• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন

পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩

পারমাণবিক শক্তিচালিত পরের প্রজন্মের সাবমেরিনের একটি বহর তৈরির যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া, তার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে। আকুস এগ্রিমেন্ট নামের ওই চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া তিনটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে।

সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাবমেরিনের নতুন একটি বহন তৈরিতে কাজ করবে এই তিনটি দেশ। এই প্রযুক্তির মধ্যে থাকবে যুক্তরাজ্যের রোলস রয়েসের বানানো পারমাণবিক রিয়্যাক্টরও। তিন দেশের এই সমঝোতার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলা করা।

সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোতে ওই চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নেতারা। সেখানে বক্তব্য দেয়ার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এসব সাবমেরিনে পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না। সেই সাথে অস্ট্রেলিয়া পরমাণু অস্ত্র মুক্ত থাকার যে অঙ্গীকার করেছে, তারও কোনো বিচ্যুতি ঘটবে না।

সোমবার ঘোষণা করা ওই চুক্তি অনুযায়ী, রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনীর সদস্যরা এ বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নৌ-ঘাটিগুলোয় সাবমেরিনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ২০২৭ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ছোট একটি সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি করবে। ২০৩০ সাল নাগাদ ভার্জিনিয়া ক্লাস তিনটি আমেরিকান সাবমেরিন কিনবে অস্ট্রেলিয়া। তাদের জন্য আরো দুটি সাবমেরিন কেনার সুযোগ খোলা থাকবে।

এরপর থেকে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর জন্য পুরোপুরি নতুন ধরনের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরি করা হবে, যার নাম হবে এসএসএন-আকুস।

ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ায় এই আক্রমণকারী সাবমেরিনগুলো তৈরি করা হবে ব্রিটিশ নকশায়। তবে এগুলো তৈরিতে তিন দেশ থেকেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

বর্তমান অস্ট্রেলিয়ার যে সাবমেরিন বহর রয়েছে, তার তুলনায় নতুন সাবমেরিনগুলো দ্রুত ও অনেক দূর পথ চলাচল করতে পারবে। এসব সাবমেরিনে ভূমি ও সাগরে আঘাত হানতে সক্ষম ক্রুজ মিসাইল থাকবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, তিন দেশই চায় ওই এলাকা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

সোমবারের ওই ঘোষণা অনুযায়ী, ডুবোজাহাজ তৈরির সক্ষমতা বৃদ্ধির পেছনে আগামী কয়েক বছর ধরে ৪৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ভার্জিনিয়া ক্লাস সাবমেরিন উন্নতিতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানেজ বলেছেন, ডুবোজাহাজ তৈরির এই প্রকল্পের মাধ্যমে হাজার হাজার নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।

তিনি আরো বলেছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে গত ৬৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার আর ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক প্রযুক্তি অন্য কোনো দেশের সাথে বিনিময় করছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, যখন ১৮ মাস আগে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, তখন থেকে সারা বিশ্বে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।

তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে অবৈধভাবে আগ্রাসন চালিয়েছে রাশিয়া, চীনের গোঁড়ামি, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার অস্থিতিশীল আচরণ- এসব বিশৃঙ্খলা ও বিভাজন সারা বিশ্বের জন্যই হুমকি।

ঋষি সুনাক আরো বলেছেন, আগামী দু’বছর প্রতিরক্ষা খাতে আরো প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বাড়াবে যুক্তরাজ্য।

তবে এই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে চীন। গত সপ্তাহে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেছেন, এই চুক্তির ফলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে।

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরে পাশ্চাত্যের দেশগুলো সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে কিনা, এমন উদ্বেগের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, সেখানে নেটোর মতো কোনো জোট তৈরির ইচ্ছা নেই যুক্তরাষ্ট্রের।

সিডনিতে বিবিসির সংবাদদাতা ফিল মার্সের বলছেন, এই চুক্তির ফলে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সাথে অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page