জেলা প্রতিনিধি, যশোর
‘আমাগের অন্ধের ঘরে প্রধানমন্ত্রী আলো জ্বেলেছে। ৪০ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই চোখ হারিয়েছি, কাজকর্মে অক্ষম। আমার স্ত্রী হাট-বাজারে ঝাড়ু দিয়ে যা আয়-রোজগার করে তা দিয়েই কোনোরকমে আমাদের সংসার চলে। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছেলেটা প্রতিবন্ধী। আমাদের কোনোকালেই মাথা গোজার ঠাঁই ছিল না।’
চোখ মুছতে মুছতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়া গ্রামের ঝন্টু বাঁশফোড়।
বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে সদর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপহারের জমিসহ ঘর নিতে আসেন অন্ধ ঝন্টু বাঁশফোড় এবং তার স্ত্রী যমুনা সাহা।
যমুনা সাহা বলেন, আমরা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি যে আমাদের নিজের মাথা গোজার ঠাঁই হবে। আমরা ভেবেছিলাম মরার আগ পর্যন্ত আমাদের নিজেদের ভিটেমাটি বলতে কিছু হবে না।
এ সময় জমিসহ ঘর পাওয়া সদর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের ইজিবাইকচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার বাপ-দাদার কোনোকালে জায়গা-জমি ছিল না। স্বাধীনতার পর থেকেই পরের বাড়িতে ভাড়া থেকেছি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে আমরা অনেক খুশি।’
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের ন্যায় যশোরের পাঁচ উপজেলার ভূমি ও গৃহহীন ১৮৮ জনকে দুই শতক জায়গাসহ উপহার হিসেবে ঘর বিতরণ করেছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৫৮ জনকে ঘর ও জমি দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগে, চলতি বছরের ২২ মার্চ যশোরের তিন উপজেলা শার্শা, বাঘারপাড়া ও কেশবপুর উপজেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত এলাকার স্বীকৃতি পায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘরবাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকারপ্রধান। এজন্য যেখানেই সরকারের খাস জমি আছে সেগুলো উদ্ধারের পর বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। যেসব জায়গায় পর্যাপ্ত জমি নেই, সেখানে কেনা হচ্ছে জমি। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকা খাসজমি উদ্ধার করে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ঘর ও ভূমি পেয়েছে দুই হাজার ৯৪টি পরিবার। আজ (৯ আগস্ট) চতুর্থ পর্যায়ে (২য় ধাপ) জমিসহ ঘর পাচ্ছে আরও ১৮৮ পরিবার। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৮, অভয়নগরে ৯, মণিরামপুরে ৩৫, ঝিকরগাছায় ৪০ ও শার্শায় ৪৬ পরিবার। এছাড়া জেলায় নির্মাণকাজ চলছে ২৫টি ঘরের। আর নতুন করে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৭৩টি।
সদর উপজেলার হলরুমে ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপ দাশ, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, ভাইস-চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান জোৎস্না আরা মিলি প্রমুখ।