মি: ফারহান,
সামান্য বেতনের চাকুরিজীবি তিতাস গ্যাসের টেকনিশিয়ান খায়ের অবৈধ পন্থায় কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নারায়ণগঞ্জে তিতাসের জোনাল অফিসে একযুগের বেশী সময় চাকুরি করার সুবাদে জেলা সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন মিল-কারখানা ও বসতবাড়িতে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডেমরা ধানাধীন সারুলিয়া পূর্ববক্স নগর ভার্জিন বেকারির দক্ষিণ পাশে অন্তত ৫/৬ কোটি টাকা খরচে নির্মিত ‘বিউটি কুঞ্জ’ নামে ৬তলা বিশিষ্ট সুরম্য অট্টালিকার মালিক টেকনিশিয়ান খায়ের। ব্যাংক ও অফিস লোনের টাকা দিয়ে এমন বাড়ী নির্মান করেছেন দাবী করলে কোন প্রমানপত্র দেখানো প্রয়োজন মনে করেন নাই। এবিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের সুত্র ধরে তদন্ত হয়েছে। কিন্তু কেউ কোন সমস্যা খুজে পায়নি। যদিও তার বেতনের সাথে অর্জিত সম্পদের কোন মিল নেই। তবে তিনি সর্বসাকুল্যে কত টাকা বেতন পান তাও সঠিকভাবে জানেন না। শুধু জানেন অফিস লোনের টাকা কাটার পরে ২৩ হাজার টাকার মতো হাতে পান। যা দিয়ে চলে তার সংসারে চাকা। বাড়ি ভাড়া দিয়ে চলে ব্যাংক লোনের কিস্তির টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সারুলিয়া পূর্ববক্স নগর ভার্জিন বেকারির দক্ষিণ পাশে সাদা রংয়ে নির্মিত ‘বিউটি কুঞ্জ’ নামের ৬তলা বিশিষ্ট সুরম্য অট্টালিকা। কবি জসিমউদ্দিনের নকশী কাথার মাঠের আদলে বাড়ির চারপাশে কারুকাজে সজ্জিত। যেন নবাবী রাজাদের রাজপ্রাসাদ। তবে রাজউক অনুমোদিত নকশা অর্থাৎ রাজউকের ইমারত নির্মান আইন লঙ্গণ করে নির্মিত এই রাজপ্রাসাদ। রাজউকের ইমারত নির্মান আইনের শর্তানুযায়ী ভবনের ডেভিয়েশন বা সেটব্যাক মানা হয়নি। অনুমোদিত নকশার শর্তানুযায়ী ভবনের চারপাশে ১ইঞ্চি জায়গাও খালি রাখা হয়নি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ ব্যবহারকারী বিভিন্ন মিল কারখানা ও বাসা বাড়ির মালিকদের কাছে টেকনিশিয়ান খায়েরকে গ্যাস খেকো নামে ব্যাপক পরিচিত। টাকা না দিলেই গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতেন। আবার মোটা অংকের টাকা পেলে সেই সংযোগ পুনরায় লাগিয়ে দিতেন। দুর্দান্ত প্রভাবের সাথে দীর্ঘ সময় নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের জাতীয় শ্রমিকলীগের(সিবিএ) সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন ।
নাম অনিচ্ছুক একটি সুত্র জানান, খায়ের তিতাসের হেড অফিসে বদলি হলেও সাবেক কর্মস্থল নারায়ণগঞ্জ তিতাস অফিসের আওতাধীন এলাকায় তিতাসের অবৈধ সংযোগ দেয়া বাসাবাড়ি ও কল কারখানা থেকে এখনো নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করেন খায়েরর নিয়োজিত লোকেরা। সুত্র জানায়, খায়েরের আয়কর নথি ও ব্যাংক হিসাব বিবরণী যাচাই বাছাই করলেই তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনে প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে। খায়ের সহ তার সিন্ডিকেটের সদস রফিকুল ইসলাম ও শরিফকে নামে নামে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রথমে খায়েরকে, তারপর রফিকুল ইসলামকে এবং কিছু দিন পর শরিফকে তিতাসের হেড অফিসে বদলি করা হয়। তবে শরিফ ও টেকনিশিয়ান রফিকুল ইসলামকে সাসপেন্ড করা হলেও রহস্যজনক কারনে টেকনিশিয়ান খায়েরকে রাখা হয়েছে বহাল তবিয়তে ।
এব্যাপারে টেকনিশিয়ান খায়ের বলেন, বিউটি কুঞ্জ নামের এই বাড়ি ছাড়া আমার কোন সম্পদ নাই। কেউ দেখাতে পারবেন না আমি কোথাও একটি অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে টাকা নিয়েছি। ৮৩ লাখ টাকা লোনের জন্য প্রতিমাসে ৮৩ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। কেউ প্রতিহিংসার বশে এসব রটাচ্ছে। এর আগে আমার নামে তদন্ত হয়েছে, তারা কিছু পায়নি।