খাগড়াছড়ির গুইমারা বাজারে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পানি নিষ্কাশনের নালা (ড্রেন) অবৈধ ভাবে দখল করে দোকান প্লট নির্মান করেছে প্রভাবশালী একটি মহল।
দীর্ঘদিন ধরে এমন অপকর্ম সবার চোখে পড়লেও এবিষয়ে নিরব রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় সূত্র জানায়,
বিগত তিন বছর আগে রফিকুল ইসলাম জিয়ারত নামে গুইমারা থানার এক মাদক মামলার আসামিকে মৌখিকভাবে গুইমারা বাজার চৌধুরী তার বাজারের পশ্চিম অংশে গরু বাজার এলাকায় একটি পানি নিষ্কাশনের নালার (ড্রেন) উপর তৎকালীন সরকারের ক্যাডার হিসেবে পূনর্বাসনের উদ্যোগে উক্ত বিতর্কিত ভূমিতে ব্যবসা করার জন্যে অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে জিয়ারত পানি নিষ্কাশনের নালাতে কাঠ নির্মিত একটি টিনসেড দোকানঘর নির্মাণ করে তাতে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে ইয়াবা ব্যবসা চালাতো।
জিয়ারতের নামে বর্তমানে গুইমারা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে একটি মামলা চলমান রয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর আওয়াগীলীগের সন্ত্রাসী আত্নগোপন করলে, তার পতিত ব্যবসায়িক কাঠামোতে স্থানীয় ছাত্রদের সমাজ কমিটির আহবায়ক মোঃ ইউছুফ একটি গণগ্রন্থাগারের প্রস্তাব নিয়ে মোবাইল ফোনে জিয়ারতকে বিষয়টি জানালে সে বিনা শর্তে ঘরটি গণগ্রন্থাগার কমিটির নিকট হস্তান্তরে রাজি হয়।
এ বিষয়ে গণগ্রন্থাগারের আহবায়ক মোঃ ইউছুফ জানান, আমরা গুইমারা বাজারপাড়াবাসীসহ সর্বস্তরের জনতার দীর্ঘদিনের অনেক দাবীর মধ্যে গণগ্রন্থাগার একটি অন্যতম দাবী ছিলো। সে দাবীর আলোকে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব চৌধুরীকে বিষয়টি জানাই, তিনি আমাদের প্রস্তাব সানন্দে আগ্রহ প্রকাশ করে তথায় সরেজমিন পরিদর্শন পূর্বক সবকিছু ঠিক থাকলে একটি গণগ্রন্থাগার স্থাপনে যা যা সহায়তা করা দরকার তা করবেন বলে আমাদের আশ্বস্থ করেন। কিন্তু গত ৮ সেপ্টেম্বর জানতে পারি মাদক ব্যবসায়ী জিয়ারত গোপনে উক্ত স্থাপনাটি গুইমারা মুসলিমপাড়ার জনৈক নিজাম উদ্দিন এর নিকট বিক্রি করে দেয়। ফলশ্রুতিতে সে বিবাদমান বিষয়টিকে সমঝোতা না করে বরং সাধারণ জনতার দাবীকে উপেক্ষা করে দোকান ঘর দখলে নেয়। এ বিষয়ে আমরা উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সামরিক প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
গণগ্রন্থাগারের মত একটি ভালো উদ্যোগের প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় বিতর্কিত ও বেআইনী ভূমিটি কেন অবৈধ দখলদার মাদক ব্যবসায়ী জিয়ারতের কাছ থেকে অবকাঠামো কেনা হলো মর্মে কথিত ক্রেতা নজিাম উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি এটা জিয়ারত থেকে আঞ্চলিক দলিল মূলে ক্রয় করেছি। বর্তমানে আমিই এটার মালিক।
স্থানীয় সংগঠক “টিম গুইমারা”র প্রধান সমন্বয়ক আবদুল জলিলের নিকট জানতে চাইলে তিনি প্রস্তাবিত গণপাঠাগারের সভাপতির বক্তব্যকে সমর্থন করে জানান, এটি একটি অবৈধ স্থাপনা। আমি যতদুর জানি, বাজার ফান্ড রেকর্ড অনুযায়ী এটা কোনো প্লট নয়। যেহেতু এটি অবৈধ প্লট এবং পানি নিষ্কাসনের নালা, জায়গাটিতে অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকা তৈরী করার কারনে পানি নিষ্কাষন না হয়ে এটি জনজীবনে দূর্ভোগ নিয়ে আসবে।আমাদের দাবী অবৈধ স্থাপনাটি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী ভেঙ্গে দেয়া হোক।
এছাড়াও গুইমারা বাজারে বাজার ফান্ড বন্দোবস্তি ব্যতিত গুইমারা খাল দখল করেও অনেক প্লট মৌখিকভাবে বাবু কংজুরি চৌধুরী বেআইনী ও এখতিয়ার বিহীন ভাবে বরাদ্দ দিয়েছে। সেসব খাল দখল ও অবৈধ দোকান প্লটের ভূমি উদ্ধার করা হোক।
বর্তমানে কথিত ক্রেতা নিজাম গং ও গণপাঠাগার কমিটির মধ্যে বিষয়টি নিয়ে চরম উত্তেজনা চলছে। সাধারন মানুষের প্রত্যাশা বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে সমাধান করে অবৈধ সকল স্থাপনা আইনানুযায়ী উচ্ছেদ করা হোক।
এ বিষয়ে অপর গণগন্থাগারের অভিযোগকারী (সদস্য সচিব) আমিনুল ইসলাম জানান, আমরা অত্যন্ত উদ্ধিগ্ন! স্থানীত সকল প্রশাসন জ্ঞাত এমন একটি অমীমাংসিত ও বেআইনি দখলের বিষয়ে প্রশাসন কথিত দোকানের মালিক দাবীদার মোঃ নিজামকে কোনো কার্যক্রম না করার সিদ্ধান্ত দিয়ে আসা সত্বেও তিনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কার্যক্রম চালায়। আমরা গুইমারা থানায় গিয়ে অফিসার ইনচার্জ কে বিষয়টি মৌখিকভাবে জনালে তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানেন, সেহেতু তার উপস্থিতিতে আমরা আইনানুসারে বাদী, বিবাদীর বক্তব্য ও কোনো দলিল থাকলে তা পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিবো। এভাবে কেউ মন চাইলে পানি নিষ্কাশনের নালা দখল করতে পারে না।