• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন

ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪

আজকাল অনেক শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সকলের অগোচরে বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নবম-দশম শ্রেণিতে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে অনেকটাই কম। অনেক শিক্ষার্থীদের দেখা যায় তারা দলবদ্ধ ভাবে স্কুল সময়ে বেপরোয়া চলাফেরা করছে। অনেক কিশোর ছাত্ররা ধূমপানসহ বিভিন্ন মাদক সেবনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে। জানাগেছে, ছাত্রীরা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজের ড্রেস পরে বের হলেও পরে সাদা এপ্রোন, বোরকা, স্কুল ড্রেস খুলে ভ্যানিটি ব্যাগে ভরে ফেলে, ফলে এদেরকে সহজে স্কুল,মাদ্রাসা,কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী বলে সনাক্ত করা যায় না।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা যখন পড়ালেখায় ব্যস্ত ক্লাসে, ঠিক তখনই বিপদগামী এক শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস চলাকালিন সময়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্ক,রেস্টুরেন্ট,আবাসিক হোটেল,সি এন জি গাড়ীতে দেখা করছে তাদের ভালোবাসার মানুষের সাথে। ভালোবাসার নামে ছেলে-মেয়েরা নষ্ট করছে নিজেদের জীবন। সরে যাচ্ছে পরিবার থেকে। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অনৈতিকতায় লিপ্ত শত শত শিক্ষার্থীরা। ক্লাস করার নাম করে বেরিয়ে এসে অবাধ প্রেমের অভিসারে মেতেছে টিনএজার ছেলে-মেয়েরা। আবেগের বশবর্তি হয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েরা শারিরীক সম্পর্কে জড়াচ্ছে। এতে অনেক তরুণী অজান্তেই অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়েছে। পৌর এলাকার বেসরকারী ক্লিনিক, নার্স চেম্বার সহ প্রায় প্রতি দিনই কথিত প্রেমের শিকার এই সব অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণকারী কিশোরী তরুণীদের গর্ভপাত করানো হচ্ছে। গর্ভপাত করাতে গিয়ে অনেকের মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে ও দাবী করছেন অনেকে। অনেকে আবেগের বশবর্তি হয়ে আত্নহনণের পথ ও বেছে নিচ্ছেন ।

ব্যর্থ প্রেমিক প্রেমিকা অবুঝ মনের হওয়ায় ব্যর্থতার গ্লানি মিটাতে ঘুমের বড়ি সেবন,মাদক সেবন, উদাসীনতা অনিয়ম সর্ব পরি একজন ছাত্র-ছাত্রীর যে পরিবেশে থাকার কথা তা বদলিয়ে যায়। ফলে লেখা পড়ায় অমনোযোগিতার কারণে সাধিত হচ্ছে এবং ঘটছে ফলাফল বিপর্যয়। মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় বেপরোয়া উদ্ধত আচরণ এবং পারিবারিক অনুশাসন ভেঙ্গে পড়ায় ত্রে বিশেষ অভিভাবকদের অচেতনতার কারণে এই সব কিশোর-কিশোরীরা অধঃ পতনে যাচ্ছে বলে সচেতন সুশীল সমাজ মনে করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক জানান, স্কুল ড্রেস ও বোরকা পরা অল্প বয়সের মেয়েরা প্রতিদিন কিছু নির্জন জায়গায় আসে। সঙ্গে বখাটে ছেলেদের দেখা যায়। সুযোগ পেলে নানা অনৈতিক আচরণ করে, যা দেখেও না দেখার মত চলতে হয় তাদের। আবার অনেক কিশোর ছাত্ররা জরিয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সাথে। এর ফলে বর্তমানে দেশে কিশোর অপরাধ উদ্বেগজনক-ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা হত্যাকাণ্ডের মতো হিংস্র ও নৃশংস অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। গত অর্ধ যুগ ধরে কিশোর অপরাধ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর ধরন পালটে গেছে। তাদের অপরাধগুলো ক্রমেই হিংস্র নৃশংস বিভীষিকাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণ করার পর হত্যা করার মতো হিংস্র ধরনের অপরাধ করার প্রবণতা উদ্বেগজনক-ভাবে বেড়ে গেছে এবং বেড়েই চলছে। সংঘবদ্ধভাবে প্রকাশ্য দিনের আলোয় নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়ার দায়িত্ব পিতা মাতার। অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে অনুপস্থিত কিনা দেখার দায়িত্ব স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের। কিন্তু মাসের পর মাস ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নেয় না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন। এর ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা চরমে পৌচেছে। অনেক মা-বাবা আছেন, তারা তাদের সন্তান কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে, ইন্টারনেটে কী দেখছে, সে সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন না। মনে করেন টাকা দিলেই সব শেষ। তাদের সন্তানদেরই অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

কিশোরদের অপরাধী হওয়ার নেপথ্যে আরও কিছু কারণ রয়েছে সন্তানকে প্রয়োজনীয় ধর্ময় ও নৈতিক শিক্ষাদানে অমনোযোগিতা. পারিবারিক পরিমন্ডলের ঝগড়া-বিবাদ, দারিদ্র্য, কুসংস্কার ও কুসঙ্গ, অতি আদও, আর্থিক প্রাচুর্য ও অনিদ্রার মতো বিষয়গুলো কিশোরদের অপরাধী করে তোলে।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সময়ের কিশোররা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং সেই সংস্কৃতি নিজেদের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই জায়গায় তারা ব্যর্থ হচ্ছে। যে সংস্কৃতি তারা গ্রহণ করতে চাচ্ছে সেটা পুরোপুরি নিতে পারছে না। অন্যদিকে যারা নিচ্ছে তারাও এটার সদ্ব্যবহার করতে পারছে না। যার ফলে সমাজে এর কু প্রভাব পড়ছে। অভিজ্ঞ মহল, সুশীল সমাজ, শিক্ষানুরাগীরা মনে করেন ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার এ সংস্কৃতি বন্ধের প্রত্যেক অভিভাবককে আরো সচেতন, দায়িত্ববান, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নজরদারি বৃদ্ধি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনকে দায়িত্বশীল, দেখভাল আবশ্যিক হয়ে পড়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ