আগামী নির্বাচন সামনে রেখে গতবারের মতো এবারও মামলা-হামলা, সন্ত্রাস ও গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে মাঠ শূন্য করার কাজ সরকার এখনই শুরু করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার (৯ মে) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে আগামী নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচন নিয়ে সরকার আবারও আগের খেলায় মেতে উঠেছে। গতবার তারা হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার করে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ভোট করেছিল। এবারও একইভাবে এখন থেকে বিরোধী দলকে সম্পূর্ণভাবে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যে প্রসেস, সেটা তারা শুরু করে দিয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার সময় থেকে শুরু করেছিল, এবার তারা সেটা অনেক আগে থেকে শুরু করেছে। মামলা-মোকাদ্দমা, সন্ত্রাস, বিভিন্ন আইনের মধ্য দিয়ে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা করে আবারও বিরোধী দলের নেতাদের মাঠ থেকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়ার কাজটি তারা শুরু করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে তা নয়, তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা দিয়েছিল, সেগুলোার চূড়ান্ত রায় দেওয়ার জন্য খুব দ্রুততার সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটা তালিকা প্রস্তুত করে সেই অনুযায়ী বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে সেই দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করতে শুরু করেছে– বিচার বিভাগ ও প্রশাসন। কীভাবে বিরোধী দলের সিনিয়র নেতাদের এবং যারা চলমান আন্দোলনে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কি করে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়। কীভাবে তারা নিরঙ্কুশভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে, সুবিধা নিতে পারে সেই কাজ শুরু করেছে।
তবে এবার ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো সরকার সুবিধা নিতে পারবে না বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, কারণ জনগণ ইতোমধ্যে রাস্তায় নেমে গেছে। আন্দোলন শুরু হয়েছে, আমাদের ১৭ জন নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কারও কাছে নালিশ করি না। একটা কথা মনে রাখতে হবে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এখানে যেসব দেশের মিশন আছে, কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে রুটিন আলোচনা হয়। জাতিসংঘের সঙ্গেও সেই আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আন্দোলন একটা ওয়েবের মতো। এটার গতি কখনও উঠে, আবার কখনও নামে। জনগণের পরিপ্রেক্ষিত বুঝে নিয়েই আন্দোলনটা করতে হয়। যেমন রোজার মাস, সেই সময়ে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ রোজা রাখে। সেই সময়ও আমরা প্রোগ্রাম দিয়েছি। এমনকি রোজায় ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশ হয়েছে। এখন আমাদের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছি। খুব শিগগিরই নতুন কর্মসূচি জানতে পারবেন।
বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, পুনরায় নতুন করে খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানসহ জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মিথ্যা মামলা দিয়ে চার্জ গঠন করে সাজা দেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফর জামান বাবর, কাজী সলিমুল হক কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সাজা দিয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্যে বিগত দিনের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা নতুন করে শুরু করেছে।