• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪০ অপরাহ্ন

লামায় ৪০ বছর পূর্বের একটি নিরাপত্তা চৌকির ১২ একর জায়গা জবর দখলের পায়তারা

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

বিগত শতাব্দির ৮০’র দশকের শুরুতে পার্বত্যাঞ্চলে জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ওই ধারাবাহিকতায় লামা উপজেলার ফাইতং মৌজার বড় মুসলিমপাড়ায় একটি ছোট পাহাড়ের উপর পুলিশ ক্যাম্প স্থাপিত হয়। এর আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে পুলিশ অবস্থান নেয়। ওই সময় পুনর্বাসিত গ্রুপ লিডার সভাপতি সামচুল আলম (সাবেক ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান) বান্দরবান ডিসির কাছে পুলিশ ক্যাম্পটি ফাইতং হেডম্যান পাড়া উত্তর পাশে টিলায় নিয়ে যাবার জন্য আবেদন করেন। পরে ডিসি’র নির্দেশে ক্যাম্পটি ফাইতং হেডম্যান পাড়ার উত্তরে টিলার উপরে স্থাপিত হয়। ওই টিলার চুড়ায় ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পুলিশ ছিলো। এর পর সেখান থেকে পুলিশ সরে গেলে জায়গাটি বিভিন্ন জনের কাছে বেদখল হতে থাকে। ক্যাম্পের জায়গার অবস্থান হচ্ছে; হেডম্যানপাড়ার উত্তর প: উ: পাশে চলাচল সড়ক ঘেঁষে। এর পরিমান ১২ একর বলে জানাযায়। ১৯৮২ সালে সেটা পুলিশ ক্যাম্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। পরে ফাইতং পুলিশ ক্যম্পটি সেখান থেকে পশ্চিম দিকে সরে যায়। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সেখানে যৌথবাহিনী (শুরু থেকে ওই ক্যাম্পে আর্মি, বিজিবি ও পুলিশ) অবস্থান নেন। স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৪-৮৫ সালে জরিপ চলাকালেও সেখানে ক্যম্পটি ছিল বলে তৎসময় জরিপ দাগ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। বিগত সময়ে দখল বেদখল প্রশ্নে জানাযায়, সরকারি বাহিনীর অবস্থান হেতু ওই ১২ একর ৩য় শ্রেনির পাহাড় কর্তৃপক্ষ কাউকে বরাদ্দ দেয় নাই, খাস হিসেবে থেকে যায়। মাঠ খসড়ার দাগ নাম্বার ১৬৪৬/ ৫৭ শতক অংশ ক্যাম্পের চলাচল রাস্তা, দাগ নাম্বার ১৬৪৭/ টিলা অংশ ১০ একর ৯৫ শতক, দাগ নাম্বার ১৬৪৮/ নিছে পানি গর্ত কুয়ার অংশ ২৯ শতক। এই তিনটি দাগে মাঠ খসড়ায় এখনো ক্যাম্পের দখলীয় খাস হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। স্থানীয়রা আরো জানান, ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পের জায়গাটি জিয়াবুল (হাজী) নামের এক ব্যক্তি ভোগ দখল করেন। এর পর হাজী জিয়াবুলকে উচ্ছেদ করে দখল নেয় আবদুল জব্বার নামের একজন। সেখানে ক্যাম্প টিলার ঢালুতে প্রবেশ পথে যৌথ বাহিনীর একটি সাইন বোর্ড ছিলো। এর পাশে আমিনুল হক নামের এক প্রজা ছিল। সেখানে ক্যম্পের সাইন বোর্ড সরিয়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়, বটম বাবু নামের এক বড়ুয়া নাগরিক (যিনি এখন আর বেঁচে নেই)। ওই জায়গার একাংশে বসবাসকারী আমিনুল হক তার দখল বিক্রি করে দেন বলে জানাযায়। এদিকে হেডম্যান উম্রামং মার্মা ৫০৫ নং হোল্ডিং এর মালিক হ্লাথোয়াই অং মার্মার ১ নং চৌহদ্দির অংশ থেকে ১ম শ্রেণির ১ একর ও ৩য় শ্রেণির ১ একর, মোট দুই একর জমি ১৯৯৩ সালে ক্রয় সূত্রে মালিক হন। কিন্তু সরেজমিন হেডম্যানের দখলীয় জমিনের অবস্থান ও শ্রেণির ৫০৫ নং হোল্ডিংয়ের চৌহদ্দির সাথে অমিল। অপরদিকে আবদুল জব্বার নামের আরেক দখলদার দাবি করেন, ক্যাম্পের জায়গাটি তার নামীয় ৫৩ নং হোল্ডিংয়ের আন্দর ৫ একর ৩য় শ্রেনির পাহাড়। আব্দুল জব্বারের নামীয় আর/৫৩ নং হোল্ডিংয়ে ২টি চৌহদ্দি রয়েছে। ১ নং চৌহদ্দি হচ্ছে; উত্তরেদিকে পাহাড়, দক্ষিনদিকে ঝিরি, পূরবদিকে সিমু মগ ও পশ্চিমদিকে মতিয়র রহমান, এই বন্দে ৪ একর। ২ নং চৌহদ্দি হচ্ছে; উত্তরদিকে পাহাড়, দক্ষিনদিকে ঝিরি, পূর্বদিকে ঝিরি ও পশ্চিম দিকে পাহাড়, এই বন্দে এক একর। স্থানীয় কয়েকজন জানান, আবদুল জব্বার যে হোল্ডিং মূলে নিরাপত্তা ক্যাম্পের জমি দাবি করছেন; সেই আর/৫৩ নং হোল্ডিংয়ের বাস্তব অবস্থান ক্যাম্পের ভূমি থেকে আনুমানিক ২/৩ কি: মিটার দূরে অবস্থিত। অপরদিকে হেডম্যান যে ৫০৫ নং হোল্ডিংয়ের ১ম ও ৩য় শ্রেণির মোট ২ একর জমি ক্রয়সূত্রে মালিকানা লাভ করেছেন, সেই স্থানটিও ক্যাম্পের কাছাকাছি নয়। ২২ জুন এই প্রতিনিধি ক্যাম্পের স্থানটি সরেজমিন ঘুরে দেখি। সেখানে ১২ একর টিলার বিভিন্ন অংশ আরসিসি পিলার- তারকাটার ঘেরা দিয়ে দখলকারীরা নিজেদের মাঝে বন্টন করে নেয়। প্রচুর পরিমান গাছগাছালি রয়েছে। ক্যাম্প থাকাকালীন সময়ে যেসব গাছগাছালী ছিলো, সেগুলো এখন নেই। বড় বড় গাছের কিছু গোড়ালি রয়েছে। টিলার টপে যৌথবাহিনী অবস্থানের নানান নিদর্শন লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া টিলার দক্ষিনে নীচে সড়ক ঘেঁষে মৌজা হেডম্যান নিজের নামীয় ৫০৫ নং হোর্ডিংয়ের জমি দাবি করে। প্রায় এক হাজার ফুট লম্বা, পাশে গড়ে দেড় শ্ ফুট জায়গা নিজের দাবি করে সেখানে পাকা আধা পাকা তিনটি দোকান সেট করেছে। নির্মাণাধীন আরো একটি পাকা অবকাঠামো(যার কার্যক্রম যৌথ বাহিনী বন্ধ করে দেয়) দেখা গেছে। এর পাশে টিলার ঢালুতে একটি মোবাইল অপারেটর টাওয়ার বিদ্যমান। এছাড়া টিলার পশ্চিম উত্তরাংশে বেশ কয়েকটি কুড়ের ঘর করে কিছু পরিবার বসবাস করতেছেন সেখানে। ফাইতং ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ নিরাপত্তা ক্যাম্পটি পুনঃস্থাপনের জোর দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টির প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দিবেন, এমনটা প্রত্যাশা করেছেন স্থানীয়রা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ