• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৭ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাকারবারির রুট বন্ধ করেছি: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪

বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাকারবারির রুট বন্ধ করেছেন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারে এসে সেভেন সিস্টারে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উলফাসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের কাছে অস্ত্র চোরাচালানের যে রুট তা বন্ধ করেছি। সেভেন সিস্টারে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগই কিন্তু এ ব্যবস্থা নিয়েছে, এটা সব থেকে বড় কাজ।

শনিবার (২৫ মে) সকালে রাজধানীর বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতানসহ দক্ষিণ সিটির চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বঙ্গবাজারে আয়োজিত সুধী সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

চার প্রকল্প হলো- বঙ্গবাজারে ‘বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতান’, পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট পর্যন্ত আট লেনের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণি (ইনার সার্কুলার রিং রোড)’, ধানমন্ডি হ্রদে ‘নজরুল সরোবর’ এবং শাহবাগে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান’ আধুনিকীকরণ।

পুরান ঢাকার এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার জলাধার সংরক্ষণ, পার্কগুলোর যত্ন নেওয়া এবং শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে ল্যান্ড বাউন্ডারি (ছিটমহল) সেটা বিনিময় করে সারাবিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করেছি। যারা আগে ক্ষমতা ছিল তারা (বিএনপি) তো এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। জানতোই না।

বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশটাকে তারা কোথায় নিয়ে গিয়েছিল, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অস্ত্র চোরাকারবারি। তারেক জিয়া তো অস্ত্র চোরাকারবারের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সে ওখানে লন্ডনে বসে নানাভাবে অগ্নিসন্ত্রাস দিয়ে মানুষ মারা, খুন করা, আগুন দিয়ে পড়ানো এসব কাজ করে বেড়ায়।

সরকারের টানা তিন মেয়াদের বিভিন্ন উন্নয়ন এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে সেভাবে আমরা এগিয়ে যাবো।

যত্রতত্র পশু জবাই নয়
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নাগরিকদের সহযোগিতা চেয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আপনাদের সহযোগিতা দরকার। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা, নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা। সিটি কর্পোরেশনকে বলবো, নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ময়লা নিয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে, যাতে শহরটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। সামনে কুরবানির ঈদ আসবে, আপনাদের অনুরোধ, যেখানে সেখানে কুরবানি দেবেন না। তাতে জায়গা নষ্ট হয়, আবর্জনা হয়। সেক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন নয়, সারা বাংলাদেশের জন্য আমার নির্দেশনা রয়েছে, প্রত্যেক জায়গায় আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ব্যবস্থা রাখতে হবে। যার যার পশু নিয়ে যাবে, তার একটা নম্বর থাকবে, সেটা কাটা হলে পরিষ্কার করে তার কাছে পৌঁছে দেবে বা নিয়ে যাবে। একটা জবাই করা পশুর রক্ত, চামড়া, হাড়, সবই কিন্তু কাজে লাগে। যেখানে সেখানে এই কার্যক্রম না করতে আমি অনুরোধ করবো।

জলাধার নষ্ট করে দালান কোঠা করা যাবে না
প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের আর্কিটেক্টদের একটা খামখেয়ালিপনা আছে। পুকুর দেখলেই একটা দালান করার প্রবণতা আছে তাদের। অথচ এই ঢাকা শহর পুকুর-খালে ভরপুর ছিল। বেশিরভাগ খাল বন্ধ, নয় বন্ধ করে দালান কোঠা করা হয়েছে। পুকুরগুলো বন্ধ। খালগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। দয়া করে যেখানেই পরিকল্পনা নেন, জলাধার সংরক্ষণ করবেন। জলাধার সংরক্ষণ করলে বাতাসও পরিচ্ছন্ন থাকে, এত গরম হয় না। সেদিকে বিশেষভাবে সবাইকে নজর দিতে হবে। জায়গা পেলেই যেখানে সেখানে পরিকল্পনা ছাড়া নির্মাণ কাজ করা যাবে না।

পার্ক সংরক্ষণে জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগী হতে হবে
পার্ক সংস্কারে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন পার্কগুলো করা হয় খুব সুন্দর থাকে। কিছুদিন পর দেখা যায়, পার্কে বাচ্চাদের খেলার জিনিস নষ্ট, ময়লা আবর্জনা, আড্ডাখানা অথবা মাদক সেবনের জায়গা হয়ে যায়। এখানে আমাদের ওয়ার্ড কমিশনার, সিটি করপোরেশন ও স্থানীয়রা সবাই আছেন। আপনারা আপনাদের যার যার এলাকা, অবশ্যই আপনাদের দেখতে হবে। পার্কগুলো যেন যথেচ্ছ ব্যবহার না হয়, মাদক সেবনের জায়গা না হয়। এই জায়গাগুলো যেন নষ্ট না হয়। যার যার ওয়ার্ডের সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিচ্ছন্নতা কিন্তু আপনাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে, জনগণ ভোট দিয়ে আপনাদের নির্বাচিত করেছে। এই কাজগুলো করার দায়িত্ব আপনাদেরই। সেক্ষেত্রে সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা আপনারা পাবেন।

পরিবেশ সংরক্ষণে গাছ লাগানোর অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর
পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে গাছ লাগানোর অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ছাদে, বারান্দায় বা বাসার সামনে ফুলের বা ফলের গাছ লাগান। যাদের গ্রামের বাড়ি আছে, তারা সেখানেও গাছ লাগান। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে এটা খুব প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পুরান ঢাকার সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক রয়েছে। বাবাকে গ্রেফতারের পর আমরা দীর্ঘদিন নাজিরাবাজার প্রয়াত মেয়র হানিফের বাড়িতে ছিলাম। পরে বন্যা হলে সেখানে থেকে আরমানিটোলার বাঘওয়ালা বাড়িতে ছিলাম। আমার ছোটবোন রেহানার জন্ম কিন্তু মিটফোর্ড হাসপাতালে। সে কিন্তু পুরান ঢাকার লোক। কাজেই পুরান ঢাকার সঙ্গে আমাদের আলাদা একটা নাড়ির টান আছে। পুরান ঢাকার মানুষ ভালো থাকুক, সেটাই আমার লক্ষ্য। সেই চিন্তা করেই জনগণ যাতে সেবা যথাযথভাবে পায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুভাগে ভাগ করি। যেগুলো ইউনিয়ন ছিল, সেগুলোকেও সিটি করপোরেশনের আওতায় আনা হয়েছে, সেখানেও উন্নয়নের নানা প্রকল্প নিয়েছি। বাস্তবায়ন হচ্ছে।

শুধু বড়লোকরা নয়, বস্তিবাসীও ফ্ল্যাটে থাকবে
তিনি বলেন, ঢাকা সিটির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ফ্ল্যাট বানিয়ে দিচ্ছি। তাদের সম্মানজনক পদবীর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। শুধু বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে, তা কিন্তু হবে না। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিনমজুর সবার জন্য ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। যে বস্তিতে যে ভাড়ায় থাকে, সেরকমই ভাড়া দেবে। স্বল্প ভাড়ায় ফ্ল্যাট দিচ্ছি। কেউ সপ্তাহে এবং মাসে ভাড়া দিতে পারবে। বস্তি বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেউ থাকবে না। সবার জন্য সুন্দর স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেউ গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না। সবাইকে ২ শতক জমি ও ঘর করে দিচ্ছি।

বঙ্গবাজারের আগুনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিন যে জায়গাটা আগুনে পুড়ে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল, আজকে তাদর পুনর্বাসনের জন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামরে সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহীম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ