প্রিয় জনের সাথে ঈদ করতে আগামী সপ্তাহ থেকে শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে শুরু করবে বেশীর ভাগ মানুষ। তবে এবার ঈদে লঞ্চ যাত্রীরা কালবৈশাখী এবং বজ্রপাতের কারণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারেন। চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে ওঠার জন্য, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং বিপদজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে সমস্ত ধরণের জাহাজকে নিষ্ঠার সাথে নির্দেশাবলী অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, ঈদের যাত্রায় কালবৈশাখী ঝড় আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই যাত্রী পরিবহন করতে হবে। আমরা লঞ্চ মালিকদের যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি। জাহাজে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট এবং বয় রাখতে বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ঝড় হলে সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটিকে যেকোনো জায়গায় নোঙর করতে হবে। এছাড়া লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ বিষয়টি তদারকি করবে। আশা করি নৌপথে ঈদ যাত্রা ভালো হবে। তবে যাত্রী ও চালকদের সচেতনতার অভাবে প্রায়ই কিছু কিছু ক্ষেত্রে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে অনেক সময় যথাযথ নির্দেশনা দিয়েও দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। সুতরাং, সচেতনতা সৃষ্টিই একমাত্র উত্তম উপায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা প্রতি ছয় ঘণ্টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা উচিত। একইসঙ্গে তারা নৌযানগুলোকে আবহাওয়া সংকেত মেনে কাজ করার জন্য অনুরোধ করেছে। ঈদ ভ্রমণ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঈদের আগের পাঁচ দিন ও পরের পাঁচ দিন রাজধানীর সদরঘাটে যাত্রীবাহী নৌকায় সব ধরনের পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে। নির্দিষ্ট ভাড়ায় ঈদের ছুটিতে লঞ্চে মোটরসাইকেল পরিবহন করা যাবে। রাতে নৌপথে স্পিডবোট চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া ৩-১৭ এপ্রিল সব ধরনের বালু বহনকারী বাল্কহেড সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে। এছাড়াও, ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানে জরুরী এবং পচনশীল পণ্য বহনকারী ব্যতীত – ঈদের তিন দিন আগে এবং তিন দিন ফেরিতে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। যাত্রী সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। যাত্রীদের ভিড় না থাকায় সারা বছরই সদরঘাটে আর ভিড় থাকে না। যে লঞ্চ শ্রমিকরা আগে ব্যস্ত দিন পার করত তাদের অনেকেই এখন বেকার। ঈদেও যাত্রী খুব বেশি বাড়বে না বলে আশঙ্কা করছেন লঞ্চ মালিকরা। ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে প্রায় ২২০টি লঞ্চের তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে ৯০টি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করত। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বর্তমানে এ সংখ্যা ৩৭-৪০ থেকে নেমে এসেছে। এ ছাড়া যাত্রীর অভাবে ১০টি নৌপথ সম্পূর্ণ ও ২৫টি নৌপথ আংশিকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
কালবৈশাখী ঝড় আসলে কী? এটি কেন হয়?
আবহাওয়াবিদরা জানান বঙ্গোপসাগর থেকে গরম বাতাস বয়ে যায় উত্তর দিকে আর হিমালয় থেকে ঠাণ্ডা বাতাস আসে দক্ষিণে। এই ঠাণ্ডা ও গরম বাতাসের মিলনস্থলে বজ্রসহ ঘনকালো মেঘ তৈরি হয়। সেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস নিচে নেমে এসে কালবৈশাখী ঝড়ের সৃষ্টি করে। সাধারণত চৈত্র মাসের শেষে এবং বৈশাখ মাসে সূর্য বাংলাদেশ ও তার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের ওপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়। ফলে এ অঞ্চলের বাতাস সকাল থেকে দুপুরের রোদের তাপে হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। এভাবে বিকালের দিকে এ অঞ্চলে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এ সময় দেশের উত্তরে এবং হিমালয়ের দিকে বাতাসের চাপ বেশি থাকে। তাই উচ্চ চাপের উত্তরাঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে দক্ষিণ দিকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হওয়ার ফলে মুখোমুখি স্থানে যে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি হয় সেটিই বাংলাদেশে কালবৈশাখী নামে পরিচিত। বাংলাদেশের বই পুস্তকে কালবৈশাখী ঝড় সম্পর্কে আরও যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে তা অনেকটা এমন: এই। কালবৈশাখী মূলত এক ধরনের স্থানীয় বৃষ্টিপাত ও বজ্রঝড়। বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চলে সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসে অর্থাৎ বৈশাখ মাসে এই বজ্রঝড় বেশী হতে দেখা যায়। কালবৈশাখী ঝড়ের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ গতিবেগ ঘণ্টায় একশ কিলোমিটারের বেশিও হতে পারে। এই ঝড়ের স্থায়িত্বকাল খুব বেশি হয় না। তবে কখনো কখনো এ ঝড় এক ঘণ্টারও বেশি স্থায়ী হতে দেখা গেছে। কিন্তু কালবৈশাখী ঝড় একেবারেই হঠাৎ করে ধেয়ে আসে না। ঈশান কোণে জমা হওয়া কালোমেঘ এ ঝড়ের আভাস দেয়।