নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লক্ষণপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঁচ বছর ধরে চলমান নেতৃত্ব ও নিয়োগের দ্বন্দ্বের অবসান করেছেন সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, গত ৪ নভেম্বর তিনি বিদ্যালয়ের দুই পক্ষকে ডেকে তাদের বক্তব্য শুনে আইনগত পরামর্শ প্রদান করেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে উভয় পক্ষই তাদের বিরোধ মিটিয়ে বিদ্যালয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরের অবসরের পর সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু, পরবর্তীতে ২০২০ সালে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সময় প্রক্রিয়াগত জটিলতায় তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সহকারি শিক্ষক মো. নুরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে নুরুল ইসলাম অবসর গ্রহণ করলে তৎকালীন সভাপতি আবু রাশেদ ইমাম আবারও নিয়ম ভঙ্গ করে সহকারি শিক্ষক ছাদেকুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন, যা আব্দুল্লাহ আল মামুনের জন্য মানসিক চাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি দ্বন্দ্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে তিনি তাদের আইনি বিধি মানার প্রতি উৎসাহিত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, উভয় পক্ষের সম্মতি ও বিধি মোতাবেক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, এই সমস্যার সমাধান হওয়ায় তারা স্বস্তি পেয়েছেন এবং ইউএনও’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. গোলাম মর্তুজা বলেন, “দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর জন্য আমরা ইউএনও স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ। এখন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারছি।”
স্থানীয় সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি শামীম কবির মিল্টন বলেন, “বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। ইউএনও’র এই মধ্যস্থতায় বিদ্যালয়টি সেই প্রভাব থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং শিক্ষা পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে, যা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক।”
এছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “এ বছরের ৮ আগস্টের পরিপত্র অনুসারে ইউএনও স্যারের ভূমিকা বিষয়টি সমাধানে মুখ্য ছিল, যা বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে জানান, “উভয় পক্ষের আন্তরিকতা ও উদার মনোভাবের জন্য সমঝোতা সম্ভব হয়েছে। আমি কেবল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছি, যাতে বিদ্যালয়টি শিক্ষার পরিবেশ ফিরে পায়।”
এভাবে ধামইরহাটের লক্ষণপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছরের দ্বন্দ্বের অবসান হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে, যা বিদ্যালয়ের উন্নয়নে এবং শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী সবাই।