করা। এখানে পড়াশোনার সাথে এক্সট্রা-কারিকুলার, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি খুব প্রয়োজনীয়। আমি এক্সট্রা-কারিকুলার এবং কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি বিশেষভাবে উৎসাহিত করতে চাই। অশ্লীল কথাবার্তা এবং লাঠিসোটা ব্যবহারে দক্ষ ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মানায় না।
একেবারে শুরু থেকেই আমার একটা পলিসি ছিল। সবাইকে সাথে নিয়ে, একসাথে সামনে এগোনো। এর ফলে কাজের গতি কিছুটা ধীর হলেও, আমি মনে করি, এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়। এই আড়াই মাসের অভিজ্ঞতায় মনে হচ্ছে, এই স্পিরিট পুরোপুরি কাজ করছে না। এর প্রধান কারণ, বিভিন্ন ইন্টারেস্ট গ্রুপ। এদের ফোকাস শুধুমাত্র নিজেদের নিয়ে। নিজেদের কথাটাই সবচেয়ে বড়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ একটা গৌণ বিষয়। এটা দুঃখজনক।
যাই হোক, খেলাধুলার বিষয়ে ফিরে আসি। যে দুটি বিভাগীয় দল নিয়ে সমস্যার সুত্রপাত, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব ছাত্র সহিংসতায় এবং ভাঙচুরে অংশ নিয়েছে, তাদের আইডেন্টিফাই করার কাজ শুরু হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য ফুটবল টুর্নামেন্ট বন্ধ থাকবে। এটা সাময়িক। বাকি খেলাগুলো শিগ্রি শুরু হবে। তবে খেলা পরিচালনায় কিছু পরিবর্তন আসবে। আমি কিছু পদক্ষেপের কথা ভাবছি।
১। খেলাধুলা বন্ধুত্ব এবং বিনোদনের জন্য। সেই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যে ধরণের শিক্ষা ও মানসিকতা প্রয়োজন সেখানে ঘাটতি আছে। বাকি খেলাগুলোতে দুটি দলের সমর্থকরা উত্তর এবং দক্ষিন গ্যালারিতে অবস্থান করবে।
২। প্রত্যেকটি খেলায়, প্রত্যেক গ্যালারির জন্য দুজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্য থাকবেন। তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দুজন শিক্ষক থাকবেন। অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিন গ্যালারির জন্য মোট আটজন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক। খেলা শুরুর আগে অফিসিয়ালি তাদের এই দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে। বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা থাকলে খেলা বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের থাকবে।
৩। খেলা শেষে কোন দলের খেলোয়াড় বা সমর্থকরা স্টেডিয়াম প্রাঙ্গনে জটলা করতে পারবে না।
৪। দুই দলের খেলোয়াড় ও সমর্থকরা পৃথক সময়ে স্টেডিয়াম ত্যাগ করবে। এর ক্রম কী হবে, সেটা দায়িত্বপ্রাপ্ত আটজন শিক্ষক মিলে ঠিক করবেন।
একটা সভ্য সমাজে এই সব নিয়ম কানুনের কোন প্রয়োজন হয় না। সবাই মিলেমিশেই খেলা উপভগ করতে পারে। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা সেই পর্যায়ে এসেছি, তার প্রমাণ আমরা রাখতে পারছি না। আশা করি একদিন এই সমস্ত নিয়ম কানুনের আর প্রয়োজন হবে না।