উপদেষ্টা পরিষদে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট অনুমোদ
- আপডেট: ০১:৩৬:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
- / ১১৩
বিশেষ প্রতিনিধি: মুজাহিদ খাঁন কাওছার
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ও অর্থ বিল উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। একই সভায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও অনুমোদন পেয়েছে।
সোমবার (২ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মন্ত্রিসভা কক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রস্তাবিত নতুন বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এ বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ—আজ ২ জুন বিকেল ৩টায়।

নতুন অর্থবছরের বাজেট আকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সর্বশেষ প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা উপস্থাপন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে সেই বাজেটে কাঁটছাঁট করা হয়, ফলে সংশোধিত বাজেট দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেট অনুমোদনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় মনোযোগী ভূমিকা নিচ্ছে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। নতুন বাজেটে কোন খাতে কত বরাদ্দ দেওয়া হবে, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা কত ধরা হচ্ছে, কর কাঠামোয় কী পরিবর্তন আসছে—তা জানতে অর্থ উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক বাজেট বক্তৃতার অপেক্ষায় রয়েছে দেশবাসী।
বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটে সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকে না। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখা, কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দে গুরুত্ব প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সম্প্রসারণ এবং জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে যৌক্তিক ব্যয় কাঠামো প্রত্যাশিত।
বিশেষ করে রাজস্ব ঘাটতি কমাতে ভ্যাট ও আয়কর কাঠামোয় কিছু সংস্কার এবং করের আওতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহে জোর দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
বর্তমান বাজেট একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রস্তুত হওয়ায় এটি জাতীয় নির্বাচন-পূর্ব অর্থনৈতিক রূপরেখার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নির্ধারণ, বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন—এই তিনটি দিক বাজেট প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট হবে একটি ‘ট্রানজিশন বাজেট’—যা একদিকে যেমন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে, অন্যদিকে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের এই বাজেট জাতীয় অর্থনীতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, বাস্তবায়নের পর্যায়ে কতটা দক্ষতা ও কার্যকারিতা দেখাতে পারে বর্তমান সরকার।