জাহাঙ্গীর আলম : বিশেষ প্রতিনিধি
শেরপুর জেলা যুবদলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মাসুদের বিরুদ্ধে নানা অন্যায়, অনিয়ম, অপকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জেলা বিএনপিকে বিব্রত করেছেন তিনি। আওয়ামী পরিবারের সন্তান হয়েও রাজনীতিতে নাটকীয় উত্থানে এখন তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই নেতা জামালপুর ব্রিজের ১০০ গজের ভেতরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, কাঁচা বাজার দখল, গরুর হাট দখল ও চাঁদাবাজিসহ আরও নানা অন্যায় ও অনিয়মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়েছেন। এসব অপকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাও।
আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি গরিব, নিরীহ ও স্থানীয় কৃষকদের কৃষিজমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। ভুক্তভোগীরা কোথাও ন্যায়বিচার পাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না এই বিএনপি নেতার ভয়ে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তিনি যুবদল ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগ ঘরানার। গভীর অনুসন্ধানে জানা যায়, তার পিতা আব্দুল লতিফ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে রিলিফ চেয়ারম্যান ছিলেন। মাসুদের দুই ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া তার আপন চাচাতো ভাই আকবর চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় সরাসরি হামলাকারী ছিলেন। পরে হত্যা মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছেন।
আরও জানা যায়, শফিকুল ইসলাম মাসুদ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।
বিএনপির এই নেতা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা না চালিয়ে তার চাচাতো ভাই আকবর চেয়ারম্যানের জন্য তিনবার নৌকা প্রতীকের প্রচারণা করেছেন এবং তার অনুসারীদেরও বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
সরেজমিনে পরিদর্শন ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, তার চাচাতো ভাই আকবর চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জামালপুর ব্রিজের ১০০ গজের ভেতরে বালু উত্তোলন, কাঁচা বাজার দখল, গরুর হাট দখল ও চাঁদাবাজি করতেন, যা এখন তার স্থলে করছেন বিএনপি নেতা মাসুদ।
এছাড়া আরও জানা যায়, তিনি আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন নেতাকর্মীদের আশ্রয় দিচ্ছেন এবং আওয়ামী লীগের হত্যা মামলার আসামিদের মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তার চাঁদাবাজির বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করা হলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, "বিএনপি নেতা মাসুদের চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।"
এক ট্রাক চালক বলেন, "আসতে-যেতে আমাদের কাছ থেকে মাসুদের নির্দেশে চাঁদা দাবি করা হয়। আমরা চাঁদা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।"
বিএনপি নেতা মাসুদ বর্তমানে শ্রীবরদী পৌরসভার মেয়র এবং তার সন্তান একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপির এক নেতা বলেন, "শফিকুল ইসলাম মাসুদ আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছেন। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সুসম্পর্ক রয়েছে এবং বর্তমানে তিনি তাদের আশ্রয় দিচ্ছেন। এছাড়া বিএনপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিত রাখছেন। এভাবে চলতে থাকলে বিএনপির জন্য এটি অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে।"
জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, "শফিকুল ইসলাম মাসুদের জনসম্পৃক্ততা নেই। তিনি একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। তিনি বিএনপির ভেতরে গ্রুপিং সৃষ্টি করছেন এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।"
এইসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে শেরপুর জেলা যুবদলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মাসুদের ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারে কল দিলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।