নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের উপাত্ত সুরক্ষা আইন (ডিপিএ) নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিগত বছরজুড়ে সংলাপ ও আলাপ-আলোচনার প্রশংসা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে আস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল খাতের সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিশ্চয়তা দিয়েছে উভয়পক্ষ।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ও ওয়াশিংটনের সপ্তম বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সংক্রান্ত পরিষদের বৈঠকে ডিপিএ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মার্কিন প্রতিনিধিদল।
ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস জানায়, ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে শ্রম সংস্কার নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশ ও ডিজিটাল বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে এমন নীতি, মেধা সম্পদের সুরক্ষা ও আইনের প্রয়োগ এবং কৃষি খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।
বৈঠকে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশের এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্রিস্টোফার উইলসন তার দেশের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানিয়েছে যে, শ্রমিকদের সংগঠন করার স্বাধীনতা ও যৌথ দর-কষাকষি করতে পারাসহ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করা বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদল শ্রমিক ও ইউনিয়ন সংগঠকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলায় ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি ইউনিয়ন-বিরোধী বৈষম্য ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অন্যান্য অন্যায্য চর্চা প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়েছে।
সভায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়, বর্তমানে একটি ত্রিপক্ষীয় শ্রম আইন পর্যালোচনা কমিটি বাংলাদেশ শ্রম আইনের সংশোধনগুলো পর্যালোচনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রমিকদের সংগঠন করার স্বাধীনতা ও যৌথ দর কষাকষি করতে পারার অধিকার সম্প্রসারণে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেছে।
বাংলাদেশে ইউনিয়ন নিবন্ধন করার সময় শ্রমিকদের যে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, তা মোকাবিলা করার জন্য নেওয়া কিছু প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে শ্রমিক ইউনিয়নের নিবন্ধন প্রক্রিয়া আইনি সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করতে, নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে সহজ ও নিরপেক্ষ করার ওপর যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়েছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে শ্রম পরিদর্শন এবং আইন প্রয়োগ কার্যক্রমে আরও বেশি সম্পদ বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের উপাত্ত সুরক্ষা আইনের নতুন খসড়ায় পূর্ববর্তী সংস্করণগুলোর উন্নতিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ফৌজদারি দণ্ড অপসারণ, ব্যক্তিগত উপাত্তের ক্ষেত্রে ডিপিএ প্রয়োগ সীমিত করা এবং আইনের প্রয়োগ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ব্যক্তিগত উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণে যুক্ত সংস্থাগুলোতে সীমিত রাখা।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলার ফিউমিগেশন বা বিষবাষ্পীকরণের মাধ্যমে পতঙ্গমুক্ত করার বাধ্যবাধকতা বাতিলের সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কৃষি ক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ক সংলাপে পরস্পরকে সহযোগিতা করেছে এবং এ বছরে এ খাতে আরও গভীরভাবে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করছে।
উভয় দেশই অর্থনীতিতে উদ্ভাবনমূলক মেধাস্বত্ব (আইপি) সুরক্ষা ও আইন প্রয়োগের গুরুত্ব স্বীকার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কপিরাইট আইন সংশোধন, শিল্প নকশা আইন, পেটেন্ট বিল এবং প্রবিধান ও আইপিআর প্রয়োগ (আমদানি ও রপ্তানি) বিধিসহ মেধাস্বত্ব সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালা সংশোধনের চলমান প্রক্রিয়াগুলোতে যুক্ত হওয়ার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর ইউএসটিআর-এর ২০২৩ এর স্পেশাল ৩০১ রিপোর্টে বিশ্বব্যাপী নকল তৈরি পোশাক রপ্তানির শীর্ষ পাঁচটি উৎসের তালিকায় বাংলাদেশের থাকা নিয়ে উদ্বেগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে।
উভয়পক্ষ আগামী বছর (২০২৪) ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী টিকফা কাউন্সিল মিটিংয়ের আগে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়ক সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।