• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন

এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কেন

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

 

সকাল ১০টার পরে আগারগাঁও থেকে খবর এল, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকেরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। এর আগে ভোরে খবর আসে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক এনে শাহবাগে জড়ো করা হচ্ছে। দুপুরে যাত্রাবাড়ী থেকে খবর এল, সেখানে একটি কলেজে হামলা চলছে। বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা–সিলেট মহাসড়ক। সন্ধ্যার পরপর জানা গেল, শাহবাগে শুরু হয়েছে মারামারি। সব মিলিয়ে গতকাল সোমবার রাজধানী ঢাকা ছিল একধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে।

এমন পরিস্থিতি কেবল গতকাল নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে, যা নগরের স্বাভাবিক জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। ব্যবসা–বাণিজ্য ও অবাধ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় আটকে যাচ্ছে। হঠাৎ কোনো কোনো জায়গায় বিক্ষোভ–সংঘর্ষ ঘটনাস্থলে থাকা সাধারণ মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলছে।

নানা দাবিদাওয়া নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই মাঠে নামছে কোনো না কোনো সংগঠন। তুচ্ছ কারণেও মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর আশপাশের শিল্প এলাকাগুলোতে পোশাকশ্রমিকেরা প্রায়ই বিক্ষোভে নামছেন, অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো সহিংস হয়ে উঠছে। এখন সর্বত্র আলোচনা, কেন এমনটা হচ্ছে। এর পেছনে কারও উসকানি রয়েছে কি না। সংঘবদ্ধভাবে বিভিন্ন ব্যানারে রাস্তায় নেমে যখন–তখন সড়কে অচলাবস্থা তৈরি করা হচ্ছে; সবই ন্যায্য দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন নাকি অন্য উদ্দেশ্যও আছে?

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জেরে গত রোববার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ব্যাপক হামলা–ভাঙচুর করেন ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে যাত্রাবাড়ী–ডেমরা এলাকার আরও কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীও ছিল বলে জানা যায়। তাঁরা পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা–ভাঙচুর করেন। কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুরান ঢাকার ওই এলাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এই হামলার জেরে গতকাল যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পাল্টা হামলা করেছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্ররা। পুরান ঢাকা থেকে শত শত তরুণ লাঠিসোঁটা নিয়ে ৫–৬ কিলোমিটার দূরে আরেকটি কলেজে গিয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করলেন। কোথাও তাঁদের থামানো হলো না বা থামানো গেল না!

পরে হামলাকারীদের প্রতিহত করার জন্য মাহবুবুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় লোকজনও। পুরো এলাকা অনেকটা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ একটা সড়ক বন্ধ ছিল বিকেল পর্যন্ত।

এদিকে ‘দেশব্যাপী চলমান আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব এবং সংঘাত’ নিয়ে জরুরি আলোচনা সভা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটি। সভা ডাকাসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব–সংঘাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উদ্বিঘ্ন। তারা মনে করে, ‘চলমান অন্তর্দ্বন্দ্ব ’২৪–এর গণ–অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ’। নিবাহী কমিটির সভার পর রাতে তারা বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও এ নিয়ে মতবিনিময় করে।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সামগ্রিকভাবে ঘটনাবলি পর্যালোচনা করলে, অনেক ক্ষেত্রে সরকারের ব্যবস্থাপনার ঘাটতির বিষয়টিও আসবে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গোষ্ঠী এবং পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তির ইন্ধন বা যোগসাজশে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা জরুরি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে আরও সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে হবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ