• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন

ভোগ্য পণ্যের বাজার স্থিতিশীল হবে সিন্ডিকেট ভেঙে

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহুকাঙ্ক্ষিত কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের মানুষের নিত্যব্যবহার্য ভোগ্য পণ্য বেচাকেনা হবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) প্ল্যাটফরমে। এর ফলে দেশ-বিদেশের ক্রেতা ও বিক্রেতা ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সরাসরি পণ্য কেনাবেচার সুযোগ পাবেন। এতে পণ্যমূল্যে ভারসাম্য নিশ্চিত হবে। এ প্রক্রিয়ায় ফড়িয়াদের কারসাজি কিংবা সিন্ডিকেটের কারণে পণ্য উৎপাদনকারী বা কৃষকের কম দামে পণ্য বিক্রির বাধ্যবাধকতা থাকবে না। অন্যদিকে সিন্ডিকেট করে, বাজারে কৃত্রিম পণ্য সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করার সুযোগও কমে আসবে। যার ফলে নিয়ন্ত্রণমূলক ন্যায্য দামে পণ্য কেনাবেচার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জে ভোগ্য পণ্য শেয়ারবাজারের মতো প্ল্যাটফরমে বেচাকেনা হয়। কমোডিটি এক্সচেঞ্জে চালু শেয়ারের মতো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কেনাবেচা হবে সোনা, রুপা, তেল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, ধান, চাল প্রভৃতি নিত্যব্যবহার্য পণ্য। তবে সিএসইর অধীনে কমোডিটি মার্কেটের যাত্রা শুরু হবে গম, তুলা ও সোনা কেনাবেচার মাধ্যমে। ধীরে ধীরে এই মার্কেটে যোগ হবে অন্যান্য নিত্যপণ্য। জানতে চাইলে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই বাজারে যেহেতু পণ্য দেখে কেনাবেচার সুযোগ নেই, সেহেতু পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিতে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব। কমোডিটি এক্সচেঞ্জে পণ্য বেচাকেনার সার্বক্ষণিক শক্ত নজরদারি থাকবে। দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার এই বাজারে কোনোভাবেই মানহীন পণ্যের কেনাবেচা হবে না। ভোক্তা পর্যায়ে সঠিক মানের পণ্য সঠিক দামে দেব আমরা। এতে দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে।’  গোলাম ফারুক বলেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট প্রথা দুর্বল হয়ে যাবে। মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। পণ্য বেচাকেনা হবে সরাসরি কৃষক ও ক্রেতার মধ্যে। এই কমোডিটি মার্কেট অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে ও ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।
সূত্র জানায়, কমোডিটি মার্কেট চালু হওয়ার আগে ফসল তোলার অবকাঠামোর উন্নয়ন করছে সিএসই। পণ্যের মান নিশ্চিত করার স্বার্থে উপযুক্ত মানের ওয়্যারহাউস ও কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে কৃষককে আর পণ্য মজুদের মতো সমস্যায় ভুগতে হবে না। পণ্য নষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা না থাকায় বাজারে সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও বহুলাংশে কমে যাবে। জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ বিশ্বের প্রায় বেশির ভাগ দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বা পণ্য বিনিময় কেন্দ্র চালু আছে। আমাদের দেশেও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন মহল বলে আসছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা একটি স্বচ্ছ নীতিমালার অধীনে কমোডিটি মার্কেট চালু করতে যাচ্ছি। এর ফলে ভোগ্য পণ্যের ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হবেন। কৃত্রিম পণ্য সংকটের প্রথা উঠে যাবে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সিএসইকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের অনুমতি দিয়েছি। সিএসই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সেই সঙ্গে সিএসইকে কমোডিটি মার্কেটে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের বিশাল বাজার ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে এটি চালু করার আগে অবশ্যই পণ্য ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী হতে হবে। এটি করতে হবে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে। তাহলেই কমোডিটি মার্কেটের সুফল পাবেন দেশি-বিদেশি ক্রেতা ও পণ্য উৎপাদনকারীরা।’ তিনি বলেন, কমোডিটি মার্কেট স্বচ্ছতা রেখে চালু করা গেলে ভোগ্য পণ্যের সিন্ডিকেট দুর্বল হয়ে যাবে। বছরজুড়ে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত হবে। এখানে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পণ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন ও নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে সিএসইকে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ