শনিবার ১২ আগস্ট সকাল ১০ টায় বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জনপ্রতিনিধি, দাপ্তরিক প্রধান ও সাংবাদিকদের সাথে দূর্যোগ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। বিপর্যয় কেটে উঠতে জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে আসা পরামর্শগুলো নোট করেন ডিসি। তিঁনি সদাশয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করবেন বলে সভায় আশ্বস্ত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মোস্তফা জাবেদ কায়সারের সঞ্চালনায় সভায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল বন্য পরিস্থিতির সার্বিক ধারণা দেন। বন্যা পরবর্তী সমস্যা জন দুর্ভোগের কথা তুল ধরে লামা পৌর মেয়র মো: জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়। শহরের বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশি ক্ষতি হয়। দেড় শ্ টি বসত ঘর মাটির সাথে মিশে গেছে। সাড়ে তিন হাজর পরিবার জলমগ্নতায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। লামা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা বলেন, টানা ভারি বর্ষণ ও ঢলের পানিতে রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট ভেঙ্গে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। কৃষিখাতে ৯০% ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত কিছু করতে হবে। গাছ পড়ে মাটি ধ্বসে মানুষের যথেষ্ট ঘরবাড়ি নষ্ট হয়। এই দূর্যোগের সময় সরকারি ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। এই অবস্থায় ত্রানের পরিমান বৃদ্ধিসহ বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট মেরামত জরুরী বলে তিনি মতামত দেন। সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, লামা ইউনিয়নে প্রুচুর মাটি ধ্বসে ৩০শ বাড়িঘর নষ্ট, যোগাযোগাগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, ২ মাসের জন্য দূর্গত মানুষের আহারের ব্যবস্থা করণের পরামর্শ দেন এই প্রতিনিধি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মন্ত্রীর প্রতিনিধি প্রদীপ কান্তি দাশ বলেন, পৌর শহরের ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকদের ব্যাংক ও এনজিও কর্তৃক প্রদত্ত ঋনের কিস্তি ৩ মাস স্থগিত করে সুদ মওকুফ করাসহ ব্যবসায়ীদেরকে সহজ উপায়ে ঋন দিয়ে ক্ষতি কেটে উঠার সুযোগ করে দেয়া উচিৎ। মতবিনিময় সভায় প্রদীপ কান্তি আরো বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের পাশাপাশি দাতা সংস্থার সহযোগিতা প্রয়োজন। লামায় স্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে পৌর শহরে ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাইক্লোন সেন্টার ও মুজিব কেল্লা প্রকল্প চালু করা দরকার। বন্যায় পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে নৌকার তীব্র সংকট, নিরষণ করতে উপজেলা প্রশানের নিয়ন্ত্রনে কয়টি নৌকা রাখার জন্য বলা হয়। রুপসিপাড়া চেয়ারম্যান বলেন, তার ইউনিয়নটি নদী ও তিনটি খালের প্রবল স্রোতের মুখে থাকায়, বেশি ক্ষতি হয়েছে। ১ জন মারাগেছে, মাটি ধ্বসে ও স্রোতে বেশ ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সবজি, মাঠ ফসল ও জুম ফসল নষ্ট হয়েছে। এই অবস্থায় সবজি, জুম ও সাধারণ চাষীদের সহযোগিতা করা দরকার। লামা প্রেসক্লাব সেক্রেটারী মো:কামরুজ্জামান জানান, পার্বত্য এই জেলার ভূ-ঢালু পশ্চিম মুখি। অতীতে পাহাড়ের ঢলের পানি সাঙ্গু, মাতামুহুরি বাক খালী নদী ওভার ফ্লো করে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা হয়ে দ্রুত মহনায় নেমে যেত। এই অঞ্চলের প্রবীন মানুষদের মতে এ বছর উঁচু রেল লাইনে পাহাড়ের পানি নিষ্কাশনে বাঁধা হয়ে পড়ে। ফলে অকাল বর্ষনে পাহাড়ের পানি বান্দরবান জেলাসদরসহ লামা-আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এ ব্যপারে রেল মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশল বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বান্দরবান, কক্সবাজার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকদের যৌথ পরিকল্পনা করে দ্রুত পানি নিস্কাশনে রেল লাইনের বিভিন্ন অংশে পকেট গেট করে সমস্যা নিরষনে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন। এর আগে সকালে জেলা প্রশাসক লামা জলমগ্নতায় ক্ষতিগ্রস্থ খাদ্য গুদামসহ কয়েকটি দপ্তর ঘুরে দেখেন। এর পর বন্যা দুর্গত কয়েকটি পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করেন। লামায় মতবিনিময় শেষে জেলা প্রশাসক আলীকদম উপজেলা পরিদর্শন করেন।