নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ও ১০০ বছরের অধিক পুরোনো ভবনগুলো পর্যায়ক্রমে ভেঙে ফেলা হবে। বিল্ডিং কোড ছাড়া নতুন করে কোনো ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। জাইকার সহযোগিতায় নতুন করে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করা হবে। ৫০ বছরে হলেও যেন বাংলাদেশ ভূমিকম্প সহনীয় দেশে পরিণত হয়, সে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘সুপার-সমকাল আর্থকোয়েক অ্যান্ড ফায়ার প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূমিকম্প সহনীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়তে আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর সুফল আমরা পাচ্ছি। ইতোমধ্যে দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পোশাক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ডা. এনামুর রহমান বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ঢাকাকে আটটি জোনে ভাগ করে ভূমিকম্প সক্ষমতা তৈরি করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। জাইকার সহযোগিতায় ভূমিকম্প সহনীয় ভবনের ওপর সার্ভে করা হয়েছে। জাপান সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
তিনি বলেন, ঝুঁকি হ্রাসে পুরোনো ভবন ভাঙা হবে। এর জায়গায় জাপানের সহযোগিতা ও জাইকার কারিগরি সহযোগিতায় নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। এজন্য বেসরকারিভাবে প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হবে। শুধু ভবন নয়, নতুন সব ব্রিজ নির্মাণ করা হবে ভূমিকম্প সহনীয় সক্ষমতা তৈরি করতে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় আসলে আমাদের খুব বেশি সক্ষমতা নেই। ভূমিকম্পে কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা তুরস্কে ও সিরিয়ায় আমরা দেখেছি। হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। তুরস্কের মতো দেশ ভূমিকম্পের ক্ষতি সামাল দিতে পারেনি।
ডা. এনামুর রহমান বলেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় এখনো পর্যাপ্ত সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। দেশে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় দেড় লাখ মানুষ নিহত হবে, পাঁচ লাখ মানুষ হতাহত হবে। ১ লাখ ৭২ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হবে। জাপানের মতো দেশের ভূমিকম্প সহনীয় দেশে পরিণত করতে ৩০ বছর লেগেছে। সেখানে আমরা চেষ্টা করছি অন্তত ৫০ বছরে হলেও যেন বাংলাদেশকে ভূমিকম্প সহনীয় দেশে পরিণত করা যায়। সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের অর্জন আছে। অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমরা শতভাগ সফল। আমরা ৪২০ কোটি টাকার উদ্ধার ও অনুসন্ধান কাজের উপকরণ কিনেছি। সেগুলো ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশন ও সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে দেশে দ্বিতীয়বারের মতো ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত দুর্যোগ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং এ সংক্রান্ত প্রস্তুতিতে উৎসাহিত করতে তিন প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনের জন্য তিন সাংবাদিককে ‘সুপার-সমকাল আর্থকোয়েক অ্যান্ড ফায়ার প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যাওয়ার্ড ২০২৩’ দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– ওয়ালটন হাইটেক ইন্ড্রাস্টি, ব্র্যাক ব্যাংক, এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড। পুরস্কারপ্রাপ্ত তিন সাংবাদিক হলেন– জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাসুদ রানা, সময় টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মার্জিয়া হাশমী মুমু, নিউ এইজ পত্রিকার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রাশেদ আহমেদ।
অনুষ্ঠানে সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, ইউনাইটেড পারপাসের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীরামাপ্পা গণচিকারা, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের সুপার প্রকল্পের কনসোর্টিয়াম ম্যানেজার আ ম নাছির উদ্দিন, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের পরিচালক (হিউম্যানিটেরিয়ান ইমার্জেন্সি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপটেশন) দোলন যোশেফ গোমেজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।