লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না নিয়ে আবারও কাটা হচ্ছে পাহাড়। এবার বাস্কেটবল মাঠ বানাতে পাহাড়ের জমিই বেছে নিয়েছে প্রশাসন। তবে নেয়নি কোনও অনুমতি। এ নিয়ে প্রশাসনের নানা পর্যায়ের বক্তব্যেই মিলছে গরমিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতর জানিয়েছে, ৩০ লাখ টাকা বাজেটে ১০০ ফিট দৈর্ঘ্য এবং ৫৬ ফিট প্রস্থের এই বাস্কেটবল মাঠ তৈরি করা হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষক ডরমিটরি এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মাঝ বরাবর বাস্কেটবল মাঠটি নির্মাণের জন্য শ্রমিকেরা পাহাড়ের বেশ কিছু মাটি কেটে নিয়েছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০১০-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী পাহাড় বা টিলা কাটার জন্য ছাড়পত্রের বিধান থাকলেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে পাহাড়টি কাটার ক্ষেত্রে সেটি মানা হয়নি।
কুমিল্লা জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব বলেন, ‘এটির জন্য কোনও অনুমোদন বা ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি।’
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো বাস্কেটবল মাঠ নির্মাণের কাজ শুরু হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস এম শহিদুল হাসান বলেন, ‘এটি রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতের কাজ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটির অনুমোদন পরিবেশ অধিদফতরের কাছে চাইলেও দেবে না। কেননা, এটির প্রশাসনিক অনুমোদন চাইবে তারা। প্রশাসনিক অনুমোদন পেতে হলে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা একনেক থেকে অনুমোদিত হতে হয়। কিন্তু এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটির লিখিত তারা (শিক্ষা মন্ত্রণালয়/একনেক) দেবে না৷’
এদিকে, বাস্কেটবল মাঠ নির্মাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, সদস্য ছিলেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান এবং সদস্যসচিব ছিলেন শারীরিক শিক্ষা কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুল আলম।
পরিকল্পনা কমিটির সদস্যসচিব এটিকে পাহাড় কাটা মানতে নারাজ। তার ভাষায় এটি ‘পাহাড় ড্রেসিং’। ছাড়পত্র ছাড়াই পাহাড় কেটে বাস্কেটবল মাঠ নির্মাণের সুপারিশ কীভাবে করা হলো—জানতে চাইলে এমন দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘আসলে পাহাড় কাটা হয়নি। পাহাড় ড্রেসিং করে মাঠটি তৈরি করা হচ্ছে। পাহাড় তো টুকটাক ড্রেসিং করা হয়।’ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘কোন স্থাপনা পাহাড় ড্রেসিং ছাড়া হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে? যেহেতু আমাদের সমতল জায়গা নেই। আর বাস্কেটবল মাঠের জন্য সমতল জায়গা লাগে। এজন্য পাহাড় ড্রেসিং করে মাঠ তৈরি করা হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন দাবি করছেন, তিনি পাহাড় কেটে বাস্কেটবল মাঠ নির্মাণের বিষয়টি জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে পাহাড় কাটার কথা না। পাহাড় কাটা হলে অবশ্যই অনুমোদন নিতে হবে।’
এর আগে, ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রথম সমাবর্তন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্যান্ডেল তৈরির জন্য কাটা হয় পাহাড়। সেবারও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিবেশ অধিদফতর থেকে পাহাড় কাটার কোনও অনুমতি নেয়নি। যার ফলে পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াও জরিমানা গুনতে হয়েছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে।