মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নম্বর ১২০৪/২০২২ এর গত ২৫/০১/২০২২ খ্রি. তারিখের আদেশে বান্দরবান জেলায় ২২ ব্যাতিত, বাকি ইটভাটগুলো অবৈধ ঘোষণা করে কার্ক্রম বন্ধ করে দেন জেলাপ্রশাসন। লামা উপজেলায় কয়েকটি ব্রিক ফিল্ডে সরেজমিন দেখাযায়, হাই কোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের লাল রঙের সাইন বোর্ড লাগানো হয়। বিগত মৌসুম শেষে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন লামা উপজেলা প্রশাসন। পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায়গুলোতে সংশ্লিষ্টদেরকে তাগাদা দিয়ে আসছে। এ বিষয়ে প্রশাসন গত কয়েকমাস ধরে খুবই তৎপর ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে। সূত্রে জানাযায়, চলতি বছর জেলা ২২টি ইটভাটা ব্যাতিত বাকি ভাটাগুলো হাইকোর্টের নির্দেশে অবৈধ ঘোষণা করেছে। প্রশাসনের অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। ৮ অক্টোবর এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শেষ সংযোজন ছিলো; লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মালুম্যা এমএসবি ইটভাটায় পাহাড় কর্তনের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। ৮ অক্টোবর রবিবার দুপুরে এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন লামা উপজেলা সরকারি কমিশনার (ভূমি) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রাহাতুল ইসলাম। এ সময় পাহাড় কাটার কাজে ব্যহৃত ১টি স্কেভেটর ভেঙ্গে দেয়ার পাশাপাশি, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৬ এর ‘খ’ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। বিগত বছরগুলোতে জেলার সাত উপজেলা প্রায় শ্ খানেক ইটভাটা চালু ছিলো। ভাটার মালিকরা প্রশাসনের বাঁধা উপেক্ষা করে সুবিধাজনক স্থানে পাহাড়ে বিভিন্ন বাঁকে এসব ভাটা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। কারণ পার্বত্য বান্দরবানে উন্নয়ন কাজে বিগত ১৫ বছর ইটের ব্যাপক চাহিদা দেখা দেয়। এই চাহিদা পূরনের জন্য মূলতঃ যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপিত হয়। যার ফলে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ইটের বিশাল চাহিদা পূরন করতে এসব ব্রিক ফিল্ড নির্মাণ ঠিকাদারদের ইট প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে। পাহাড়ি এলাকার রাস্তা ঘাট, পর্যটন হোটেল মোটেল, সেতু কালভার্ট, সু-উচ্চ দালান কোঠা ছাড়াও সীমান্ত সড়কসহ বড় বড় বহু উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হয়েছে পোড়া মাটির ইট। জানাযায়, সমগ্র জেলায় যে ২২ টি ইটভাটা নিয়ম মেনে চালু থাকবে, তার মধ্যে লামা উপজেলায় তিনটি। এগুলো হচ্ছে লামা পৌরসভার ছাগল খাইয়া নামক স্থানে এসবিএম নামের একটি, গজালিয়ায় ১টি ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ১টি। আলীকদম উপজেলায় নিষধাজ্ঞামুক্ত ১টি চারা বটতলীতে। নাইক্ষ্যংছড়িতে ৫টি ও বাকি ১১টি বান্দরবান সদরসহ অন্যান্য এলাকায়। সত্যেকারেই যদি ইটভাটা বন্ধ হয়ে যায়, তবে সে ক্ষেত্রে উন্নয়ন কাজে ইটের চাহিদা পূরন হবে কিনা (?)। সরকারের উন্নয়ন কাজের ডিজাইন ও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য নির্ধারনকারী কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি ভাবতে হবে। নির্মাণ কাজে বালু ও ইটের ব্যবহার মূখ্য। কিন্তু এই দুইটি নির্মাণ পন্যসামগ্রিই যেমন ইট তৈরি ও প্রাকৃতিক উৎস খাল-ছড়া নদী থেকে বালু সংগ্রহ করা, এই এলাকায় অবৈধ। এমন মতামত দিয়েছেন স্থানীয়রা। জীবনের জন্য পরিবেশ, পাহাড় প্রকৃতিকে টিকিয়ে যেমন রাখতে হবে; তেমনি উন্নত সমৃদ্ধ সমাজ জীবনের জন্য ইট বালি মিশ্রিত উন্নয়নও করতে হবে। দেশের আইন প্রনেতারা এসব বিষয়ে আইনের সাংঘর্ষিক দিকগুলো সংস্কার করতে হবে। আমাদের দেশে পরিবেশ আইন অনুস্মরণ করা হলে, বঙ্গের ঊর্ধ গগনেও ইটভাটা করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য অনেকের। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, উন্নয়নের পরিবেশ যেমন দরকার। তেমনি পরিবেশের উন্নয়নও দরকার। পরিবেশ ও উন্নয়নকে মুখোমুখি দাড় করানো যাব না। দু’টায় একে অন্যটির সম্পূরক, এই দুইটির কোনটিকে কমগুরুত্ব বিবেচনায় রাখা যাবেনা। এসব সমন্তরাল রাখার অন্তরাল রাখা যাবে না। সহজ ভাষায়, ব্যালেন্স করে চালাতে হবে সবকিছু। অন্যথায় উন্নয়ন বা স্মার্ট সমাজ গঠন, যাই বলেন না কেন সবই থমকে যাবে।