সারাবিশ্ব ডেস্ক
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে চেয়েছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান, এমনটাই অভিযোগ করেছেন দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও খাইবার পাখতুখাওয়া প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ খট্টক।
ইমরান খান হচ্ছেন পারভেজ খট্টকের সাবেক রাজনৈতিক নেতা এবং সাম্প্রতিক দমনপীড়নের পর তিনি পিটিআই-পার্লামেন্টারিয়ানস (পিটিআই-পি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। শনিবার (২৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিপ্লবের জন্য ইমরান খানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ করেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্লামেন্টারিয়ানস (পিটিআই-পি) প্রধান পারভেজ খট্টক। পেশোয়ারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন পিটিআই-পি চেয়ারম্যান।
খট্টকের নবগঠিত ওই রাজনৈতিক দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং খাইবার পাখতুনখাওয়ার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মাহমুদ খানও এই আলাপচারিতায় উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরের মে মাসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের জেরে পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা হয়। পরে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে ইমরান কারাগার থেকে মুক্তি পলেও তার দল পিটিআইয়ের ওপর নেমে আসে ব্যাপক দমন-পীড়ন। এরই একপর্যায়ে ইমরানের দল ছেড়ে গত মাসে পিটিআই-পার্লামেন্টারিয়ানস (পিটিআই-পি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন পারভেজ খট্টক।
আর এরপরই নিজের সাবেক নেতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিপ্লবচেষ্টার অভিযোগ তোলেন তিনি। ইমরানকে টার্গেট করে খট্টক দাবি করেন, ইমরান খান পাকিস্তানের ১৮ তম সংশোধনীর বিরুদ্ধে ছিলেন।
জিও নিউজ বলছে, কারণ দর্শানো নোটিশের এর জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর গত ১২ জুলাই পারভেজ খট্টকের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল করে ইমরানের দল পিটিআই। মূলত কর্মীদের পিটিআই ছাড়তে বলায় তাকে ওই নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এর কিছুদিন পর তিনি পিটিআই-পি চালু করেন।
এছাড়া ইমরানের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছিলেন পারভেজ খট্টক। তার দাবি, ‘আজম খান (সাবেক প্রধান সচিব) সরকার চালাতেন এবং বাকিরা তাকে সাহায্য করতেন।’
৯ মের দাঙ্গা এবং সামরিক বাহিনীর ওপর হামলার কথা উল্লেখ করে খট্টক বলেন, ‘পিটিআই নিষিদ্ধ হতে পারে।’
দুর্নীতির মামলায় গত ৯ মে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয় ইমরান খানকে। তার সেই গ্রেপ্তার পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশে মারাত্মক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আধাসামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তানে যে অস্থিরতা শুরু হয় তা টানা চারদিন অব্যাহত ছিল এবং এতে কমপক্ষে ১০ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু ও বহু সামরিক ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়।
এছাড়া পাকিস্তানের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে রাওয়ালপিন্ডিতে দেশটির সেনা সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) প্রবেশ করে এবং লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে সামরিক বাহিনী ৯ মেকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে এবং সেনা আইনের অধীনে বিক্ষোভকারীদের বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এক প্রশ্নের জবাবে খট্টক দাবি করেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করলেও ইমরান খান তাতে রাজি হননি। পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান (সিওএএস) জেনারেল (অব.) কামার জাভেদ বাজওয়ার বিরুদ্ধে ইমরানের অভিযোগের বিপরীতে খট্টক বলেন, ‘জেনারেল বাজওয়া আমাদের (পিটিআই) অনেক সমর্থন করেছিলেন।’
খট্টকের অভিযোগ, ইমরান যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন জাতি যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল সেগুলো মোকাবিলায় তার কৌশলের অভাব ছিল এবং ‘(ইমরান) আমাদেরকে এতো বেশি পরিমাণে মিথ্যা বলতে বলতেন যাতে এটি সত্য বলে মনে হয়।’