নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সর্বপ্রথম রক্ত নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিএসএমএমইউয়ে ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত বিশ্ব এফেরিসিস সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুই ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ উদ্বোধন করেছিলেন। একইসঙ্গে তিনি রক্ত নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেছিলেন। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ও রোগীদের জীবন বাঁচাতে রক্তের বিরাট অবদান রয়েছে। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু জনসাধারণের রক্তদানে যেমন এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন এবং গবেষণার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বর্তমানে রক্ত নিয়ে প্রচুর গবেষণা করছেন। যার কারণে রক্তের মাধ্যমে বর্তমানে অনেক জটিল জটিল রোগের সেবা বাংলাদেশেই দেয়া সম্ভব হচ্ছে। সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।
বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, আমরা গবেষণা খাতে বরাদ্দ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছি। এই গবেষণার সুফল হিসেবে রোগ প্রতিরোধে যেমন ভূমিকা রাখবে, তেমনি সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে রোগীদের রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। রক্তদানে কোনো ক্ষতি নেই বরং রক্তদানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে রক্তদানের ক্ষেত্রে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের বিষয়টি মনে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ রক্তদানের আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে।
আলোচনা সভায় ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, এই বিভাগে আরও অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সংযোজন করা হচ্ছে। যার ফলে রক্তরোগে আক্রান্ত কোনো রোগীকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের এফেরেসিস ইউনিট গত দশ বছর ধরে রক্ত সম্পর্কিত নানা সেবা প্রদান করে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো এফেরেসিস প্লাটিলেট, যা ডেঙ্গুসহ অন্যান্য রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এফেরেসিস প্লাটিলেট ডেঙ্গু রোগীদের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশেষ করে যেসব ডেঙ্গু রোগীর এফেরেসিস প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয়।
তারা বলেন, বন্ধ্যাত্বসহ অন্যান্য রোগীদের জন্য স্টেম সেল সংগ্রহ ও চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করা হচ্ছে। লিভার ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হচ্ছে। থেরাপিউটিক প্লাজমা এক্সচেঞ্জ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে গুলেন বারী সিনড্রম, মাইয়েসথেনিয়া গ্রেভিস, রেনাল এলো গ্রাফট রিজেকশন, এসএলই উয়িথ আরপিজিএন, ক্রোনিক ইনফ্লামেটারি ডিমাইলেটিং পলিনিউরোপ্যাথি, ট্রান্সভারস মাইলাইটিস, মাল্টিপল মাইলোমা, ফ্যামেলিয়ার হাইপারলিপিডিমিয়া, এটিপিক্যাল হিমোলাইটিক ইরেমিক সিনন্ড্রম, ডিকমপেনসেটেট লিভার সিরোসিস, থ্যাইমোমা, সিকেল সেল ডিজিস, গ্রেভস ডিজিস, অ্যাকট অন ক্রোনিক লিভার ডিজিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের প্লাজমা এক্সচেঞ্জ করা হচ্ছে।
সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ সাইফুল ইসলাম শাহীনের সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. আয়েশা খাতুন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডা. সোনিয়া শারমিন, গবেষণা সহকারী ডা. খান আনিসুল ইসলাম, মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফিরোজা বেগম, ডা. সুর্বণা সাহা ও ব্লাড প্রোগ্রাম অফিসার ডা. নাদিয়া শারমিন তৃষাসহ আরও অনেকে।