—- ২৯৪ নং দরদরী মৌজাস্থ বর্তমান রুপসিপাড়া ইউনিয়নে প্রবেশ মুখের গ্রাম ইব্রাহীম লিডারপাড়া। এখানে প্রাচীনতম একটি সমাজ রয়েছে। সময় এখন আধুনিক হলেও অতিপুরাতন রীতি বদলাতে পারেনি সমাজের পঙ্কিলতাকে। এখানে স্বার্থের কাছে সকল নৈতিকতা পরাজিত। এমন একটি সমাজে কোনো নাগরিকের পক্ষে সুষ্ঠু জীবন যাপন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ঘোটা সমাজ যেখানে অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে, সরকারের সেবা সংস্থা (ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার) নিগুঢ় স্বার্থ দ্বন্ধে জড়িয়ে যায়। সেখানে কোনো ব্যক্তি ভূমি অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে না। আজকের পর্বে সমাজে জিঘাংসার শিকার শাহ আলমের উপর অবিচারের কাহিনী উপস্থাপন করা হলো। কোনো ব্যক্তি বিশেষের চরিত্রের সাথে মিলে গেলে প্রতিবেদক দায়ি নয়। কারণ এই লেখার স্বপক্ষে বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। ২৯৪ নং দরদরী মৌজার আরেকটি গ্রামের নাম ফইজ্জা খোলা। ওই গ্রামের বাসিন্দা ৭০৫ নং হোল্ডিং এর মালিক মরহুম কবির আহমদের ওয়ারিশ থেকে রুপসিপাড়া রুপনগরের বাসিন্দা মিনু আক্তার নামের এক নারী এক একর দ্বিতীয় শ্রেণীর জমি কিনেন। যার বায়নানামা দলিল নং ৭৮৮/ ২০১৫। দাতাগন হচ্ছেন মৃত কবির আহমদের ছেলে যথাক্রমে আ: ছালাম, নুরুল ইসলাম, নুরুল আলম, মেয়ে মরিয়ম বেগম ও ছেনোয়ারা বেগম। ৭০৫ নং হোল্ডিং এ ২ চৌহদ্দিতে তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণীর মোট তিন একর জমি রয়েছে মর্মে জমাবন্দিতে উল্লেখ আছে। কিন্তু মিনু আক্তার উক্ত হোল্ডিংয়ের আন্দর জমির এক একর বায়নানামা দলিলে ৭০৫ নং হোল্ডিংয়ের চৌহদ্দি উল্লেখ না করে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে একই মৌজাস্থ দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরত্বে ৩ নং ওয়ার্ড শামুকঝিরিস্থ গ্রামে স্থীত ২৮/২৯ নং হোল্ডিং এর ভাট্টা জমির চৌহদ্দি উল্লেখ করেন। মিথ্যা চৌহদ্দি দিয়ে করা বায়নানামাটি মিউটেশন চালু করেন। যার নং- মিউটেশন মামলা ৩৯৫/১৬। এই খবর পেয়ে ২৮/২৯ ভাট্টা জমির মালিকপক্ষ আপত্তি করলে, মিউটেশন মামলাটি লামা ভূমি অফিসে স্থগীত হয়ে যায়। এরপর ১/১২/২০১৮ সালে লামা থানাকে ব্যবহার করে গ্রাম্য সার্ভেয়ারদ্বারা রুপসিপাড়া ইউপির ২ নং ওয়ার্ডে ফইজ্জাখোলা গ্রামে স্থীত জমি ৩ নং ওয়ার্ড শামুকঝিরিস্থ মনগড়া বায়নানামার চৌহদ্দি প্রদর্শন করে, বিগত ১০/১২/২০১৮ সালে একটি পরিমাপের প্রতিবেদন দাখিল করেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বায়নানামায় উল্লেখিত মনগড়া চৌহদ্দির উপর ভিত্তি করে দেয়া ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে থানা ও কোর্টে শাহ আলমের বিরুদ্ধে একের পর এক বিভিন্ন মামলা আমলে নেন আদালত। যার ফলে শাহ আলম আইনদ্বারা ভিকটিমাইজ হতে থাকে। অন্যদিকে এর বিরুপ প্রভাব পড়তে থাকে স্থানীয় বাসিন্দা অন্যান্য প্রান্তিক কৃষকদের উপর। স্থানীয় সার্ভেয়ারদ্বারা পরিমাপের আগে বিগত ২৯/১১/২০১৮ তারিখে শাহ আলম বান্দরবান সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে অপর মামলা নং-১৪৪/২০১৮ রুজু করান। কিন্তু ওই মামলা রুজুর পর দিন থেকে এক মাসের জন্য আদালত ছুটি জনিত কারনে বন্ধ থাকায়, মামলার শুনানি সম্ভব হয়নি এবং ১৪৪ ধারা নোটিশ প্রদান করা যাইনি। এরপর যখন ৩/১২/২০১৮ তারিখে স্থানীয় সালিশি বোর্ড সার্ভেয়ার নিয়ে শাহ আলমের জমি জবর দখলের জন্য উপরোক্ত মিনু আক্তারের পক্ষে ভুল চৌহদ্দিমতে পরিমাপ করেন, তখন শাহ আলম বান্দরবান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি পিটিশন মামলা নং-১৫৫/১৮ রুজু করান। ওই মামলায় আদালত কর্তৃক দুই পক্ষকে বিরোধীয় ভূমিতে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার জন্য আদেশ করে নোটিশ দেন। মামলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা কানুনগো’র রিপোর্ট চায়লে, লামা দায়িত্বপ্রাপ্ত কানুনগো সার্ভেয়ার তনক চাকমা জবরদখলকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ২১-১-২০১৯ তারিখের অর্থাত পূর্বের স্থানীয় সার্ভেয়ারের করা হুবহু রিপোর্টটি লিখে আদালতে দাখিল করেন। তবে ওই রিপোর্টে জমির পরিমাণ উল্লেখ করেন, প্রায় ১ একর এবং বিরোধীয় জমির উত্তর দিকের অংশে শাহ আলমের দখল স্থিত দেখায়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, “বাদী শাহ আলম একটু উত্তরদিকে সরেগেলে প্রায় ১ একর জমি বিরোধমুক্ত হয়ে যাবে”। সার্ভেয়ারের রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয় ” বিবাদী মিনু আক্তার ৩০/৩৫ বছর ধরে ওই জমিতে ভোগ দখলে আছেন”(!)। বাস্তবতা হচ্ছে, বিবাদী মিনু আক্তার বিগত ১৪/১২/২০১৫ সালে জায়গা ক্রয় করে বায়নানামা দলিলে মনগড়া চৌহদ্দি উল্লেখ করায় উক্ত বিরোধের সূত্রপাত হয়। কিন্তু সরকারি সার্ভেয়ার কিভাবে তার প্রতিবেদনে ৩০/৩৫ ধরে ওই জমিতে মিনু আক্তারের দখল খোঁজে পেলেন(?) এমন প্রশ্নে সবাইকে বিস্ময়ে হতবাক করেছে। অপরদিকে সার্ভেয়ারের স্বার্থান্ধ রিপোর্টে ক্ষিপ্ত হয়ে অর্থাৎ বিরোধীয় ভূমির উত্তরদিকে শাহ আলমের জমি বলাতে, উত্তর অংশে জমির মালিক সিরাজউদ্দৌলা বিগত ১০/১/২০১৯ তারিখের ঘটনা দেখিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শাহ আলমসহ ৭০৫ নং হোল্ডিং এর মালিকদের বিরুদ্ধে পিটিশন মামলা দায়ের করেন। জেলা মেজিস্ট্টেট আদালতে সিরাজউদৌলার করা মামলায় লামা উপজেলা সার্ভেয়ারের রিপোর্ট চায়। আদালতের আদেশে বিগত ১৪/৫/২০১৯ তারিখে সার্ভেয়ার আরেকটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ” বিরোধীয় ভূমির উপরে উত্তরে সিরাজউদ্দৌলা তার নামীয় আর/২৮ ও আর/৩২ নং ভাসমান হোল্ডিং এর আন্দর ৬ একর জমিতে ভোগ দখলে স্থিত আছেন”। ওই প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেন “৭০৫ নং হোল্ডিং এর জমির মূল মালিক অত্র শামুকঝিরিতে স্থিত জমির বিরোধ মামলায় ১-৫ নং বিবাদীদের কোনো প্রকার দাবী দাওয়া নাই”। যেহেতু ৭০৫ নং হোল্ডিং এর বিরোধীয় ও শামুকঝিরিস্থ জমি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরত্বে পূর্বদিকে অবস্থিত ফইজ্জাখোলা নামক গ্রামে। সেহেতু মিনু আক্তার কোন মূলে ৭০৫ নং হোল্ডিংয়ের জমির বায়নানামা করে শামুকঝিরি গ্রামে দুই কিলোমিটার দূরে নদী পার হয়ে এসে শাহ আলমদের জমি দাবি করে যাচ্ছে(!) সেটা কারো জানা নেই। এর আগে বান্দরবান সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে শাহ আলমের বিরুদ্ধে ১টি পাল্টা অপর মামলা নং ১৪/১৯, তারিখ ১৪/১/২০১৯ দায়ের করেন। ওই মামলায় বাদী মিনু আক্তার ১৫/৯/২১ তারিখে আদালতে দেয়া তার জবানবন্দি ও জেরায় স্বীকার করেন যে, তার (মিনু আক্তার) ক্রয়কৃত জায়গা ফইজ্জাখোলা এলাকায়। সে জেরাতে আদালতে আরো বলেন, “আমার জমি খালের এক পাড়ে, বিবাদীদের (শাহ আলম) জমি খালের অপর পাড়ে”। মিনু আক্তার তার জবানিতে আরো বলেন “৭০৫ নং হোল্ডিং এর মূল মালিকপক্ষ ফইজ্জাখোলা গ্রামে সেই জমির উপর বাড়িঘরসহ সেখানে বসবাসে স্থিত আছেন”। এদিকে লামা উপজেলা কানুনগোর রিপোর্ট যাওয়ার পরে পিটিশন মামলা মিসসি আর মামলা নং ৩৬/১৯ হয়ে যায়। এরপর ৭০৫ নং হোল্ডিং এর মালিক পক্ষ মামলা থেকে অব্যাহতি পান। চলবে….