• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ৬ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

অনলাইন ভার্সন
অনলাইন ভার্সন
আপডেটঃ : সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ছয়টি প্রস্তাব রেখে বিশ্বকে রক্ষায় যুদ্ধে ব্যবহৃত অর্থ সেক্ষেত্রে ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘একটি কথা না বলে পারছি না এই যুদ্ধে অস্ত্র এবং অর্থ ব্যয় না করে সেগুলো জলবায়ু পরবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় যদি ব্যয় করা হত তাহলে বিশ্ব রক্ষা পেত।’

সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলণ কেন্দ্রে ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো-২০২৪’ এবং ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি)’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই। এজন্য প্রয়োজন অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সহিষ্ণুতা শক্তিশালী করা এবং ঝুঁকি হ্রাসে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে সকলকে সাথে নিয়ে আরো নিবিড়ভাবে এই ধরিত্রীকে রক্ষায় আমরা কাজ করি।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য আমি আপনাদের বিবেচনার জন্য সংক্ষেপে কয়েকটি পয়েন্ট উত্থাপন করতে চাই।’

প্রথমত, প্রধান কার্বন-নির্গমনকারী দেশগুলোকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে তাদের নির্গমন হ্রাস করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, উন্নত দেশগুলোর দ্বারা জলবায়ু তহবিলে বার্ষিক ১ শ’ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে।

তৃতীয়ত, উন্নত দেশগুলোকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি স্থানান্তরের পাশাপাশি সবচেয়ে কার্যকর জ্বালানি সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।

চতুর্থত, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের সময় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো তাদের ক্ষতি অনুসারে বিবেচনা করা উচিত।

পঞ্চমত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী-ভাঙন, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব সকল দেশকে ভাগ করে নিতে হবে এবং
সবশেষে প্রধান অর্থনীতিসমূহকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী সকল অংশীদারদের সাথে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশ সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে নিয়ে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশীপ-বিসিডিপি’ গঠন করা হয়েছে। এতে সকল পক্ষ ঐকমত্য হয়েছে। আমি আশা করি, মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান, ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান, ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন ও বাংলাদেশের রুপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে বিসিডিপি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) ২০২২-২০৫০ প্রণয়ন করেছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে এটি এইএনএফসিসিসি-তে দাখিল করা হয়েছে। এই পরিকল্পনায় আমরা ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিযুক্ত এলাকাতে ৮টি খাতে ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ২৭ বছরে ন্যাপ-এ গৃহীত কর্মপরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এজন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণে আমি ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, উন্নত দেশসমূহ ব্যাপক কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অধিক ভূমিকা রেখে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে রক্ষা করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এর সভাপতি থাকাকালে অভিযোজন এবং প্রশমন কার্যক্রমে উন্নত দেশসমূহের প্রতিশ্রুত প্রতিবছর ১ শ’ বিলিয়ন ডলার প্রদানের বিষয়টি বাস্তবায়ন করার জন্য বার বার আহ্বান জানিয়েছি। ‘আমার প্রত্যাশা, উন্নত দেশসমূহ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে,’ যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরেও বাংলাদেশসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের হুমকিতে থাকা অন্যান্য দেশগুলো যাতে অব্যাহতভাবে আর্থিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পায় সেজন্য আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, কপ-২৬ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন-অর্থায়ন ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণ করার কথা। এটি বাস্তবায়নে আমি ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, যে সকল দেশ ইতোমধ্যে ন্যাপ প্রণয়ন করেছে, তারা যেন ন্যাপ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইউএনএফসিসিসিসহ অন্যান্য সকল উৎস হতে সহজে এবং দ্রুততার সাথে আর্থিক সহযোগিতা লাভ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সম্ভাব্য ক্ষতি হ্রাসে অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে ইউএনএফসিসি-এর লস এন্ড ড্যামেজ তহবিল হতে অর্থ প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে’ বলেন তিনি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, জাতিসঙ্ঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (ইউএনএফসিসিসি) নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিয়েল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি)’ এর ওপর একটি সংক্ষিপ্ত অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনাও প্রদর্শিত হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ