বিনোদন ডেস্ক: দেশের বিনোদন অঙ্গনের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত। গতকাল সোমবার ছিলো তার জন্মদিন। আশির দশক থেকে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে দর্শককে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন। একাধারে তিনি উপস্থাপক, পরিচালক, লেখক ও প্রযোজক।
তবে ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা ছেড়ে একেবারেই তিনি সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রবেশ করেন। হানিফ সংকেতের জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর। প্রকৌশল শাস্ত্রে লেখাপড়া শেষ করেন তিনি। তারপর বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানে যোগ। ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তিনি সংস্কৃতি চর্চা করায়, পরিচয় হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রখ্যাত উপস্থাপক ও সাংবাদিক ফজলে লোহানীর সঙ্গে। লোহানীর হাত ধরেই হানিফ সংকেতের বিনোদন জগতে পদার্পণ।
১৯৭৮ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত প্রচারিত ফজলে লোহানীর ‘যদি কিছু মনে না করেন’ জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন হানিফ সংকেত। ফজলে লোহানীর জীবদ্দশায় কর্তৃপক্ষ তাকে একক অনুষ্ঠান করতে অনুরোধ করলেও রাজি হননি হানিফ সংকেত। ১৯৮৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিকভাবে মারা যান ফজলে লোহানী। এরপর বন্ধ হয়ে যায় ‘যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠানটি। এরপর হানিফ সংকেত ‘ঝলক’ ও ‘কথার কথা’ নামে দুটি অনুষ্ঠান শুরু করেন। এরপর এই অনুষ্ঠান দুটিও বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে হানিফ সংকেতের রচনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনায় নির্মাণ হয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারের শুরু থেকে সমাজের নানা দিক, অসংগতি তুলে ধরার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পায় ইত্যাদি। ‘ইত্যাদি’ই প্রথম আন্তর্জাতিক তারকাদের সাক্ষাৎকার প্রচার করে। যেমন-শাহরুখ খান, মিঠুন চক্রবর্তী, ওয়াসিম আকরাম, সৌরভ গাঙ্গুলী। পরে অন্যরা তা অনুসরণ শুরু করেন। বিদেশি নাগরিকদের দিয়ে তাদের মাতৃভাষার বদলে বাংলা ভাষায় গ্রামের সহজ সরল মানুষের চরিত্রে অভিনয় করিয়ে তুলে ধরা হয় লোকজ সংস্কৃতি ও গ্রামীণ খেলাধুলা। তিনিই একমাত্র উপস্থাপক যিনি কোন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে নিয়মিত দর্শকদের গাছ উপহার দিয়েছেন। তার ভাষায় গাছ হলো ‘পরিবেশ বন্ধু’। তিনিই একমাত্র উপস্থাপক যিনি ইত্যাদির পাশাপাশি ‘মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার’ অনুষ্ঠানে দর্শক চাহিদায় সেরা উপস্থাপক। উপস্থাপনা যে একটা শিল্প, তিনি তা প্রমাণ করেছেন। দেশে প্রথম ভেজালবিরোধী আন্দোলন ইত্যাদির মাধ্যমে শুরু হয়। টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের প্রযোজনা শিল্পে তিনি সেরা পথপ্রদর্শক। ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ টিভি অনুষ্ঠান হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পায় ‘ইত্যাদি’।
পরবর্তীতে নুতনদের উৎসাহিত করার জন্য তিনি তাকে আর পুরস্কার না দেয়ার অনুরোধ জানান। জানা যায়, বিবিসিসহ দেশের প্রতিটি জরিপ মতে, স্যাটেলাইট চ্যানেলের যুগে এসেও ‘ইত্যাদি’ দেশের সেরা টিভি অনুষ্ঠান এবং দেশের ৭৫ শতাংশ টিভি দর্শক এ অনুষ্ঠান দেখে থাকেন। জনপ্রিয় এই তারকার বাড়ি বরিশাল হলেও শৈশবে বেশিদিন থাকার সুযোগ হয়নি। গ্রামে লেখাপড়া করাও হয়নি। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়েছেন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকায়। হানিফ সংকেতের বাবা আবদুল হাকিম হাওলাদার পুলিশ বিভাগের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। হানিফ সংকেত ঢাকায় বসবাস করেন। তার স্ত্রীর নাম সানজিদা। তাদের রয়েছে দুই সন্তান। বড় ছেলে সাদমান রাফিদ ফাগুন ও মেয়ে সিনদিদা হানিফ বর্ণনা। একাধিক নাটক পরিচালনা করেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন। জনপ্রিয় নাটকের মধ্যে ‘আয় ফিরে তোর প্রাণের বারান্দায়’, ‘দুর্ঘটনা’, ‘তোষামোদে খোশ আমোদে’, ‘কিংকর্তব্য’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘শেষে এসে অবশেষে’ উল্লেখযোগ্য। চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন হানিফ সংকেত। বেশ কয়েকটি ব্যঙ্গ ও রম্য রচনা লিখেছেন তিনি। ‘চৌচাপটে’, ‘এপিঠ ওপিঠ’, ‘ধন্যবাদ’, ‘অকাণ্ড কাণ্ড’, ‘খবরে প্রকাশ’, ‘ফুলের মতো পবিত্র..’, ‘প্রতি ও ইতি’, ‘আটখানার পাটখানা’ অন্যতম। এ ছাড়া তার লিখিত রম্য সাহিত্য পাঠক সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়। সামাজিক নানা কাজের জন্য একুশে পদক পান হানিফ সংকেত। পরিবেশ শিক্ষা ও প্রচারের জন্য ২০১৪ সালের জাতীয় পরিবেশ পদক দেয়া হয় তাকে। এছাড়াও তিনি দেশে-বিদেশে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।