আন্তর্জাতিক পেশাদার বক্সিং টুর্নামেন্ট, “বেক্সিমকো এক্সসেল বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২.০ ফাইট নাইট” শনিবার ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন বিভাগে ৮টি ম্যাচে মোট ১৬ জন বক্সার রিংয়ে লড়াই করে। এই বিভাগ বা ক্যাটাগরিগুলো ছিল সুপার মিডলওয়েট, ফ্লাইওয়েট, ব্যান্টামওয়েট, সুপার লাইটওয়েট, ওয়েল্টারওয়েট এবং লাইট হেভিওয়েট।
বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের আয়োজিত এই টুর্নামেন্টটি শুরু হয় দুই বাংলাদেশি বক্সার, আমিনুল এবং আল সানির মধ্যে দিয়ে। ব্যান্টামওয়েট ক্যাটাগরিতে মোট চার রাউন্ডে লড়াইটি হয়।দুর্দান্ত খেলার মধ্য দিয়ে আল সানি অবশেষে জয় লাভ করেন।
এবারের ফাইট নাইটের প্রথম আন্তর্জাতিক বাউটটি শুরু হয় ভারতের যুগন্ধর তাম্বাট এবং বাংলাদেশের জুয়েল আহমেদ জনির মধ্যে দিয়ে। এই বাউটটি ছিল সুপার মিডলওয়েট বিভাগের।তাম্বাট পুরো ম্যাচ জুড়ে খুবই শক্তভাবে খেললেও জনি তার অসামান্য লড়াইয়ের ক্ষমতা দিয়ে জিতে যান।
এবারের নারীদের বক্সিং লড়াইয়ে মুখোমুখি হন প্রতিভাবান তানজিলা এবং আফরা খন্দকার। ছয় রাউন্ডের এই বাউটে তানজিলার দুর্দান্ত লড়াই এবং আফরার দ্রুত আক্রমণ পুরো ম্যাচটিকে দর্শকদের কাছে করে তোলে উত্তেজনাপূর্ণ। অবশেষে প্রাক্তন ডব্লিউবিইউ ইন্টারকন্টিনেন্টাল টাইটেল চ্যালেঞ্জার, তানজিলা বিজয়ী হন।
রাতের চতুর্থ বাউটে, মুখোমুখি হন প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন জাহিদুল ইসলাম এবং তুর্কি চ্যাম্পিয়ন বাতুহান বোরাল। যেটি ছিল আরেকটি আন্তর্জাতিক লড়াই। প্রথম রাউন্ড থেকেই দুই বক্সারের লড়াই ছিল রোমাঞ্চকর। বাউটটি ছয় রাউন্ডের হলেও টেকনিক্যাল নক আউটের কারণে চার রাউন্ডে খেলা শেষ হয়ে যায়, যেখানে জাহিদুলকে হারিয়ে দেন বোরাল।
ওয়েল্টারওয়েট বিভাগে ৪ রাউন্ডের খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী করেন বাংলাদেশের আল আমিন এবং রাশিয়ার রুদনেকো। আন্তর্জাতিক এই খেলায় অসাধারন পারফরম্যান্স করে জয়ী হয়ে বাংলাদেশি দর্শকদের মাতিয়ে রাখে আল আমিন।
অপরাজয়ের রেকর্ডের অধিকারী উৎসব আহমেদ প্রতিযোগিতা করেন ভারতের ব্যান্টামওয়েটে বিজয়ী পবন কুমার আর্যের সাথে। ব্যান্টামওয়েট ক্যাটাগরিতে লড়াইটি ছিল ছয় রাউন্ডের। পাল্টা আক্রমণে ভরা এই লড়াইয়ে বিজয়ীর স্থান অর্জন করেন উৎসব আহমেদ।বাউটের প্রতিটি রাউন্ডে, উৎসব তার দুর্দান্ত সব পাঞ্চ দিয়ে আক্রমণ করে কোণঠাসা করে ফেলেন পবনকে। প্রতিপক্ষকে আটকানো, এবং আক্রমণ উভয় ক্ষেত্রেই উৎসব লড়ে গিয়েছিল শান্ত কৌশলে। অন্যদিকে, পবনও খুব দক্ষতার সাথে খেলে গিয়েছে। কিন্তু উৎসবের অসাধারণ খেলার কৌশলের জন্য পুরো ম্যাচ ধরেই ছিল তার জয়ের সম্ভাবনা।
“দ্য টাইগার” খ্যাত ফরাসি ওয়েল্টারওয়েট বিজয়ী ডারভিস ফ্লোরেন্ট প্রতিপক্ষ ছিলেন নেপালি ওয়েল্টারওয়েট চ্যাম্পিয়ন ভারত চান্দের। ৬ রাউন্ডে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ওয়েল্টারওয়েট ক্যাটাগরিতে। ম্যাচটিতে দারুনভাবে লড়ে জয়ী হন ডারভিস ফ্লোরেন্ট।
এবারের ফাইট নাইটের মূল আকর্ষণ ছিল প্রো-বক্সিং এর বাংলাদেশি চ্যাম্পিয়ন সুরো কৃষ্ণ চাকমা এবং নেপালের বক্সার মহেন্দ্র বাহাদুর চান্দ মধ্যকার লড়াই। মোট ৮টি রাউন্ডে সুপার লাইটওয়েটে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমার্ধেই মহেন্দ্রকে দুইবার নক আউট করে কোনঠাসা করে ফেলেন সুরো। অন্যদিকে মহেন্দ্রও খেলায় লড়ে গেছেন দৃঢ়ভাবে। সুরো কৃষ্ণ চাকমার দারুন বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের বক্সিং ফাইট নাইটের আয়োজন।
বক্সিংয়ের এই আয়োজনের টাইটেল স্পন্সর ছিলো বেক্সিমকো। বেক্সিমকো গ্রুপের সিইও শায়ান এফ রহমান বলেন, ‘আয়োজকরা যখন এই প্রতিযোগিতা শুরু করার পরিকল্পনা করেছে তখন আমাদের কাছে সাপোর্টের জন্য এসেছিলেন। বিশ্বমানের একটি নতুন খেলা বাংলাদেশে শুরু করতে চাইছে তখন আমরা এটাকে দীর্ঘমেয়াদে সাপোর্ট করার পদক্ষেপ নিই। কারণ একটি দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হলে ১-২ টা খেলার উপর নির্ভর করলে হবে না। এখানে যেহেতু তরুনদের আগ্রহ আছে, মেধা আছে এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একদিন বিশ্ব দুয়ারে নতুন সম্মান বয়ে আনবে।’