• বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
চৌদ্দগ্রামে অবৈধ অস্ত্র সহ যুবক আটক! বরিশালে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক বিজয়ী শুটার আতিকুর রহমান আর নেই অভিভাবকহীন সন্তানদের থেকে রাষ্ট্রও যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে” রাজশাহীতে এটিএন বাংলার সাংবাদিক সুজাউদ্দিন ছোটন এর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলায় বএিমইউজরে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ বান্দরবানে ড. এফ. দীপংকর মহাথের (ধুতাঙ্গ ভান্তে) এঁর রহস্যজনক মৃত্যুর তথ্য উদঘাটনের দাবীতে উত্তাল পার্বত্য জনপদ গুইমারাতে ১ কেজি ৫২০গ্রাম গাঁজাউদ্ধার, ২ জন আটক আম নিয়ে কষ্টগাঁথা ইউরোপ-আমেরিকা যাচ্ছে নোয়াখালীর দেওটির ছানা মিষ্টি উপনিবেশিক-অসাংবিধানিক ১৯০০ সালের শাসনবিধি আইন বহাল রাখার ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে পিসিএনপি রাজপথে নামবে

‘নো স্টুডেন্ট পলিটিক্স ইন বুয়েট’ হ্যাশট্যাগে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি চালুর পক্ষ-বিপক্ষে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মূলত দুটি পক্ষে ভাগ হয়ে এগোচ্ছে এ বিতর্ক। তবে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি না রাখার পক্ষেই বেশি মত দেখা যাচ্ছে।

এ মতের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে NO_STUDENT_POLITICS_IN_BUET হ্যাশট্যাগে নিজেদের মতমত তুলে ধরছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও জনপ্রিয় লেখক চমক হাসান নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেন, আমি বুয়েটের অ্যালামনাইদের একজন হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি বুয়েটে ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ থাকা উচিত। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র শিবির- কিছুরই দরকার নাই। কারণ দেখানো খুব সহজ। দুই কলামের একটা সারণি বানানো হোক। বামপাশে থাকুক ছাত্র-রাজনীতির উপস্থিতি বুয়েটে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন উপহার দিয়েছে তার একটা তালিকা, আর ডানপাশে থাকুক ছাত্র-রাজনীতির উপস্থিতির কারণে কী কী যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে গেছে ছাত্র-শিক্ষক-প্রশাসন, তার একটা খতিয়ান। ডানপাশে আবরার, সনি, দীপ – এই নামগুলোর কোনো একটার যে ভার, সেটা বামপাশের সম্মিলিত ভারের চেয়েও বহুগুণে বেশি। এরপরেও ডানদিকের তালিকায় র‍্যাগিং, অত্যাচার, চাঁদাবাজি, ক্ষমতা প্রদর্শনী, অন্যায় সুবিধাভোগ – এসবের উপাখ্যান পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে যাওয়া যাবে। তাহলে ছাত্র-রাজনীতি কেন চাইবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা?
ডিপার্টমেন্টের প্রিয় জুনিয়র আবরারকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, মন থেকে সেই ক্ষত এখনও মুছে যায়নি। চেনা জুনিয়রদের সাথে যত আলাপ হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আবরার-হত্যার ঘটনার পর যখন ছাত্র-রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়, তার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক শান্তিতে ছিল, আছে। কোনো যুক্তিতেই আবার ঐ নরক ফিরিয়ে আনার মানে হয় না।

ছাত্রলীগ না থাকলে শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে- এটাও মেনে নেওয়ার মতো যুক্তি না। সহজ কথা- ছাত্র রাজনীতি নেই মানে কোনো সংগঠনেরই কার্যক্রম নেই। ছাত্রলীগও না, শিবিরও না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবাইকেই প্রতিহত করবে। গত কদিনে সবার সাহস আর ঐক্য দেখে তাদের প্রতি এই ভরসা আমার আছে।
একসঙ্গে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে, পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা যে ঐক্য দেখিয়েছে, সেটা অসাধারণ। মন থেকে ভালোবাসা আর টুপিখোলা সালাম! আমার পূর্ণ সমর্থন রইলো তোমাদের জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. নুমেরি সাত্তার অপার লিখেছেন, আমি বুয়েটের একজন প্রাক্তন ছাত্র। বুয়েটের এলামনাই হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং তাদের সফলতা কামনা করছি।

ফিরোজা বিনতে ওমর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ ব্যাচের এক ছাত্রী লিখেছেন, বুয়েটের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং এলামনাই হিসেবে আমি বুয়েটে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে। বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং তাদের সফলতা কামনা করছি।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে প্রায় একই ধরনের পোস্ট করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এম. মাশরুর হোসেন, ১৭তম ব্যাচের ছাত্রী নুসরাত মুমুসহ সাবেক অনেক শিক্ষার্থী।

বর্তমান শিক্ষার্থীরাও ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ লিখেছেন, শুধামাত্র একজন বুয়েটের শিক্ষার্থী হিসেবে নয়, আবরার ফাহাদের ভাই হিসেবে বলতে চাই বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি ফিরে আসলে তা বুয়েট ক্যাম্পাসকে দেশের সবচেয়ে অনিরাপদ ক্যাম্পাসে পরিণত করবে।

তিনি লিখেন, ২০০২ এ সনি আপুকে হত্যার পরে খুব বেশিদিন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল না। যার ফলাফল দেখি আমরা আরিফ রায়হান দীপের হত্যাকাণ্ডে। তারপরে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি। যার সর্বশেষ শিকার আবরার ফাহাদ।

অনিন্দ্য সাহা নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী লিখেন, আমি বুয়েটের একজন শিক্ষার্থী। আমি বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে কোনো প্রকার সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি পুনরায় প্রতিষ্ঠা হোক তা চাই না।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান আরও অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। এর বাইরে বুয়েটের শিক্ষার্থী নন, এমন অনেক শিক্ষার্থীও ফেসবুকের এ ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছেন। তারাও বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে নিজেদের মতামত তুলে ধরছেন।

এদিকে, ক্যাম্পাসটিতে ছাত্র রাজনীতির তৎপরতা বন্ধে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিতে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস, অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাবেন।

শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান করলেও ছাত্রলীগ বলছে, যেকোনো মূল্যে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালু করা হবে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টও বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ স্থগিত করেছেন।

২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে ওই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, তা অনুসরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার। তিনি বলেছেন, আদালত যেটা বলবে- আমাদের সেটা মানতে হবে। আদালতের আদেশ শিরোধার্য। আদালত অবমাননা আমরা করতে পারব না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ