• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

পানছড়িতে মনসা পুঁতি পাঠের আসর জমে উঠেছে পূর্ণ্য আচার্য্যের বাড়িতে

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩

মিঠুন সাহা,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি-

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে মনসাপূজা উপলক্ষে শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন থেকে এই পুঁথিপাঠ আরম্ভ হয়, চলে মাসব্যাপী।বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে প্রতিটি বাড়ির উঠানে উঠানে মন্দিরের উঠানে উঠানে দলবেঁধে বসে মনসা পুঁথি পাঠ করছেন নারীরা।এই সময় বিভিন্ন গানের সুরের সঙ্গে একজন নারী পুঁথির কলি পাঠ করছেন এবং অন্য নারীরা তাতে ঠোঁট মিলিয়ে গেয়ে যাচ্ছেন।

৩ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) বেলা ৪টার সময় পানছড়ির আদি ত্রিপুরা পাড়া এলাকার মহাশ্মশান শিব মন্দির কমিটির সভাপতি পূর্ণ আচার্য্যের বাড়িতে গ্রামীন নারীদের পুঁতি পাঠের এই আসরের দৃশ্য দেখা যায়।

নমিতা সাহা (৫০) নামের এক নারী বলেন,আমরা অনেক বছর যাবত মনসা পূজা উপলক্ষে পুঁথি পাঠ করে আসছি। আমি ছোট বয়স থেকে মা মাসিদের সঙ্গে পুঁথিপাঠের আসরে যেতাম। এখন গ্রামের বউ–ঝিদের সঙ্গে পালা করে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুঁথি পাঠ করি।’

পানছড়ি মহাশ্মশান কমিটির সভাপতি পূর্ণ আচার্য্য বলেন: আজ ১৯ বছর ধরে আমার বাড়িতে মনসা পুঁথি পাঠ দিয়ে আসছি।মনসার পুঁথিপাঠের বিষয়টি শুধুই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একই সঙ্গে সংস্কৃতির অংশ। মনসার কাহিনি নিয়ে কালজয়ী সাহিত্য রচিত হয়েছে। তবে অঞ্চলভেদে পুঁথি ও তার পঠনরীতি আলাদা। শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন থেকে এই পুঁথিপাঠ আরম্ভ হয়, চলে মাসব্যাপী।

জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু সম্প্রদায় দেবী মনসার পূজা আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পালন করে। বর্ষার প্রকোপে এ সময় সাপের বিচরণ বেড়ে যায়, তাই সাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভক্তকূল দেবীর আশ্রয় প্রার্থনা করে। এছাড়া ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতির জন্য সর্পদেবীর ভক্ত তার দ্বারস্থ হয়। মনসা একজন লৌকিক দেবী। তবুও তার অসাধারণ জনপ্রিয়তার কারণে হিন্দু সমাজের সকল সম্প্রদায় তাকে দেবী হিসেবে মর্যাদা দেয়। মনসা পূজা উপলক্ষে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার গ্রামীণ নারীরা শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে মনসার পুঁথি পাঠ করেন। পুঁথিপাঠের আসরের এ আয়োজন চলে আসছে কয়েক যুগ ধরে। সংসারের কাজকর্ম সেরে বেলা তিনটা থেকে পুঁথিপাঠে অংশ নেন নারীরা।

পালাগান, কবিগান ও পুঁথিপাঠের আসর মানুষের মাঝে দারুণ প্রভাব ফেলে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে গ্রামীণ ও লোকজ সংস্কৃতির এ ধরনের অনুষ্ঠানে নানা বর্ণের মানুষের ভিড় থাকত চোখে পড়ার মতো। একসময় গ্রামেগঞ্জে প্রতিনিয়ত এসব অনুষ্ঠান হলেও কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে যাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ