• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন

টেকসই খাতে অর্থায়ন কমেছে ব্যাংকের

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪

টেকসই অর্থনীতিতে দেশের ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ কমেছে দুই হাজার সাত কোটি টাকা। প্রতি মাসেই পরিবেশবান্ধব টেকসই অর্থনীতির জন্য বিনিয়োগ করে থাকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠনগুলো। কিন্তু গত তিন মাসে নতুন করে কোনো বিনিয়োগ হয়নি এ খাতে। উল্টো দেশের জলবায়ু রক্ষায় বিনিয়োগের পরিমাণ ৯০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা থেকে কমে ৮৮ হাজার ৬৯৬ কোটিতে নেমেছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ খাতেও ব্যাংকের তারল্যসংকটের প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নে উৎসাহিত করে আসছে। ফলে দেশের ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) এখন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ পরিবেশবান্ধব খাতে বিতরণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।

সেই সঙ্গে মোট ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে দিতে বলেছে। টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্প ইত্যাদি। টেকসই অর্থায়নের মধ্যে রয়েছে পরিবেশবান্ধব খাতে যেকোনো ধরনের অর্থায়ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পগুলোতে সামষ্টিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।

কিন্তু তিন মাস আগে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে টেকসই অর্থনীতিতে দুই হাজার সাত কোটি টাকা বিনিয়োগ কমেছে। তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে টেকসই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ছিল ৩৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।
সারা বিশ্বে এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। সে জন্য কার্বন নিঃসরণ কমাতে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ঝুঁকছে বিভিন্ন দেশ।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এ দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ২০০টির বেশি। এই অবস্থায় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই অর্থায়নের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম শুরু করেছে।
তারই অংশ হিসেবে অনেক ব্যাংক তাদের শাখা ও এটিএমে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক তো কাগজের ব্যবহারও কমিয়ে আনছে। টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে বা হবে—এমন প্রকল্পগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক টেকসই অর্থায়নে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনবিএফআই) উৎসাহিত করে আসছে। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি চার বছর বছর ধরে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাসটেইনেবল রেটিং বা টেকসই মান প্রকাশ করছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত পাঁচটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই মান যাচাই করা হয়।

সূচকগুলো হলো টেকসই অর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম, পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন, টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচক এবং ব্যাংকিং সেবার পরিধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট টেকসই বিনিয়োগের মধ্যে সাত হাজার ২৩৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে সবুজায়ন প্রকল্পে। ডিসেম্বর শেষে এই বিনিয়োগ ছিল সাত হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে সবুজ প্রকল্পে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ কমেছে ১৬৬ কোটি টাকা। টেকসই উন্নয়নের যুগে এসে ব্যাংকগুলো পরিবেশ, গ্রিন হাউস ইফেক্ট, পরিবেশদূষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার ব্যাপারে ভাবতে শুরু করেছে। এই ভাবনা থেকেই সবুজ ব্যাংকিং ধারণার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। প্রসার ঘটলেও তারল্যসংকটের কারণে কোনো খাতেই ঠিকমতো বিনিয়োগ করতে পারছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে তীব্র তারল্যসংকট বিরাজ করছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণের জোগান দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কারণ এর ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিপর্যয় দেখা দিয়েছে উৎপাদন খাতে। সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন কর্মসংস্থান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ