বান্দরবানে লামা উপজেলা রুপসিপাড়া ইউনিয়নে ২৯৪ নং দরদরী মৌজায় ভুল চৌহদ্দি দিয়ে বায়নানামা দলিল সৃজিত। ২০১৫ সালে এই ভুল চৌহদ্দি দিয়ে করা বায়না দলিলমূলে অন্য পক্ষের ভাট্টা সম্পত্তি দখল করতে গিয়ে একেরপর এক মিথ্যা মামলা, হামলাসহ জিঘাংসার শিকার শাহ আলম নামের এক প্রজা। ভুল চৌহদ্দি দিয়ে কিভাবে বায়না দলিল সৃজিত হলো সে বিষয়টি খতিয়ে না দেখায়, কয়েকটি পরিবার আজ পথে বসতে বসেছে। ভুলটি করেছে উপজেলা ভূমি রেজি:অফিসার, এর খেসারত দিতে হচ্ছে স্থানীয়দেরকে(!)। তর্কিত ভূমি নিয়ে আদালতে তিনটি মামলা থাকার পরও মিনু আক্তার নালিশি জমি থেকে গাছ কাটেন। এই গাছ আনতে না পেরে গত ১/৭/২০১৯ তারিখ, ২১/৮/২০১৯ ও ২৮/৮/২০১৯ তারিখে শাহ আলম, মাহবুব আলম ও সিরাজদৌলাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২জন সন্ত্রাসী নিয়ে উল্লেখিত তিন ডেটে সকাল ১টার সময় মিনু আক্তারের বাড়িতে গিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন মর্মে গত ৩/৯/২০১৯ ইং তারিখে লামা জুড়িশিয়াল কোর্টে মামলা করেন। মামলা নং সিআর/২৪৪/১৯। ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়; “১/৭/২০১৯ তারিখে আসামীগনকে দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ার ঘটনার দিন অর্থাত বিগত ১/৭/২০১৯ ইং তারিখে তফসিলোক্ত জায়গায় অনাধিকার প্রবেশ করে আসামীরা ২০ বছর বয়সী ৫টি সেগুন গাছ যাহার মুল্য একলাখ টাকা কেটে বড় ট্রলি গাড়ি দিয়ে চুরি করে নিয়ে যায়। পুনরায় বিগত ২১/৮/২০১৯ ইং তারিখে আসামীগণ ২০ বছর বয়সী আরো ৪টি সেগুন গাছ যাহার অনুমান মূল্য ৮০,০০০ (আশি হাজার) টাকা কর্তনপূর্বক চুরি করিয়া নিয়া যাওয়ার চেষ্টা করিলে আমি খবর পেয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ লামা থানার পুলিশকে অবহিত করিলে, লামা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসিয়া কর্তনকৃত ও চুরির চেষ্টায়রত সেগুন গাছগুলি লামা থানার পুলিশ স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে আটক করে। লামা থানায় আসামীগণ স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও আমাকে জানান যে, আসামীগণ আমার নিকট হইতে আর চাঁদাদাবী করিবে না এবং আমার বাগানে অনধিকার প্রবেশসহ কোন ধরণের ক্ষতিসাধন করিবে না মর্মে লামা থানাকে আশ্বস্ত করে। এরপরেও আসামীগণ চাঁদার দাবীতে অনঢ় থাকে। আসামীগণ বিভিন্নভাবে আমার নিকট হইতে চাঁদা দাবী করিতে থাকে। আসামীগণ আরো জানান যে, আসামীগণের পূর্বের দাবীকৃত চাঁদা না দিলে আসামীগণ আমার নিম্নোক্ত তপশিলের জায়গায় স্থিত ২০ বছর বয়সী সেগুন গাছ কাটিয়া মারাত্মক ক্ষতিসাধন করিবে অথবা আমাকে কিংবা আমার পরিবারের সদস্যকে একা পাইলে খুন করিয়া ফেলিবে মর্মে মারাত্মক প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করিতে থাকে। আসামী শাহ আলম, মাহবুব আলম ও সিরাজ মৌল্লাদের, পূর্বের দাবীকৃত ২,০০০০০ (দুই লক্ষ) টাকা চাঁদা না দেওয়ায় বিগত ২৮/৮/২০১৯ ইং তারিখ বিকাল অনুমান ৫.০০ ঘটিকার সময় আসামী শাহ আলম, মাহবুব আলম ও সিরাজদৌলার হাতে থাকা যথাক্রমে ধারালো দা, গদু দা ও কিরিচ এবং ভাড়া করা বন্দুকধারী অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন সন্ত্রাসী নিম্নোক্ত তফশিলের জায়গায় বেআইনী অনধিকার প্রবেশ করে সেগুন বাগানের ৪ বছর বয়সী ৪২ (বেয়াল্লিশ) টি সেগুন গাছ কাটিয়া অনুমান ৮৪,০০০ (চুরাশী হাজার) টাকার ক্ষতিসাধন করে। আসামী শাহ আলম, মাহবুব আলম ও সিরাজ মৌল্লাহ জানান যে, উপরোক্ত দাবীকৃত চাঁদা না দিলে আসামীগণ আমার সেগুন বাগানের অবশিষ্ট ২০ বছর বয়সী সেগুন গাছ কাটিয়া চুরি করিয়া নিয়া যাইবে মর্মে হুমকি দেয়। আসামীগণ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। আমি আমার পরিবার নিয়ে সীমাহীন নিরাপত্তা হীনতায় ভুগিতেছি। আসামীগণ পরিকল্পিতভাবে যে কোন সময় বড় ধরনের শুম, হত্যাসহ বাগানের গাছ কর্তনের ঘটনা ঘটাতে পারে। আমি স্থানীয়ভাবে আপোষ মীমাংসায় ব্যর্থ হইয়া লামা থানায় মামলা দায়ের করিতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নেওয়ায় বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করিতে সামান্য বিলম্ব হইল”। আদালত এই আর্জির তদন্তভার লামা থানাকে দেয়। এর পর মামলার আইও এসআই জয়নাল আবেদীন ১২/১০/১৯ তারিখে আদালতে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনটিতে বাদীর করা আর্জির হুবহু ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়। তবে, রিপোর্টে শেষ দিকে এসে লেখা হয় ” গাছ কাটিয়া চুরি করিয়া নিয়া যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন বিবাদীগনকে আটক করিয়া স্থানীয় চেয়ারম্যন এর নিকট নিয়া চেয়ারম্যানের নিকট বিবাদীগন উক্তরূপ কর্মকান্ড করিবে না মর্মে মুচলেকা প্রদান করিয়া কর্তনকৃত গাছ চেয়ারম্যান এর নিকট জিম্মায় রাখিয়া ছাড় পায়”। এদিকে স্থানীয় সূত্র থেকে জানাযায়, মিনু আক্তারের দায়েরকৃত আর্জিতে তিন ডেটে চাঁদাবাজিসহ যে তিনটি ঘটনার বর্ণনা দেয় ও পুলিশের রিপোর্টে যে ঘটনার সত্যতা উল্লেখ করা হয়েছে; সেরূপ কিছুই ঘটেনাই। তবে স্থানীয়রা আরো জানান, বিগত ১৯/৮/২০১৯ তারিখে মিনু আক্তার পৌর এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে শাহ আলম গংয়ের ২৯/২৮ ভাট্টা হোল্ডিং থেকে ৩০/৩৫ বছর বয়সী ৪২টি গাছ কাটে। ওই ঘটনায় শাহ আলম লামা থানায় মামলা করলে ওই তারিখে পুলিশ গিয়ে কর্তনকৃত ২৬ টুকরো গাছ জব্দ করে স্থানীয় কালামের বাড়িতে জিম্মায় রেখে যায়। ওই সময় পুলিশ বাগানে মোট ৪২টি গাছ কাটা দেখতে পায়। যার ছবি আদালতে জমা আছে। থানায় অভিযোগের পর পুলিশের পরামর্শে ৩/৯/২০১৯ তারিখে শাহ আলম বাদী হয়ে মিনু আক্তারসহ ১০ জনকে গাছ কাটার আসামী করে লামা জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করলে আসামীদের প্রতি ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন আদালত। বিস্ময়কর ব্যপার হচ্ছে, মিনু আক্তার তার আর্জিতে ৯টি সেগুন গাছের মুল্য এক লাখ আশি হাজার টাকা, ৪ বছর বয়সের ৪২টি গাছের মুল্য চুরাশী হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন (!)। অন্যদিকে পুলিশ তদন্তে গাছের একই (কাল্পনিক) মুল্য দেখানো হয়েছে। স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানাযায়, মিনু আক্তার ৭০৫ নং হো: এর ফইজ্জাখোলা গ্রাম থেকে ২ একর জায়গা ক্রয় করেন। ক্রয়কৃত বায়নানামা দলিলে জমির ফইজ্জাখোলার চৌহদ্দি না লিখে ২ কি:মি: দূরুত্বে শামুক ঝিরির ২৯/২৮ ভাট্টা চৌহদ্দি উল্লেখ করেন। এর ফলে বিবাদের সূত্রপাত হয়ে শাহ আলমকে ফাঁসানোর জন্য চাঁদাবাজির মিথ্যা ঘটনা বর্ণনা করে মিনু আক্তার মামলা করেছে। চলবে…