গাছ কাটা না গেলে টাইগারপাস এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প তৈরি করা যাবে না। তবে যে সব গাছ কাটা যাবে তা শতবর্ষী কোনো গাছ নয় বলে দাবি চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার সকালে র্যাম্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাস্তবায়ন এলাকা পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালকের দাবি, কোনো ধরনের শতবর্ষী গাছ কাটা যাচ্ছে না। ছোটখাট ৪৪টি গাছ কাটা যাচ্ছে। গাছগুলো কাটা না গেলে এ র্যাম্প বাস্তবায়ন করতে পারব না। সেজন্য আমরা বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছি।
বন বিভাগ পর্যালোচনা করেছে। গাছগুলো কাটা না যাওয়ার জন্য রাস্তার পাশে জায়গা চেয়ে আমরা রেলওয়েকেও চিঠি দিয়েছি। রেল থেকে জায়গা পাওয়ার পর আমরা কাজটি শুরু করবো। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তা আমরা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এ গাছগুলো রেখে কিভাবে কাজ করা যায় তার লে আউট প্রণয়ন করেছি আমরা। ছোটখাটো যে গাছগুলো কাটা যাচ্ছে, যদি আমরা র্যাম্পটা বাস্তাবায়ন করতে পারি, তাহলে এরচেয়ে বেশি গাছ লাগাবো। প্রায় ৪০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ র্যাম্পটি পলোগ্রাউন্ড স্কুলের পাশ থেকে শুরু হয়ে টাইগারপাসে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।
এতে নিউ মার্কেট, কদমতলী হয়ে আসা পতেঙ্গামুখী গাড়িগুলো যানজট এড়াতে এ র্যাম্প ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এ দিন প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে র্যাম্প তৈরির স্থানটি পরিদর্শনে আসেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান। সিডিএ বোর্ড সদস্য হিসেবে থাকা এ প্রকৌশলীও গাছ কাটার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গাছ ছোট হলেও একটি আবেগ তো আছে। চট্টগ্রামে অন্যতম সুন্দর জায়গা এটি। এটি আমাদের জন্য একটি প্রকৃতির উপহার। আজকে আমরা সরেজমিনে সবাই মিলে দেখলাম। প্রায় ৪৪টা গাছ এখানে কাটা পড়ছে। উনার (সিডিএ কর্মকর্তারা) যেটা বলছেন, র্যাম্পের প্রস্থ কমিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন। তারপরও এ গাছগুলো থাকবে না। এখন যে সৌন্দর্য আছে সেটাও নিশ্চয় আর থাকবে না।
আবার যদি অন্যদিকে চিন্তা করি, র্যাম্প না হলে নিউমার্কেট, ফিরিঙ্গিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের যে বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবে না। যদি উঠতে হয় তাহলে জিইসি মোড় কিংবা আগ্রাবাদ থেকে উঠতে হবে। আমাদের এখন ভেবে চিন্তে দেখতে হবে আমরা এখন কোনটা নেব। এ ধ্বংসটাকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রেখে কিছু করা যায় কিনা। আর যদি করা না যায় তাহলে আমার পরামর্শ হলো, এই র্যাম্প এখানে না হোক। আমাদের সৌন্দর্য থাকুক। আমাদের গাছ থাকুক। আমাদের সিআরবি থাকুক। উল্লেখ্য সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি।
২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ হয়েছিল। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। এ ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।