খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হবে আগামী ২০ অক্টোবর থেকে। অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে পৃথিবীতে শুভ শক্তির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন অশুরবিনাশী দেবী দুর্গা।এ উপলক্ষে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের দাশাঁই নৃত্বের ও সনাতনীদের ১০টি মন্ডপে দিনরাত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরি ,মন্ডম সাজানো ও ডেকোরেশানের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পী ও কারিগররা।
পানছড়ি বাজার দেবালয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রুপম চক্রবর্তী জানান, এ বছর ঘটকে চরে দেবী দূর্গা মর্ত্য লোকে পদার্পন করবেন । আবার ঘটকেই কৈলাশে ফিরবেন। আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার পূজার আনুষ্ঠানিকতা মহাষষ্ঠী পালিত হবে । মহাসপ্তমী হবে ২১ অক্টোবর শনিবার, মহাঅষ্টমী ২২ অক্টোবর রবিবার। মহানবমী পালিত হবে ২৩ অক্টোবর সোমবার। পূজা চলবে ৫দিন। ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমী পালিত হবে এবং বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় ,অধিকাংশ পূজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরীর মূল কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সাজ-সজ্জায় ও রংয়ের কাজ প্রায় শেষের পথে। বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে পূজা মন্ডপ গুলো।
পানছড়ি দেবালয় মন্দিরের প্রতিমা নির্মাণ শিল্পী তরুন ভট্টচার্য বলেন, খড়, ছন ও কাঁদামাটি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিমা। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন শুধু প্রতিমা রূপ দিতে রং তুলির আচড় দেওয়া হয়েছে । সৌন্দর্য বাড়াতে রংতুলির শেষ আঁচর হবে দু’একদিনের মধ্যে । ডেকোরেশান কাজও চলছে ,বুধবারের মধ্যে পরিপূর্ণ হবে মন্ডপ সমুহ।
এদিকে, শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে উপজেলার সর্বত্র এখন চলছে উৎসবের আমেজ। ঘরে বাইরে পূজাকে ঘিরে চলছে ব্যস্ততা। ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পর্যন্ত বিপনী বিতান গুলোতে পূজার কেনাকাটা তেমন একটা শুরু হয়নি।
উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার দেব বলেন, উপজেলা মোট ১০ টি মন্দিরে পূজা উদযাপন করা হবে। তিনি মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেছেন । প্রতিটি মন্দিরে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলছে। দূর্গা পূজায় যাতে কোন ধরণের অপ্রীতিকর কোন ঘটনা না ঘটে সে দিকে সকলের সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।
অপর দিকে, কানুনগো পাড়ার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কার্বারী মিলন হেমরম জানান, দুর্গা পূজার সময়েই মহা নবমীর দিন সমস্ত আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ পালন করেন দাঁশাই উৎসব। এর কয়েকদিন আগ থেকেই আদিবাসি সাঁওতালরা বিশেষ বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে পুরুষরা নানা সাজে সজ্জিত হয়ে নেচে গেয়ে বিভিন্ন পাড়ায় মন্দিরে মন্দিরে যায়। তবে ২১ অক্টেবর থেকেই রাম সাঁওতাদের নেতৃত্বে দাঁশাই উৎসবের প্রস্ততি চলছে বলে জানান ।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করতে ও যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রতিটি পূজা মন্ডপে পুলিশ -আনসারের পাশাপাশি মন্দির কমিটির স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা নিয়োজিত থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া আফরোজ বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ ভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্ততি নেয়া হচ্ছে। পূজা উৎসব চলাকালে সার্বক্ষনিক মনিটরিং চালু থাকবে।