• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন

পাহাড়ে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছর, কৃষি, মৎস্য ও বানিজ্যিক সেক্টরে

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩

 দুর্যোগ কবলিত মানুষের পাশে থাকার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মিদের প্রতি এ নির্দেশ দেন তিঁনি। পার্বত্য লামা-আলীকদম উপজেলায় সপ্তাহকাল ধরে টানা বর্ষণ। ফলে পাহাড়ি ঢলে ঘোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় কোনো প্রাণহানীর খবর পাওয়া যায়নি। তবে ৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ৮টায় মাটির দেওয়াল চাপায় এক গৃহিনী প্রাণ হারিয়েছে। জানাযায়, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুমারী বাজারপাড়ায় আবুল হোসেনের স্ত্রী রান্না ঘরের মাটির দেয়াল চাপায় প্রান হারায়। এদিকে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় চার হাজার ঘরবাড়ি ৩৬ ঘন্টা কোথাও ৪৮ ঘন্টা পানি বন্দি ছিলো। ৬ আগস্ট দুপুর থেকে আকস্মিকভাবে পানি বৃদ্ধি পায়। সন্ধা থেকে জলে আটকেপড়া বাসিন্দাদের এক মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি কমতে থাকে। এর আগে শহরের কোথাও শুকনো স্থান ছিলোনা ৩৬ ঘন্টা ধরে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চেয়ারম্যানের নব নির্মিত বাস ভবন ব্যতিত সকল স্থাপনা ৫-১০ ফুট পানির নীচে ছিলো। শহরে প্রায় ৬ শ্ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ডুবে যায়। দোকানিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অর্ধশত কোটি টাকা হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। চারটি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে পানীয়জলসহ জরুরী খাদ্য সহায়তা দিয়ে চলছে উপজেলা প্রশাসন। সোমবার জলমগ্নতায় ৩৬ ঘন্টায় ১টি মাত্র নৌকা দিয়ে আটকা পড়াদের উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়েছিল গভীর রাত পর্যন্ত। ওই সময় নৌকা ও যোগাযোগ সংকট হেতু আটকাপড়াদের মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়। মঙ্গলবার সকাল থেকে অবশ্য পরিস্থিতে কিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠে। আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও দুর্যোগ কবলিত পরিবারের কাছে রান্না করা খাবার ও পানি পৌঁছানো হচ্ছে। ৯ আগস্ট সেনা বাহিনী আলীকদম জোনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্পেইনসহ বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। অন্যদিকে স্মরণকালের বন্যায় লামা খাদ্যগুদামে পানি ডুকে দেড় হাজার মে:টন খাদ্য শস্য নষ্ট হয়েছে। পুরোটাই পানির নীচে তলে যাওয়ায় কৃষি অফিসের সকল কম্পিউটার, ডকুমেন্টস নষ্ট হয়েগেছে বলে জানান, কৃষি অফিসার। পশুসম্পদ কার্যালয়ের ১ম তলা নিমজ্জিত হয়েছে। ডুবেছে লামা থানার ট্রাফিক কোয়াটার পুরাতন ভবন। এ এসপি’র বাড়া অফিসটিও পানি বন্দি হয়। পাবলিক হেল্থ, আনসার ভিডিপি অফিস, ভূমি অফিস, তথ্য অফিস, বিচারিক কার্যালয়েও কয়েক ফুট পানি হয়। প্রবীন লোকেরা জানান, বিগত শত বছরে তারা এ ধরনের বন্যার ভয়াবহতা দেখেনি। এখন পর্যন্ত বহু ঘর বাড়ি পানির নীচে। এই বিপর্যয় কেটে উঠতে সময় লাগবে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। শুরুতেই দুর্যোগকালীন পুরো পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন, বান্দরবানের সাংসদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুকনো ও রান্না করা খাবার নিয়ে পানি বন্দিদের ঘরে ঘরে যান পৌর মেয়র। উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগি ও সহযোগিদের মাঝে রান্না করা খাবার ও পানীয়জল বিতরণ করেন। এর আগে সোমবার থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার, জেলা পরিষদ সদস্য ফাতেমা পারুল, মন্ত্রীর প্রতিনিধি প্রদীপ কান্তি দাশ আশ্রয় কেন্দ্র, হাসপাতালসহ বিভিন্ন জরুরী সেবা সংস্থাগুলোকে খাবার ও পানীয়জল সরবরাহ করেন। সর্বশেষ পর্যবেক্ষনে দেখাযায়, মঙ্গলবার রাত ১০ টা পর্যন্ত বানিজ্যিক এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। বুধবার সকালে নীচু আবাসিক এলাকাগুলো থেকেও পানি সরে গিয়ে দৃশ্যমান হয় মাটি। খাবার পানি, স্যলাইন ওষুধসহ জরুরীভাবে পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এই বাস্তবতায় বুধবার বন্যার্তদের মাঝে ত্রান বিতরণসহ লামা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ করেন আলীকদম জোন। অপরদিকে বন্যা পরবর্তী শহর পরিস্কারের কাজে লেগে পড়েছেন পৌর মেয়র ও তার টিম। রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবীরা এই পরিস্কার কাজ করছেন। উপজেলা সদরে সব কয়জন বিসি আইসি ডিলারের গুদাম ডুবে শত শত টন সার নষ্ট হয়েগেছে। কৃষকের মাঠ ফসলের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মৎস্য সেক্টর। দুই শ্ এর বেশি মৎস্য পুকুর, খামার, জলাশয় জলমগ্ন ও বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমান প্রায় কোটি টাকা। অনেকগুলো পোল্ট্রি খামার পানির প্রবাহে ভেসে যায়। এ খাতেও কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েন খামারিরা। এছাড়া কয়েকটি গবাদি পশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লামা পৌর শহরে সদ্য স্থাপিত সততা পোল্ট্রির মালিক উদ্যােক্তা নুর মোহাম্মদ মিন্টুর বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ মৎস্য ও পোল্ট্রি ফুড কারখানার মেশিনারিজ সকল যন্ত্রপাতি পানি ডুবে নষ্ট হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটি সব মিলিয়ে অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পশুসম্পদ কার্যালয়ের ১ম তলা নিমজ্জিত হয়েছে। ডুবেছে লামা থানার ট্রাফিক কোয়াটার পুরাতন ভবন। এ এসপি’ ভাড়া অফিসটিও পানি বন্দি হয়। পাবলিক হেল্থ, আনসার বিডিপি অফিস, সমাজ সেবা অফিস, বিচারিক কার্যালয়সহ লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও ডুবেছে। বেশ কয়েকটি মাটির গুদাম ঘর ধ্বসে গেছে। ৪৮ ঘন্টা পানি বন্দি থাকায় সাধারণ আধাপাকা, গাছ বাঁশের বসত ঘর নষ্ট হয়েগেছে। রাস্তা ঘাট কালভার্টের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েকটি সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। লামা চকোরিয়া সড়কে ইয়াংছা বিকল্প সেতুর একাংশ ঢলে ভেসে যাওয়ায়, সরাসরি যান চলাচল ব্যহত। একইভাবে ক্ষতি সাধিত আলীকদম উপজেলায়ও। ৪৮ ঘন্টা লামা-আলীকদম সড়ক যোগাযোগ সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন ছিল। বুধবার সকাল থেকে যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ