• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

ঈদে নিরাপত্তা ঝুঁকির শীর্ষে রাজধানীর ৩ অঞ্চল

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদুল আজহার ছুটি শেষে গত বছরের ১ জুলাই ভোরে গ্রামের বাড়ি শেরপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছান ডিএমপির ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের কনস্টেবল মনিরুজ্জামান। ভোর ৪টার পর তিনি বাস থেকে ফার্মগেটের আল-রাজী হাসপাতালের সামনে নামেন। সেখান থেকে মোহাম্মদপুরে বাসায় যাওয়ার পথে আনোয়ারা পার্কের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তিনি। ছিনতাইকারীরা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে মারা যান তিনি।

অন্যদিকে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বশিরউদ্দিন রোডের একটি বাসার বাসিন্দা ফিরোজ হোসাইন গত ঈদুল ফিতরে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি যান। ঈদের পর বাসায় ফিরে দেখেন ফ্ল্যাটের তিনটি রুমের সবকিছু এলোমেলো পড়ে আছে। আলমারি ভাঙা, জানালার গ্রিল কাটা। তার বাসা থেকে ২২ ভরি স্বর্ণালংকার এবং ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা চুরি হয়।

প্রতি ঈদে নাড়ির টানে গ্রামে যায় রাজধানীবাসীর একটি বড় অংশ। তাই ঈদের আগে-পরে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায় রাজধানী। আর সেই সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠে পেশাদার ছিনতাইকারী ও চোরেরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘটে ছিনতাই, দুর্র্ধর্ষ চুরি-ডাকাতি। ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। ঈদে রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যারা যান, তাদের অন্যতম চিন্তার বিষয় বাসার চুরি-ডাকাতি নিয়ে।

২০২৩ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আটটি বিভাগে ১৭৪টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে। এছাড়া চুরি ১৭৮৬টি, ডাকাতি ৩৭টি, দস্যুতা ২৫০টি, খুন ১৮০টি ও অপহরণের ৭৭টি মামলা হয়েছে। অপরাধের এ পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) তেজগাঁও, রমনা ও মিরপুর বিভাগ বেশি অপরাধপ্রবণ। এ সময় তেজগাঁও বিভাগে ছিনতাই ও চুরির সর্বাধিক মামলা হয়েছে। ছিনতাইয়ের মামলায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মিরপুর বিভাগ। আর চুরিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মামলা হয়েছে রমনা বিভাগে। তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন যুগান্তরকে বলেন, গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছিনতাই-দস্যুতার অপরাধে ১২৩ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ঈদের ছুটির সময় নিরাপত্তা জোরদারে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। থানার চারটি এলাকাকে (কাওরান বাজার, সোনারগাঁও ক্রসিং, ফার্মগেট ও মহাখালী রেলগেট) ক্রাইম জোন হিসাবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখতে বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম ক্রাইম জোন চিহ্নিত করে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে নগরবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে, যারা ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাবেন, তারা যেন বাসা ঠিকভাবে লক করে যান। যাদের সিসিটিভি আছে, তারা যেন ইন্টারনেট প্রটোকল দিয়ে খেয়াল করেন। নিরাপত্তা প্রহরী যাদের রেখে যাবেন, তারা যেন বিশ্বস্ত হন। খুব দামি জিনিস যেন নিরাপদ স্থানে রেখে যান।

তবে অতীতেও পুলিশ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেসব উদ্যোগ ফলপ্রসূ না হওয়ার পেছনে পুলিশেরই কিছু কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম থানার সীমানা নিয়ে ঠেলাঠেলি। গত ঈদেও ডিএমপির ক্রাইম জোনের যেসব কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে, তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তাদের অনেককেই লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ফার্মগেটে কনস্টেবল মনিরুজ্জামান হত্যার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়ে পুলিশের কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। সড়কে ছিনতাই রোধে ইতোমধ্যে প্রতিটি থানা ও ডিবির ছিনতাই প্রতিরোধ টিম তৎপর রয়েছে। তিনি বলেন, পেশাদার ছিনতাইকারীদের একেকজনের বিরুদ্ধে ২০ থেকে ২৫টি করে মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠালে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের ছিনতাইয়ে জড়াচ্ছে।

ছিনতাইকারীর কবল থেকে প্রাণে রক্ষা পাওয়াদের একজন ভ্যানচালক হৃদয় (২৬)। ২৫ নভেম্বর রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ধলপুরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। হৃদয় সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে যুগান্তরকে জানান, যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচার একজন ব্যবসায়ীর ডিম আনতে তিনি তেজগাঁও যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ৩টার দিকে ধলপুর বউবাজার আল কারিমা হাসপাতালের পাশের একটি গলিতে তিন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে ধারালো ছুরি দিয়ে বুক, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। সেসময় তার মনে হয়েছিল মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছেন তিনি। ছিনতাইকারীরা ছিল খুবই হিংস্র।

গত বছর ও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মামলার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তেজগাঁও বিভাগে সব থেকে বেশি চুরির (৩৯২টি) ও ছিনতাইয়ের (৭১টি) মামলা হয়েছে। ডাকাতি-দস্যুতার মামলা হয়েছে ৭৭টি। এছাড়া খুনের ২৭টি, অপহরণের ১১টি মামলা হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চুরির (২৮০টি) মামলা হয়েছে রমনা বিভাগে। এছাড়া রমনা বিভাগে ডাকাতি ও দস্যুতার ৩২টি এবং ছিনতাইয়ের ১৪টি মামলা হয়েছে। আর খুনের ২৫টি ও অপহরণের ৪টি মামলা হয়েছে। মিরপুর বিভাগে ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ২৬টি, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ডাকাতি ও দস্যুতার ২৩টি, চুরির ১৯৪টি, খুনের ২১টি ও অপহরণের ৮টি মামলা হয়েছে।

এছাড়া ডিএমপির অন্যান্য বিভাগের মধ্যে লালবাগ বিভাগে ডাকাতি ও দস্যুতার ১৪টি, খুনের ১৪টি, ছিনতাইয়ের ৩টি, অপহরণের ১০টি, চুরির ৮৫টি মামলা হয়েছে। ওয়ারী বিভাগে ডাকাতি ও দস্যুতা ৪৬টি, খুনের ৩৪টি, ছিনতাইয়ের ২৫টি, অপহরণের ৭টি ও চুরির ১৯০টি মামলা হয়েছে। মতিঝিল বিভাগে ডাকাতি ও দস্যুতার ৪৫টি, খুনের ২০টি, ছিনতাইয়ের ৫টি, অপহরণের ৮টি ও চুরির ২৫১টি মামলা হয়েছে। গুলশান বিভাগে ডাকাতি ও দস্যুতার ২৩টি, খুনের ১৭, ছিনতাইয়ের ১৭টি, অপহরণের ১২টি ও চুরির ২১৩টি মামলা হয়েছে। উত্তরা বিভাগে ডাকাতি ও দস্যুতার ২৬টি, খুনের ২২টি, ছিনতাইয়ের ১৩টি, অপহরণের ১৭টি এবং চুরির ১৮১টি মামলা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page