গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। পাবনা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কোনো কোনো স্থানে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ রেকর্ড হচ্ছে। তাপমাত্রা কোথায়ও ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু রেললাইনের লোহার রেলপাতের তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রি ছড়িয়ে যাওয়ায় রেললাইন বেঁকে যাচ্ছে। মূলত, লোহার রেলপাতের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত সহনীয়। এই পরিস্থিতিতে কোথাও কোথাও রেললাইন বেঁকে ট্রেন চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। রেলের ভাষায় যাকে বলা হয় বাকলিং। এ অবস্থায় পশ্চিমাঞ্চল রেলের পাকশী বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইনে বিশেষ করে দিনের বেলায় ট্রেনের গতি কমিয়ে চলার স্ট্যান্ডিং অর্ডার বা স্থায়ী আদেশ দেওয়া হচ্ছে।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, আবহাওয়া অফিসে যে তাপমাত্রা থাকে তার চেয়ে ১০-১৫ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা থাকে লোহার রেলপাতে। রেললাইনে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির বেশি হলে রেললাইন পর্যবেক্ষণে রাখা হয় এবং ট্রেনের গতি কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। কোথাও বাকলিং বা লাইন বেঁকে যাচ্ছে কি না সেটা দেখার জন্য পেট্রোলিং লোকবল নিয়োগ করা হয়। রেলের পিডাব্লিউআই রেললাইনের তাপ পরিমাপ করে। তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির বেশি হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ট্রেনের গতি কমানোর নির্দেশনা দিতে পারে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যশোর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে দর্শনা পর্যন্ত রেলরুটে ট্রেনের গতি কমানোর স্থায়ী আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই লাইনে ট্রেনের গতি ৮০ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৬০ কিলোমিটারে চলাচল করতে বলা হয়। তাপমাত্রার অবস্থা বুঝে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
পাকশী ডিভিশনাল ট্রেন কন্ট্রোলার (ডিটিএনএন) আলমগীর হোসেন বলেন, ট্রেনে গতি কমানোর বিষয়টি প্রকৌশল বিভাগ দেখভাল করে। তারা কোনো নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী ট্রেন চলে।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী (ডিএন-২) বীরবল মন্ডল বলেন, অতিরিক্ত তাপে লোহা সম্প্রসারিত হয়। সেজন্য তাপমাত্রা বেশি হলে রেললাইন সম্প্রসারিত হয়ে বেঁকে যেতে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে রেললাইন সম্প্রসারিত হচ্ছে কি-না দেখার জন্য পেট্রোলিং টিম রয়েছে। প্রতি এক কিলোমিটার এলাকার জন্য একজন করে লোক রয়েছে যারা রেললাইনের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না সার্বক্ষণিক দেখভাল করছে।
তিনি আরও বলেন, ঈশ্বরদীতে কয়েকদিন ধরে রেললাইনে লোহার তাপমাত্রা ৫০-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠানামা করছে। প্রয়োজন না হলে ট্রেনের গতি কমানো হয় না। ১০ দিন আগে সম্ভবত রেললাইনের তাপমাত্রা ৫৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় কয়েক ঘণ্টার জন্য ট্রেনের গতি কমানোর নিদের্শনা দেওয়া হয়েছিল।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহ সূফি নূর মোহাম্মদ বলেন, ঢালাওভাবে রেলের গতি কমানোর কোনো নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে না। তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে দিনের বেলায় যেখানে যখন গতি কমানোর প্রয়োজন সেখানে কমানো হচ্ছে।