বিশেষ প্রতিনিধি:
ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরেও যুব উন্নয়নে বহাল রয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের ঠিকাদার সিন্ডিকেট। দরপত্রে চলছে নৈরাজ্য। আগের মতোই চলছে ঘুষের বিনিময়ে ঠিকাদারি কাজের ভাগাভাগি। এসব ব্যাপারে মুখ খুলেছেন ঠিকাদার
শাহাদত হোসেন উজ্জ্বল। তিনি যুব উন্নয়নে টেন্ডার বানিজ্য, দূর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমি মা ইন্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের একজন সত্ত্বাধিকারী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদার। বিগত সময়গুলোতে আমি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বেশকিছু দরপত্রের সাথে জড়িত ছিলাম। এ সময়গুলোতে আমাকে কাজ দেয়ার কথা বলে ঘুরাতে থাকে সহকারী প্রকৌশলী জনাব আনিসুল ইসলাম। যে সময়ে যে দরপত্র আহ্বান করা হতো তখনই আমাকে বলতো আপনাকে কাজ দেয়া হবে আপনি অর্থ পরিচালক জনাব আঃ রাজ্জাক স্যারের সাথে কথা বলেন।
আবার রাজ্জাক সাহেবের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি আনিস সাহেবের সাথে কথা বলতে বলেন। মূলত তাদের রয়েছে একটি শক্তিশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট মূলতঃ আঃ রাজ্জাক ও আনিসুল ইসলামের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। এ সিন্ডিকেটে রয়েছে তানিমা এন্টারপ্রাইজ, সনেক্স এন্টারপ্রাইজ, অগ্রনী ট্রেডিং কর্পোরেশন, জিসান এন্টারপ্রাইজ, এস এন এন্টারপ্রাইজসহ ১০-১৫ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করলেও কোনরূপ নিয়মনীতি না মেনে এসব প্রতিষ্ঠানকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাজ বন্টন করে দিতেন। এমনকি পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী একই প্রতিষ্ঠানকে একাধিক কাজ দেয়ার নিয়ম না থাকলেও তারা ঘুষের বিনিময়ে নিয়ম লংঘন করে একই প্রতিষ্ঠানকে অহরহ একাধিক কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। তারা এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের বিপরীতে অগ্রীম ৬% টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দিত।
এছাড়া বিল প্রদানের সময় আরও ২% টাকা ঘুষ নিতেন। তারা দুজনেই ছাত্রজীবনে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হওয়ায় কোন ঠিকাদার কখনোই এসব অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস করেননি। আমি বিগত সময়ে এসব অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে সাহস করে প্রতিবাদ করলে আমাকে পরবর্তী সময়ে কাজ দিবে বলে আশ্বস্ত করেন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক ১,১০,০০০/- (এক লাখ দশ হাজার) টাকা তাদের নেয়া ঘুষের টাকার অংশ নিতে আমাকে বাধ্য করেন। সম্প্রতি ২১ গ্রুপের দরপত্র আহ্বান করেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অর্থ পরিচালক আঃ রাজ্জাক। এখানেও ঘুষের বিনিময়ে তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাজ পাইয়ে দিয়েছেন আগের মতো একই হারে ঘুষের বিনিময়ে। তবে দুঃখের বিষয় এই যে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলেও পতন হয়নি ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার আমলের সিন্ডিকেট। বীর দর্পে টেন্ডার বানিজ্য, অন্যায় অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতা।
তাদের দুজনেরই রয়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক-ব্যালেন্স, বাড়ি, গাড়ি ও সম্পদ। আঃ রাজ্জাকের রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকায় নিকুঞ্জে রয়েছে ১০-১৫ কোটি টাকা মূল্যের বিশাল অট্টালিকা। ধানমন্ডি সংলগ্ন জিগাতলায় রয়েছে ২ কোটি টাকা মূল্যের আলিশান ফ্যাট। নিজ জন্মস্থান জামালপুরের গ্রামের বাড়িতে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের পাঁচতলা ফাউন্ডেশন এর উপর ডুপ্লেক্স বাড়ি। বর্তমানে উক্ত ডুপ্লেক্স বাড়ির দ্বিতীয় তলার কাজ সম্পন্ন করেছেন। জন্মস্থান জামালপুরে নামে বেনামে আরও রয়েছে কোটি কোটি টাকার জমিজমা। এছাড়া আঃ রাজ্জাক তার ছেলেকে আমেরিকায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন কোটি কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে। আনিসুল ইসলামও পিছিয়ে নেই অবৈধ সম্পদের দিক থেকে। রাজধানীর ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর ও জিগাতলা এলাকায় রয়েছে একাধিক আলিশান বাড়ি যার আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকার মতো। তিনি যে বাড়িতে বসবাস করেন সেই বাড়িটি সম্পূর্ণ বিদেশি সরঞ্জামাদি দিয়ে তৈরি করেছেন। এছাড়া নিজ জন্মস্থান ঝিনাইদহে রয়েছে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। শাহাদত হোসেন উজ্জ্বল আরও বলেন, আমি আগামীকাল যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং দূদকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। রাজ্জাক-আনিসুলের বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে রাজ্জাক ও আনিসুলের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করার পরেও তারা ফোন না ধরায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।