বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথে থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিলো। তবে শুরুতেই যাত্রী সংকটের কারণে আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাহাজ মালিক কতৃপক্ষ।
গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য কেয়ারি সিন্দাবাদ নামের একটি জাহাজকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়। যেটি বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএর ঘাট থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা ছিলো।
কেয়ারি সিন্দাবাদের কক্সবাজারের ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ সিদ্দিকী জানান পর্যটক নিয়ে বৃহস্পতিবার জাহাজ সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলো কিন্তু যাত্রী সংকটের কারণে জাহাজ চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। মানুষের অনেক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু টিকিট কাটছে না। মানুষ ট্রাভেল পাস নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে। তবে ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে নিশ্চিত কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে যাবে। টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।
এর আগে বুধবার বিকেলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজার সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী বলেন, “সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণে কমিটির প্রথম বৈঠক মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত হয়েছে। বৈঠকে কমিটির সদস্যদের সাথে পরিবেশসহ সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনার পর জাহাজ ছাড়া পয়েন্ট নির্ধারণে করা হয়েছে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএর ঘাট’’।
ইউএনও বলেন, তবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বীপে ২ হাজারের বেশি পর্যটক যাতায়ত করতে পারবে না। এছাড়া নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে রাত্রিযাপনের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পর্যটকরা দ্বীপে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নাফ নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠার কারণে নাব্যতা সঙ্কট এবং মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলির কারণে নিরাপত্তার অভাবে আপাতত টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। শুধু কক্সবাজার শহর থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয় মাস টেকনাফ-সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। বাকি ছয় মাস সাগর উত্তাল থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক অফিস আদেশে সেন্টমার্টিনের পর্যটন নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠন এবং একইসঙ্গে কক্সবাজার থেকে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপগামী জাহাজ চলাচল নিয়ে কিছু দিক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
৫ ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিলেন সেন্টমার্টিন বাসিন্দারা
কমিটির কর্মপরিধি হিসেবে বলা হয়েছে, সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে ওঠার আগে পর্যটকদের জাহাজ ছাড়ার জায়গা, অর্থাৎ এন্ট্রি পয়েন্টে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তৈরি করা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ট্রাভেল পাস নিতে হবে। ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকদের অনুমোদিত জাহাজে ভ্রমণ নিশ্চিত করবে কমিটি। পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিটি কঠোর থাকবে।
পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছার পর কোন হোটেলে থাকবেন, তা লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ করা হবে। জাহাজ ছাড়ার স্থানে (পয়েন্টে) ও সেন্টমার্টিনের প্রবেশের স্থানে (এন্ট্রি পয়েন্ট) পর্যটকদের জন্য করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে বিলবোর্ড স্থাপন করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় সার্বিক বিষয় ও যোগাযোগ সমন্বয় করবে। কাজের সুবিধার্থে কমিটি প্রয়োজনে সদস্য বাড়াতে পারবে।