• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

আমদানির অনুমতির পর চালের দাম বৃদ্ধি

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪

অভ্যন্তরীণ বাজারে সব ধরনের চাল সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও গত ২১ মার্চ হঠাৎ করে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অনুমোদনের চার দিন পর স্থানীয় বাজারে হঠাৎ সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য বেশি হওয়া সত্ত্বেও কেন আমদানি এ প্রশ্নের কোনো জবাবে দিতে পারছে না খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বিত্তশালীরা খান এমন সরু চালের অভাব রয়েছে। তাছাড়া মোটা চালও অনেক ক্ষেত্রে কম দামে বিশ্ববাজারে পাওয়া যেতে পারে। ব্যবসায়ীরা জানেন, কোথায় কোন চাল কম দামে পাওয়া যাবে। আমরা মুক্তবাজারে আছি। আমদানি আর বন্ধ রাখতে চাই না।

অপরদিকে আমদানির অনুমোদনের পর মাঝারি মানের চাল দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ টাকা। আমদানির অনুমোদনের সঙ্গে দাম বাড়ার বিষয়টি কাকতালীয় হলেও অনেকে বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তারা বলছেন, আমদানির অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে সরকার স্বীকার করে নিয়েছে দেশে চালের সংকট রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে এক ধরনের সমঝোতা থাকতে পারে। চালের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যেখানে সরকারের গুরুদায়িত্ব, সেখানে উল্টো সরকার নিজেই ব্যবসায়ীদের চালের মূল্য বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন চালের দাম ৬৭০ থেকে ৬৮০ ডলার। পক্ষান্তরে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশের বাজারে চালের মূল্য অনেক কম। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির মিটিংয়ে যে পরিমাণ চাল অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহের সিদ্ধান্ত রয়েছে, প্রয়োজনে পরিমাণ বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করবে সরকার। কিন্তু সে কথা রাখতে পারেননি খাদ্যমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত বিদেশ থেকে আমদানির অনুমতি দিতে হয়েছে। কেন দিতে হলো তার কোনো ব্যাখ্যাও নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, চালের আমদানির ওপর আর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখতে চাই না। আমরা আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার চিন্তার জায়গা থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছি। দ্বিতীয়ত, বিত্তশালীরা খান এমন সরু চালের সংকট রয়েছে। তা জোগান দিতে আমদানির প্রয়োজন রয়েছে। তৃতীয়ত, মোটা চাল আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে পাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। ব্যবসায়ীদের পোষালে আনবেন আর না পোষালে আনবেন না।

চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া চার দিনের মাথায় হঠাৎ করে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা চাল হিসাবে খ্যাত স্বর্ণা ও চায়না ইরি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হলেও এখন ৫২ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও লতা আগে বিক্রি হতো প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। সরুচাল হিসাবে খ্যাত নাজির ও মিনিকেট আগে বিক্রি হতো ৬২ থেকে ৭৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৬ টাকা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এখন কৃষকের ঘরে ধান নেই। ব্যবসায়ীদের কাছেও কোনো ধান নেই। কয়েকদিনের মধ্যে বোরো ধান আহরণ শুরু হবে। ব্যবসায়ীদের কাছে আছে চাল। তারা এখন চালের দাম বাড়াবেই। আবার যখন বাজারে নতুন বোরো ধান ক্রয় ও বিক্রয় শুরু তখন চালের দাম কমে যাবে।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিলের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে নতুন করে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। বর্তমানে সরকারি গুদামে প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন ধান, চাল ও গম রয়েছে। অর্থাৎ সরকারি গুদামেও খাদ্যের মজুত পর্যাপ্ত। ওএমএস, ফ্রেয়ারপ্রাইস, ভিজিডি, ভিজিএফ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডও চালু রয়েছে। তারপরও চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না-এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ