• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

অবৈধ স্থাপনার জন্য ঝুঁকিতে ইলিশা রাজাপুর রক্ষা বাঁধ

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :

অবৈধ স্থাপনায় ইলিশা রাজাপুর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে।ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা এলাকায় ইলিশা রাজাপুর রক্ষা প্রকল্প তথা শহর রক্ষা বাঁধের ওপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনার কারণে ভোলার শহর রক্ষা বাধটি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় ইলিশা রাজাপুর রক্ষা বাঁধের উপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের আয় দিয়ে সরকার বিরোধী প্রচারণাও চালাচ্ছে নির্মাণকারীরা। উল্লেখ্য যে মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে ভোলা শহর রক্ষায় সদর উপজেলার ইলিশা লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত তীর সংরক্ষণ বাঁধ দখল করে সেখানে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।

 

এতে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইলিশা রাজাপুর তথা ভোলা শহর রক্ষা বাঁধের। স্থানীয়রা ইলিশা রাজাপুর রক্ষা বাঁধটি দ্রুত দখলমুক্ত করার দাবি জানায়।স্থানীয়দের অভিযোগ ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয় কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আঃ জাহেরের ভাতিজি জামাই জামায়াত নেতা মাওলানা মহসিন, নিজাম, পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি সিরাজ ফরাজী, নিজাম ভুলাই, আলাউদ্দিন ফরাজীসহ প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন দখলদার ইলিশা লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট এলাকায় এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এরা সবাই মূলত জামায়াত-বিএনপির ঘরানার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

 

এরা আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধী নানারকম ষড়যন্ত্র চক্রান্তের সাথে জড়িত। গত ২৮ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে জামায়াত বিএনপির আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তা করার জন্য ঢাকায় ব্যাপক সংখ্যক লোকজন নিয়েও এসেছিলেন। এরা এ সকল অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে সে আয় দিয়ে সরকার বিরোধী নানারকম ষড়যন্ত্র চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে, ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদেরকে কি কারনে এই সকল অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করার সুযোগ দিয়েছে এবং বার বার নোটিশ দিয়েও আজ পর্যন্ত তাদেরকে কেন উচ্ছেদ করছে না, এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইতিপূর্বে ২১ শে অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে “অবৈধ স্থাপনায় শহর রক্ষা বাধ ঝুঁকিতে” শিরোনামে জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়াও গত সেপ্টেম্বরে সিসিব্লক ধস নিয়ে ভোলার বিভিন্ন আঞ্চলিক, জাতীয় দৈনিক সহ একাধিক পত্রিকায় এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সিসিব্লক ধসের সংবাদটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল, এছাড়াও স্থানীয় সাংসদ, সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য জননেতা তোফায়েল আহমেদ ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে বলেছিলেন, তারপরও ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এ সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। জানা যায়, ২০১৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ ব্লক বাঁধ ও চার কিলোমিটার নদী সংরক্ষণ সিসি ব্লক বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০২১ সালে এটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এর পরই স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জায়গা দখল করে দোকান বানিয়ে ভাড়া দেওয়া শুরু হয়। ইলিশাঘাট ও বেড়িবাঁধ দখলমুক্ত করতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বাঁধটি দখলমুক্ত করা হয়।কিন্তু এক বছর না পেরোতেই আবারও সেখানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। ২০২২ সালে এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগ নেয় ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ ও মাইকিং করেও গত এক বছরে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যায়নি।

 

সম্প্রতি সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং মাসের শেষের দিকে বাঁধে ফাটল দেখা দিলে অক্টোবর মাসের ৫ তারিখের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে নতুন করে নোটিশ জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।তবে সেই তারিখ চলে গেলেও কোনো দোকান ও স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়নি।ইলিশা লঞ্চঘাট এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাঁধ ও বাঁধের বাইরের অংশে দক্ষিণে তালতলী লঞ্চঘাট থেকে শুরু করে উত্তরে-পশ্চিমে ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৯৫টি ছোট-বড় দোকান রয়েছে। কেউ কেউ নিজে দোকান তুলে ব্যবসা করলেও বেশির ভাগ দোকান স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় জামায়াত-বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেতৃবৃন্দরা দোকান তুলে ভাড়া দিচ্ছেন এবং সেই অর্থ দিয়ে সরকার বিরোধী নানারকম ষড়যন্ত্র চক্রান্তের সাথে লিপ্ত রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চায়ের দোকানি জানান, তিনি স্থানীয় মাওলানা মহসিনের কাছ থেকে দোকান ভাড়া নিয়ে তিন বছর ধরে ফেরিঘাট এলাকায় দোকান করে আসছেন। বাঁধের ওপরে ওই মালিকের আরো তিনটি দোকান রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই দোকানি। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে মাটি আলগা হয়ে পানি ঢুকে পড়ছে এবং সেই পানির স্রোতের কারণেই ব্লক ধসের মত দুর্ঘটনা ঘটছে।ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে,অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে এরই মধ্যে দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও অনেককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা নিজেরা এগুলো সরিয়ে না নিলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব অবৈধ স্থাপনা চলতি মাসের মধ্যেই ভেঙে দেওয়া হবে। তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন অবৈধ স্থাপনা রাখার কোন অধিকার তাদের নেই।
(বিস্তারিত আগামী পর্বে)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ