নজরুল ইসলাম জুলু:
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও স্বাভাবিক হয়নি ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকা। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সোমবার (১৩ মার্চ) পর্যন্ত সব ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া ঘটনা তদন্তে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীরকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন সাবেক প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তারিকুল হাসান এবং সহকারী প্রক্টর আরিফুর রহমান।
সোমবার সকালে এ তদন্ত কমিটির ব্যাপরে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি এখনও। আজ যে কোনো সময় এ কমিটির ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
কত কর্মদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে প্রশ্নে অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, সময়ের ব্যাপারে এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট দিতে বলা হবে। প্রজ্ঞাপনটি জারি হলে তাতে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকতে পারে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার দুদিন পরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিনোদপুর বাজার ও এর আশপাশের এলাকার তিন শতাধিক দোকানপাট রয়েছে বন্ধ। ঘটনার দিন ৬০টির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট ভাঙচুর এবং বেশ কয়েকটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সংঘর্ষের পর হামলার ক্ষত চিহ্ন এখনও চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এতে প্রায় কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিনোদপুর বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী।
তাই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থাকা রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে দূর পাল্লার ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এ সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও মোটরসাইকেলসহ হালকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বিকল্প হিসেবে ভারী যানবাহনগুলো বর্তমানে বিহাস-বিমান চত্বর সড়ক হয়ে শহরে প্রবেশ ও বাইর হচ্ছে। তালাইমারি, বিনোদপুর ও কাটাখালি পয়েন্ট অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে সাধারণ মানুষ ও যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ।
এছাড়া রেললাইনের ওপর অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর গভীর রাতে রাজশাহীর সঙ্গে দেশের ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে গেছে। রোববার (১২ মার্চ) রাত পৌনে ৮টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম জানান, রোববার রাত ১২টা ২০ মিনিটের পর থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহী রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে আটকা পড়া ট্রেনগুলো রাজশাহী থেকে ছাড়তে শুরু করে। রেললাইন সংস্কার কাজ শেষ করার পর রাত ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকাগামী আন্তঃনগরের ধুমকেতু এক্সপ্রেস ছাড়া হয়।
এর আগে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী ছেড়ে যায়। তারপর ওপারে আটকে থাকা সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত ১টা ২০ মিনিটে রাজশাহীতে ঢোকে। তারপর থেকে এক এক করে সবগুলো ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে রেললাইনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি ট্রেনই দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করছে।
রোববার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের পাশের রেললাইনের ওপর অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় রেললাইনের প্রায় ৯২টি ক্লিপ (পেন্ডেল) খুলে ফেলা হয়। এছাড়া একটি স্লিপার খুলে ডিসপ্লেস করে দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সরে গেলে তা সংস্কার করে রেলওয়ে।
এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শনিবার (১১ মার্চ) বিকেল ৫টা থেকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। রাত প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে সেখানে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।