সারাবিশ্ব ডেস্ক
সহপাঠীদের দিয়ে এক মুসলিম ছাত্রকে চড় মারান শিক্ষিকা ত্রীপ্তা তীয়াগি
ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফ্ফরনগরের একটি বেসরকারি স্কুলে এক মুসলিম ছাত্রকে সহপাঠীদের দ্বারা নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে।
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, সাত বছর বয়সী ওই ছাত্রটিকে অন্য শিক্ষার্থীদের এক এক করে চড় মারতে বলছেন শিক্ষিকা ত্রীপ্তা তিয়াগী। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকে এটিকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের সঙ্গে মিলিয়েছেন।
ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মুসলিম শিক্ষার্থীটি দাঁড়িয়ে আছে আর তার সহপাঠীরা একজন একজন করে গিয়ে তাকে চড় মারছে।
ভিডিওটিতে শিক্ষিকা তিয়াগীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বলে দিয়েছি, সব মুসলিম বাচ্চারা, অন্য কারো এলাকায় যাও।’
এক সহপাঠী ওই শিক্ষার্থীকে চড় মারার পর শিক্ষিকা তিয়াগী বলেন, ‘কেন তুমি তাকে এত আস্তে মারলে, জোরে মারো।’ এরপর তিনি বলেন, ‘এরপর কে মারবে।’
যখন শিশুটি কান্না করা শুরু করে তখন শিক্ষিকা তিয়াগী বলেন, ‘তাকে এখন কোমরে আঘাত করো… তার গাল লাল হয়ে গেছে, গালের বদলে কোমরে মারো।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। এরপর বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকা দাবি করেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ওই শিক্ষার্থী হোমওয়ার্ক না করায় অন্য শিক্ষার্থীদের দিয়ে তাকে চড় মারিয়েছেন। তিনি আরও দাবি করেছেন, তিনি শারীরিকভাবে অক্ষম। এ কারণে নিজে না মেরে ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীকে দিয়ে ওই ছাত্রকে শাসন করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘তার প্রতি কঠোর হতে তার বাবা-মায়ের কাছ থেকেও চাপ ছিল। আমি শারীরিকভাবে অক্ষম। তাই অন্য ছাত্রদের দিয়ে আমি তাকে চড় মারিয়েছি যেন সে তার হোমওয়ার্ক করে।’
এই শিক্ষিকা দাবি করেছেন, ভিডিওটি এডিট করা হয়েছে এবং বিষয়টিকে একটি সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া হয়েছে। ‘তার চাচাত ভাইও ক্লাসে উপস্থিত ছিল। ভিডিওটি তার ভাই-ই ধারণ করেছে এবং পরবর্তীতে বিকৃত করা হয়।’ দাবি করেন তিয়াগী।
তিনি বলেছেন, এমন কাণ্ড ঘটিয়ে তিনি ভুল করেছেন এ বিষয়টি স্বীকার করে নিচ্ছেন। কিন্তু এটিকে এত বড় করা হচ্ছে— যা ঠিক নয়।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, শিশুটির বাবা-মা প্রথমে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে রাজি হননি। কিন্তু শনিবার তার বাবা একটি এফআইআর দায়ের করেছেন।
ছাত্রটির বাবা জানিয়েছেন, তার ছেলেকে ওই শিক্ষিকা এক থেকে দুই ঘণ্টা নির্যাতন করেছে। এতে সে অনেক ভয় পেয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, নিজের ছেলেকে আর ওই স্কুলে পাঠাবেন না।
এদিকে এ ভিডিও নিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীসহ অনেক রাজনৈতিক নেতা টুইট করেছেন।