• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৪ অপরাহ্ন

হিরো আলম জিন্দাবাদ

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০২৩

এবারও জনাব আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের এমপি হবার সাধ মিটিলোনা। বড় সাধ করে এমপি হবার জন্য ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তুু এবার বিপুল ব্যবধানে হেরে গেলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক প্রার্থী জনাব মোহসম্মদ আলী আরাফাতের কাছে। বরঞ্চ নির্বাচনী দিনের শেষ মূহুর্তে রাজপথে তিনি দৈহিকভাবে লাঞ্চিত হলেন কিছু দুর্বৃত্ত লোকদের হাতে। অতপর তিনি ক্লিনিকে ভর্তি হলেন। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিডিয়াকে বলে দিলেন যে, তিনি আর কখনো এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করবেন না। তাহলে তাঁর যে বাংলাদেশে এমপি হবার এতদিনের লালিত স্বপ্ন বা সাধ বোধকরি তা অচিরেই বিনষ্ট হয়ে গেল।
জনাব হিরো আলম এর আগেও এ বছরে গত ফেব্রুয়ারী মাসে বগুড়ায় অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ উপনির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং খুবই কম ব্যবধানে মাত্র ৮৩৪ ভোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগসহ ১৪ দলের মনোনীত প্রার্থী জনাব এ,কে,এম রেজাউল করিমের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তবে তখন তিনি পরাজয় স্বীকার করেননি। সরকার কারচুপির মাধ্যমে জোর জবরদস্তি করে তাকে হারানো হয়েছিল বলে তিনি জোর দাবী করেছিলেন। হেরে গেলেও সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই তিনি আরও হিরো হয়ে গিয়েছিলেন। অত্যাধিক সাহসীও হয়েছিলেন। তখন তিনি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদেরকে তার সাথে নির্বাচন করার জন্যও প্রত্যক্ষভাবে আহবান জানিয়েছিলেন।
কথা হলো এত সাহস হিরো আলমের হলো কি করে? এত সাহস তিনি কোথা থেকে অর্জন করলেন? টিকটক করে, ইউটিউবে ভিডিও ছেড়ে দিয়ে, দু’য়েকটি সিনেমা বানিয়ে কী এত সাহস অর্জন করা যায়? যায়না মোটেও। তাহলে তিনি নির্বাচনে এত ভোট পায় কিভাবে? তার অত্যাধিক জনপ্রিয়তার কারণে? জনগন তাকে অত্যাধিক ভালোবাসে বলে? তিনি জনপ্রিয়তার কি কাজ করেছেন? সমাজের এমন কি কাজ করেছেন তিনি যা সবাই তাকে ভালোবাসবে,পছন্দ করবে?
এটা সত্য যে, হিরো আলমের মত একটা হাস্য রসিক বিনোদন কর্মীর এমনতর উত্থান কোন রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ছাড়া মোটেই সম্ভবপর নয়।
মেনে নিলাম জনাব হিরো আলম এখন খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি যেখানে যান সেখানে তার অনুসারিরাও দলবল বেঁধে একত্রিত হন। কতক ললনা,রমনীরাও তার সাথে ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের ভরসা এই, হিরো আলমের পছন্দ হলে সিনেমার নায়িকা হয়ে যাবে বা হিরো আলমের সাথে একটিবার নাচতে পারলে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। রমনী বা ললনাদের কথা না হয় বাদ দিলাম। যেভাবে মিডিয়ারা হুমরি খেয়ে পড়ে হিরো আলমের উপর! যেভাবে বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলো ফলাও করে তার খবর প্রচার করে সুতরাং, হিরো আলম একজন জনপ্রিয় বড় নেতা না হয়ে উপায় কি?
অথচ, তার যে এত হাজার, লক্ষ-কোটি ভক্ত কোথায় গেল সেদিন? যেদিন ভোট শেষে তিনি রাস্তায় কিছু দুর্বৃত্তের দ্বারা আক্রান্ত হলেন তখন তার ভক্ত অনুসারীরা গেল কোথায়? বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপে বা টিভি চ্যানেলে দেখলাম তার কথিত ভক্তরা জনাব হিরো আলমকে রক্ষার পরিবর্তে মোবাইল ক্যামরায় ভিডিও ধারণ করতে সবাই ব্যস্ত। তাহলে কি এটাও কোন পরিকল্পিত? জনাব হিরো আলম একটি রাজনৈতিক দলের  বড়শির তোপে পড়েননিতো? বা ক্ষমতাসীন সরকারকে বহিজগতে হেয় করার জন্য একটি রাজনৈতিক দলের নাটকে অভিনয় করেননিতো যেভাবে সিনেমায় নায়ক নায়িকার মন জয় করার জন্য নিজের বন্ধুূদের সাথে মারপিট করে বাহাদুরি সাজে? সবই সম্ভব আমাদের এ দেশে। নয়ত এ দৃশ্য এত দ্রুত কিভাবে ছড়িয়ে গেল বিশ্ব মোড়ল দেশ আমেরিকায়? সেখানে আমেরিকার পররাস্ত্র দপ্তরে একজন বাঙালী(বিএনপি’র নেতা) নির্লজ্জভাবে নালিশ জানালেন…।  এ নিয়ে জাতিসংঘও একটা বিবৃত্তি বা স্ট্যাটমেন্ট দিয়ে দিল অতি দ্রুততার সাথে। অথচ, অল্প কিছুদিন আগেও আমেরিকার কোন একটি স্কুলে বন্ধুকদারীদের গুলি বর্ষনে মারা গেছে অনেক শিক্ষার্থী। জাতিসংঘ নিশ্চুপ!
বাংলাদেশের হিরো আলম এখন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব ক্ষমতাধর আমেরিকায় এবং বিশ্বের ন্যায়পাল যমরাজের ভবন জাতিসংঘে! তাকে এখন রুখবে কে? কোন রাজনৈতিক নেতা তার সাথে তুলনীয় হবে বা কে তার সমকক্ষ হতে পারবে?
আমার এ লেখাটি জনাব হিরো আলমকে আরও স্বীকৃতি দিয়ে প্রচারের উদ্দেশ্য নয়। যারা তাকে প্রলোভন দিয়ে, নানান কুবুদ্ধি দিয়ে অপ্রতিরূদ্ধ করে তুলেছেন সেই রাজনৈতিক দল, সেই তথাকথিত বুূ্দ্ধিজীবি, সেই সাংবাদিক, মিডিয়াভাইদের জন্য আমার এ লেখাটি। দয়া করে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন আপনারা সঠিক কর্তব্য পালণ করেছেন কি না। এতটুকুও যদি দেশপ্রেম থাকে আপনাদের অন্তরে তাহলে দেশের মানসন্মান হানিকর এমন কাজ করে যাচ্ছেন কাদের জন্য? লাভ কাদের হবে? দেশতো আমাদের সবার। দেশের ভাবমূর্তি বজায় রাখা কি সকলের কর্তব্য নয়? শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কিম্বা যেনতেনভাবে ক্ষমতায় আরোহনের জন্য দেশের সাথে তামাসা করাটা কি অন্যায় নয়? মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দেশের দূর্নাম রটানো কি দেশদ্রোহী নয়?
হিরো আলম অবশ্য রাজনীতি করবেন। স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক হিসাবে তার রাজনীতি করার অধিকার আছে। কিন্তুু তাই বলে একলাফে গাছের একদম আগায় উঠে যাওয়া তা কি সকলের সাজে? তিনি প্রথমে তার এলাকায় মেম্বার, চেয়ারম্যান হয়ে জনগনের সেবা করে নিজেকে সমাজ সেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর রাজনীতিতে বসতে পারতেন। অথবা তিনি একটা দল করে নিবন্ধিত হয়ে যে কোন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারতেন। অথবা বর্তমান বিরাজমান যে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন। তবেই শান্তিপূর্ণ দেশে এমন অশান্তির ঘটনা অন্তত ঘটতোনা।
কিন্তুু কথা হলো কোন রাজনৈতিক দল কি তাকে অফার দিয়েছে? দেয়নি। বরঞ্চ তাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উস্কানি দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন, তাকে ভোটও দিচ্ছেন বেশ মজা করে,উৎফুল্ল হয়ে। উদ্দেশ্য, যদি জিতিয়ে আনা যায় তাহলে প্রমাণিত হবে যে এ সরকারের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই, কারণ হিরো আলমের মত এমন একটা ছেলের কাছেও সরকারের মনোনীত লোক হেরে যায়। আর হিরো আলম ভোটে হেরে গেলেও কোন অসুবিধা নেই, দেশে, বিদেশে এই বলে প্রচার করা যাবে যে সরকার সামান্য হিরো আলমের সাথেও নির্বাচনে জিতার জন্য এই অন্যায় করেছে, কারচুপি করেছে। কাজেই এই সরকারে অধীনে কোন নির্বাচন হতে পারেনা। অনেকটা এ রকম যে, সরকার কাউকে ধরলে ধরলে কেন আবার না ধরলে ধরলেনা কেন।
জনাব হিরো আলম কি এখন বুঝতে পেরেছেন যে তাকে পুতুল হিসেবে নাচাচ্ছে এক শ্রেণি বুদ্ধিজীবি? রাজনীতিতে বলির পাঁঠা হিসেবে তাকে ব্যবহা করা হচ্ছে কথিত দেশপ্রেমে মায়াকান্নায় জর্জরিত কিছু রাজনৈতিক দল? তিনি কি বুঝতে পেরেছেন যে, ক্ষমতার সিঁড়ি বা মই হিসেবে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে?
আমার কেবলই দুঃখ হয়, কষ্ট হয় নিবেদিত রাজনৈতিক নেতাদের জন্য। তারা এতবছর রাজনীতি করে, জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করে, দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেও হিরো আলমের মত হতে পারলেননা। তাদের নাম কখনো আমেরিকার ক্ষমতাবান নেতা উচ্চারণ করবেনা। তাদের নাম নিয়ে কখনো জাতিসংঘ বিবৃতি দেবেনা। যেন সবই বৃথা। কি লজ্জা! কি লজ্জা! এতই কুলষিত হলো রাজনীতি!
লজ্জা শুধু আপনাদের নয়। এ লজ্জা আমার মত বিবেকবান নাগরিকদেরও। এ লজ্জা নিবৃত্ত করার জন্য আমাদের নারীদের মত কালো বোরকা মাথায় দিলেও লজ্জা সহজে দুর হবেনা।
পরিশেষে বলি, বাংলাদেশের হিরো আলম এখন হ্যামিলনের বংশীবাদক। তিনি কথা বলা থেকে শুরু করে যা কিছু করেন না কেন সবাই দলে দলে তার পিছনে ছুটে যায়। মিডিয়ার সাংবাদিকরা এখন তার ঘুম যাওয়া, ঘুম থেকে ওঠা, প্রাতঃরাশ করা এমনকি তিনি লুঙ্গি পরেছেন না প্যান্ট পরেছেন সেসব খবরও রাখেন। মোদ্দা কথা হলো হিরো আলমের কথা আর কাজের সুর সেই হ্যামিলনের বংশীবাদকের অপূর্ব বাঁশির সুর যা সবাইকে সন্মোহন করে তার পিছনে ছুটে যেতে বাধ্য করে। তবে এখন হয়তো কারোর প্রেরণায় জনাব হিরো আলম হ্যামিলনের বংশীবাদকের মত সুলেলিত সুরে বাঁশি বাজাচ্ছে। কিন্তুু এমন একদিন আসবে যখন তিনি বুঝবেন যে তাকে ঠকানো হচ্ছে তখন তিনি যদি তার বাঁশিতে উল্টোসুর তুলে, তখন কি হবে ওদের?

( প্রিয় পাঠক, হ্যামিলনের বংশী বাদকের গল্প অনেক কলেবরের কারণে এখানে  বলতে পারিনি বলে দুঃখ প্রকাশ করছি। এ গল্পটি কারোর জানা না থাকলে দয়া করে গুগলের সাহায্য নিয়ে জেনে নিবেন।)

লেখক- – দীনময় রোয়াজা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ