• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন

নস্ট হচ্ছে পরিবেশ, হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় মাছ, কমছে ফসলি জমির উৎপাদন : নদী দূষণ

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩

জাকির হোসেন সিরাজী,

রাজধানী ঢাকার উত্তর-র্পূব এলাকা দিয়ে বয়ে চলা বালু নদী। শতবর্ষ ধরে বয়ে চলা এ নদীর রয়েছে ইতিহাস, রয়েছে ঐতিহ্য, রয়েছে নিজস্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ।

নদীটির র্দৈঘ্য ৪৪ (চুয়াল্লিশ) কিলোমিটার এবং গড় প্রস্ত ৭৯ (ঊনআশি) মিটার, নদীটি গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি নদী। এই নদী বেলাইবিল ও ঢাকার উত্তর পূর্ব বিস্তীর্ণ জলাভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডেমরার কাছে শীতলক্ষ্যা নদীতে গিয়ে মিশেছে।

শীতলক্ষ্যার সাথে কাপাসিয়ার কাছে সুতি নদীর মাধ্যমে এর যোগাযোগ ছাড়াও টঙ্গী খালের মাধ্যমে তুরাগ নদীতে এসে মিলিত হয়েছে।

বর্ষা মৌসুমে বালু নদী শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদীর পানি বহন করে বয়ে চলে। শুধুমাত্র বর্ষাকালেই এ নদী তার যৌবন ফিরে পায় এবং বুকভরা জল নিয়ে ছুটে চলে দূর থেকে বহুদূরে অজানা গন্তব্যে।

অতিবৃষ্টি ও ভারিবৃষ্টির ফলে রাজধানী ঢাকার ভিতরে জমে যাওয়া পানি নিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বালুনদীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ নদীতে এক সময় প্রচুর পরিমানে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত।এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা রজব আলী বলেন, ১৫-২০ বছর আগেও এই নদীতে নৌকায় কইরা সারাবছর মাছ ধরছি। এই নদীতে আমরা গোসলও করতাম। এই নদীর মাছ আমরা ধইরা খাইতাম, বেচতাম, বিভিন্ন এলাকা থাইক্কা মানুষ আইয়া মাছ কিন্না লইয়া যাইতো, খুবই মজার আছিলো এই নদীর মাছ। নদীর পানি কালা হইয়া গেছে।এখন আর নদীতে মাছ নাই।

বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় খলাপাড়া বাজারের ময়লা-আবর্জনা, গরু, ছাগলের মল-মূএ, মাছের খোসা, জবাইকৃত মুরগীর উচ্ছিষ্ট ও বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজির উচ্ছিষ্ট, কাঁচামাল বেচা-কেনার ময়লা, দূষিত বর্জ্য এবং গৃহস্থালি সকল ময়লা-আবর্জনা অবাদে ফেলা হচ্ছে নদীতে।এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে একদিকে যেমন নদীর পানি দূষিত হচ্ছে অন্যদিকে মারা যাচ্ছে মাছ। নস্ট হচ্ছে কৃষি জমি। কমছে জমির ফসল উৎপাদন। যেখানে সেখানে ফেলে রাখা এসব পচা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত দুর্গন্ধ, যা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়। সেই সাথে এই বিষাক্ত ময়লা-আবর্জনা পানিতে মিশে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক রোগ-ব্যাধি। দূষিত পানি খাবার কিংবা গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারে ফলে পাতলা পায়খানা, বমি, জ্বর ও পেটব্যথা, ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস এমনকি ক্যান্সার সহ মারাত্মক পানিবাহিত রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইনে বলা হয়েছে, নদী দখল ও দূষণের অপরাধে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড উভয় আইনের বিধান রয়েছে।

নদী দূষণ: খলাপাড়া বাজার, ডেমরা। নদীতে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা, নস্ট হচ্ছে পরিবেশ।

খলাপাড়া বাজার, ডেমরা, ঢাকা। চিত্রগ্রহণ: জাকির হোসেন সিরাজী

এদিকে একই চিএ দেখা গিয়েছে, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা বনশ্রীর মেরাদিয়া হাটে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, অতি প্রাচীন কাল থেকেই শতবর্ষ ধরে চলে আসছে এই হাট। প্রতি বুধবার এখানে হাট বসে। উচ্চারণের আঞ্চলিকতায় অনেকে বলেন ‘মেরাইদ্দা হাট’। এটি সাপ্তাহিক হাট হওয়ার কারনে প্রতি বুধবার ভোর থেকেই রাজধানীর

আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাটুরের দল নৌকায় করে নানান জিনিস পএ নিয়ে নড়াই নদের (রামপুরা খাল) পাড়ে হাজির হন।

হাটবারের দিন বিক্রেতারা সুদূর ফকিরখালী, ডেমরা, বাড্ডা, বেরাইদ, ইছাপুরা, রূপগঞ্জ, চনপাড়া, ভুলতা, গাউসিয়া, মুন্সিগঞ্জ থেকেও হাট করতে আসেন। এ ছাড়া নাসিরাবাদ, রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁওয়ের, গোড়ান, বাসাবো, মাদারটেক, নন্দীপাড়া, আশপাশের এলাকা থেকে তো আসেনই। শাক-সবজি, খাবারদাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপএ, গরু, ছাগল, হাস-মুরগি সবই পাওয়া যায় এই হাটে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই হাটের খালের পাড় ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা ও অপরিকল্পিত দোকানপাট। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নদীতেই ফেলা হচ্ছে হাটের সকল ময়লা-আবর্জনা, গরু, ছাগলের মল-মূএ, জবাইকৃত মুরগীর উচ্ছিষ্ট, পচে যাওয়া শাক-সবজির উচ্ছিষ্ট, কাঁচামাল বেচা-কেনার শেষে ময়লা এবং গৃহস্থালী দূষিত বর্জ্য।এসব ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত দুর্গন্ধ এবং বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো আফতাব নগর ও বনশ্রী আবাসিক এলাকায়।

নদী দূষণ: বনশ্রী, মেরাদিয়া হাট। নদীতে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা, নস্ট হচ্ছে পরিবেশ।

বনশ্রী, মেরাদিয়া হাট, রামপুরা, ঢাকা। চিত্রগ্রহণ: জাকির হোসেন সিরাজী

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিন যত যাচ্ছে, খালে ময়লা ফেলার পরিমাণও বাড়ছে। নৌকায় আশপাশের এলাকা থেকে মেরাদিয়া হাটে ফলমূল ও শাকসবজি নিয়ে পাইকারি বিক্রেতারা আসেন। তাঁরাও অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাওয়া তরিতরকারি খালেই ফেলেন। পাশেই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার কনটেইনার থাকলেও ময়লাগুলো যেখানে সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, প্রতি বুধবার হাটে আসলে কিংবা এপথ দিয়ে আসা-যাওয়া করার সময় প্রচন্ড দুর্গন্ধ ছড়ায়। দুর্গন্ধের কারণে নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হয়। খালের পানি কালো হয়ে গেছে। দখল আর দূষণে নড়াই নদ আজ মৃতপ্রায়। রামপুরা সেতু থেকে শুরু করে মেরাদিয়া হাট হয়ে ত্রিমোহনী গিয়ে বালু নদীতে মিশেছে এই খাল। এর একদিকে আফতাব নগর আবাসিক এলাকা অন্যদিকে বনশ্রী আবাসিক এলাকা। ময়লা-আবর্জনায় খালটি এতটাই দূষিত হয়েছে, দুর্গন্ধে এর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়াও মুশকিল।

খাল ভরাট ও ময়লা ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদ হোসেন বর্তমান কথাকে বলেন, মেরাদিয়ার হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে কি না তা আমার জানা নেই, তবে খালে ময়লা ফেলার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, এভাবে খালে ময়লা ফেললে তো খাল ভরট হয়ে যাবে। আমি অতি দ্রুত এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

প্রতিবেদন: জাকির হোসেন সিরাজী
চিত্রগ্রহণ: জাকির হোসেন সিরাজী


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ