চীনে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো জন্মহার রেকর্ড পরিমাণে কমেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে এ নিয়ে বেশ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, গত বছর দেশটির জনসংখ্যা কমে ১৪০ কোটি ৯০ লাখে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ লাখ ৮০ হাজার কমেছে।
আগের বছর জনসংখ্যা কমেছে ৮ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণের বেশি কমেছে। দেশটিতে জন্মহার কমে যাওয়া এবং নগরায়নের ফলে ৬০ বছরের মধ্যে অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বেইজিং বলছে, বর্তমানে দেশটিতে প্রতি এক হাজার জনের বিপরীতে শিশুর জন্মহার ৬ দশমিক ৩৯, যা সর্বনিম্ন রেকর্ড। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৭৭।
এদিকে গতকাল বুধবার চীনের সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য চোখে পড়েছে। সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবোতে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, যদি আপনারা লোকজনকে আরও সহজভাবে বাঁচতে দেন, তাদের আরও বেশি সুরক্ষা দেন তাহলে অবশ্যই লোকজন আরও বেশি সন্তান নেবেন। তবে এক বিশ্লেষক বলছেন, চীনে এখনও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য প্রচুর জনবল এবং প্রয়োজনীয় নেতৃত্ব রয়েছে।
তবে অনেকেই মনে করছেন, ২০৩০ সালের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটির অগ্রগতিতে জনসংখ্যা কমার প্রভাব পড়তে পারে। দেশটিতে অনেক বছর ধরেই জন্মহার কমতে দেখা যাচ্ছে। জন্মহার রোধে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। দেশটিতে আলোচিত এক সন্তান নীতিও তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও জন্মহার বাড়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চীনের জনসংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতেই প্রভাব ফেলতে পারে। চীনে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে সেখানে মজুরি বেড়ে যাবে। ফলে পণ্য তৈরীর খরচও বেড়ে যাবে।
দীর্ঘদিন ধরে ‘বিশ্বের ফ্যাক্টরি’ হিসেবে পরিচিত চীন থেকে অনেক বড় বড় অর্ডার এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে চলে যাচ্ছে। দেশটির অবসরের বয়স নিয়ে আবার নতুন করে ভাবা উচিত। চীনে পুরুষদের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবসরের বয়স ৬০ বছর, যা ওইসিডি ভুক্ত দেশগুলোতে গড়ে ৬৪.২ বছর। সরকারি চাকুরিজীবি নারীদের ক্ষেত্রে এই বয়স ৫৫ বছর এবং শ্রমজীবী নারীদের জন্য অবসরের বয়স ৫০ বছর। যদিও এর আগে অবসরের বয়স বাড়ানোর চেষ্টা ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েছিল। কারণ বয়স্ক শ্রমিকরা তাদের পেনশনের জন্য আর অপেক্ষা করতে চাইছিলেন না। চীন এরইমধ্যে রোবোটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে অটোমেশনের দিকে যাচ্ছে কিন্তু এর প্রভাব এখনো পরিষ্কার নয়। আরেকটা উপায় হতে পারে অভিবাসীদের মাধ্যমে জনসংখ্যা বাড়ানো। কিন্তু চীনের কম্যুনিস্ট পার্টি ঐতিহাসিকভাবেই এ বিষয়ে খুব বেশি আগ্রহী নয়। তবে অর্থনীতি সচল রাখতে চীন শুধু তার জনসংখ্যার ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। অনেক বিশ্লেষকের মতে তাদের অন্যান্য দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিত।