লামায় এক ইউপি সদস্যের প্রতারণার ফাঁদে আটকে পড়া কৃষকের কান্না। সহজসরল কৃষকের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করে চলছে ইউপি সদস্য। পাওনা টাকা আদায়ে সামাজিক বিচার না পেয়ে ওই কৃষক দু’দফে আদালতে মামলা করেছেন। ঘটনাটি লামা উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের বৈইল্লার চর গ্রামের। অনুসন্ধানে জানাযায়, কৃষক মোঃ সোহরাব হোসেন এর সাথে সে গ্রামে বসবাসকারি আব্দুল হাশেম (৬ নং ইউপি সদস্য) এর সাথে বিগত কয়েক বছর ধরে সখ্যতা গড়ে উঠে। আবদুল হাশেম মেম্বারের স্থায়ী ঠিকানা, বিবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা পাশ কোমইল ইউনিয়ন বামন গাঁও গ্রাম বলে জানাযায়। আত্মীয়তার সুবাধে লামায় বসবাস করে জনপ্রতিনিধিও হন সে। বিগত কয়েক বছর আগে থেকে স্থানীয় কৃষক সোহরাব হোসেনের সাথে তার ভাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দু’জনেই একই এলাকায় মৌসুমে তামাকপাতার চাষ ও ব্যবসা করে। বিগত ৫/৬ বছর আগে আবদুল হাশেম তাকাম চাষ মৌসুমে আর্থিক সংকটে পড়ে। ওই সময় হাশেম সতেরশো কেজি ১নং তামাক পাতা প্রতি কেজি মূল্য একশ্ ষাট টাকা হারে, সোহরাব হোসেন থেকে দুই লক্ষ বাহাত্তর হাজার টাকা নগদ বুঝে নেন। কিন্তু সৃজন শেষে চতুর হাশেম, সোহরাবকে না জানিয়ে সমস্ত তামাকপাতা অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। এর কিছুদিন পর হাশেম মেম্বার, তার মেয়ের বিবাহের জন্য হাওলাত হিসাবে আরো এক লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা, দফে আরো দুই লাখ টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে মোট ৬ লাখ টাকা সোহরাব থেকে হাওলাত নেয় বলে সোহরাব হোসেন দাবি করেন। ২০২০ সালে সোহরাব পাওনা টাকা চায়তে গেলে, তাদের সৌহার্দপূর্ণতায় চীর ধরে। পাওনা টাকা আদায়ের জন্য সামাজিক বিচার প্রার্থি হন সোহরাব। গ্রাম্য বিচারে হাশেম মেম্বার টাকা নেয়ার বিষয় বিস্তারিত শিকার করে পরিশোধের লিখিত অঙ্গীকারও করেন। পাওনা টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে ২০২১ সালে সোহরাব হোসেন কোর্টে মামলা করেন। এতে বিচলিত হয়ে হাশেম মেম্বার হাতকড়া লাগার ভয়ে নতুন কৌশল আঁটতে থাকে। সে স্থানীয় গন্যমান্যদের মাধ্যমে কর্জের টাকা পাওনাদার সোহরাব হোসেনকে ফেরত দেয়ার সঙ্কল্পে আশ্বস্ত করেন। এর পর আপোষের শর্তে কোর্ট তাকে অন্তবর্তীকালীন জামিনে মুক্তি দেন। অনুসন্ধানে জানাযায়, জামিনে মুক্তি লাভের পর ধূর্ত হাশেম সোহরাব হোসেনকে পূনরায় বশে এনে স্থানীয় গণ্যমান্যদের মধ্যস্থতায় সর্বসাকুল্যে চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ২০২৩ সালের, ১৫ই বৈশাখ/১৪৩০ বাংলা তারিখের মধ্যে এককালীন পরিশোধ করবে মর্মে তিন শ্ টাকার নন জুডিসিয়ান স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র’ দলিল দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করিয়ে নেয়। কিন্তু চুক্তির মেয়াদের মধ্যে হাশেম মেম্বার সোহরাবকে পাওনা অর্থের কানাকড়িও দেন নাই। পওনাদার সোহরাব হোসেন জানান, ‘পাওনাকৃত টাকা চাইলে আবদুল হাশেম পূর্বের ন্যায় প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের আশ্রয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কাল নয় পরশু দিবে বলে অযথা কালক্ষেপন করে ঘুরাইতে থাকে’। জানাযায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ, বিকালে বৈল্লারচর বাজারে পাওনা টাকা চায়লে হাশেম মেম্বার সোহরাবকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ, মারধরের হুমকি প্রদানসহ কোন টাকা দিবেনা বলে ছাফ জবাব দেয়। ‘পাওনা টাকা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে বা টাকা চায়লে; প্রয়োজনে প্রাণ নাশসহ মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করবো’। আবদুল হাশেম মেম্বার সোহরাব হোসেনকে, প্রকাশ্যে এসব ভাষায় হুমকি দেয় বলে সোহরাব এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছে। ২ অক্টোবর সোমবার দুপুরে এই অনুসন্ধানকালে বৈল্লারচর বাজার ও আশপাশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানাযায়, আবদুল হাশেম মেম্বার সোহরাব হোসেনের কাছে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণী রয়েছে। তাদের দু’জন খয়েরখাঁ ছিলো। স্থানীয়রা জানান, আবদুল হাশেম মেম্বার টাকা দেনা আছে সত্য, কিন্তু সে আর্থিক অস্বচ্ছল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছে যে, ৬ নং ওয়ার্ডের আব্দুল হাশেম মেম্বার যে কোনো সময়ে এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিতে পারে, কারন সে অনেক ধারকর্জ করে রাস্তা ঘাটে চলতে হিমসিম খাচ্ছে । হাশেম মেম্বার তার পূর্বতম ঠিকানা বামন বাড়িয়া জেলায় জমি বিক্রি করে বিদেশে ফাড়ি জমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। এ ব্যপারে ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার সাগর এর সাথে কথা হয়। সাগর জানান, “১ম বার সোহরাব যখন মামলা করেছিলেন তখন হাশেমকে জামিনে মুক্ত করতে গিয়ে কিছু বিষয় অবগত আছি আমরা। প্রতি বৈশাখের ১৫ তারিখে ৫০ হাজার টাকা করে পরিশোধ করার শর্তে আমরা আমরা হাশেম মেম্বারকে সোহরাবের মামলায় জামিন ও মামলাটি নিস্পত্তি করে দিই। কিন্তু চলতি বৈশাখ মাসে তার কাছে টাকা চায়লে সে সোহরাবের সাথে ঝগড়া করেন বলে শুনেছি”। সাগর মেম্বার আরো বলেন, “কিছুদিন আগে হাশেম মেম্বার আমার কাছে এসে জানায়, সোহরাব টাকার জন্য আবারো কোর্টে মামলা করতে যাচ্ছে। হাশেম মেম্বার অনুরোধ করে আমাকে বলেন, ‘আগামী মৌসুম থেকে সোহরাবকে তিন শ্ কেজি করে তামাকপাতা দিব, একটু মামলাটা না করার জন্য বলেন’। ওই সময় তাকে আমি বলেছিলাম, তুমি নগদ বিশ হাজার টাকা নিয়ে এসো, আমরা প্রাথমিকভাবে এই টাকা জমা করে সোহরাবের সাথে কথা বলে আরেকবার সুযোগ নিয়ে দিব’। কিন্তু হাশেম মেম্বার আর আমার কাছে আসেন নাই। অপরদিকে পাওনাদার সোহরাব হোসেন আবারো কোর্টে মামলা করেছে বলে শুনেছি। এ ব্যপারে লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, হাশেম মেম্বার সোহরাব হোসেনকে টাকা দেনা আছে শুনেছি। তবে এতদবিষয়ে কোনো অভিযোগ পরিষদে আসে নাই। এদিকে আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার পর ঘটনার তদন্ত থানাকে দেয়া হয়। সোহরাব হোসেন এই ঘটনার বস্তু নিষ্ঠ তদন্ত দাবি করেন। এ ব্যপারে জানতে আবদুল হাশেম মেম্বারকে তার মুঠোফোন করা হলে, সে সোহরাবের সাথে লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করে।