সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও দুইজন সচিবসহ তিন জনকে লিগ্যাল নোটিশ
সড়ক পথে জনগনের চিরচেনা দূর্ভোগ নিরশনে প্রধান উপদেষ্টাসহ চার জনকে অনুলিপি ও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও দুইজন সচিবসহ তিন জনকে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবির মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ
নির্ভরযোগ্য সড়ক পরিবহন সেবা নিশ্চিত করণে টেকসই,নিরাপদ,সু-শৃঙ্খল, আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুগোপযোগী পদক্ষেপ সমূহ তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ও উক্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ এহছানুল হককে নোটিশ প্রদান করেন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) তে পরিবহন ব্যবসার উপর বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণব্যক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করেন সুপ্রীম কোর্ট এর এ্যাডভোকেট এ.কে.এম. সিরাজুল ইসলাম এর মাধ্যমে মোঃ রাসেল মিয়া লিগ্যাল নোটিশটি জনগনের সড়ক পথে প্রতিদিনের চিরচেনা দূর্ভোগ নিরশনে পাঠিয়েছেন এবং উক্ত নোটিশটি অনুলিপি আকারে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব কে পাঠিয়েছেন।
মোঃ রাসেল মিয়া উক্ত নোটিশে দেশের জনগনের প্রতিদিনের সড়ক পথে ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনায় অনেক ধরনের বিপদের সম্মুখিন হতে হচ্ছে কিন্ত জনগনের ঘটে যাওয়া প্রতিদিনের প্রাণহানী থেকে শুরু করে চলমান পরিবহনে নারীদের উপর ধর্ষণ নির্মম নির্যাতন পর্যন্ত হতে হইতেছে এই মর্মান্তিক ঘটে যাওয়া প্রতিদিনের ঘটনা এবং জনগনের প্রতিদিনের প্রতিমূহুর্তে জনদূর্ভোগে পরিনত হয়েছে কিন্তু বর্তমান সরকারে থাকা কারও কোন পদক্ষেপ না দেখায় মোঃ রাসেল মিয়া তার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার উপর এবং বর্হিবিশে^ বিভিন্ন পরিবহন পরিচালনা পদ্ধতি অনলাইন ভিত্তিক অনুসন্ধান করে এবং তার নিজস্ব সমাধানযোগ্য কৌশল একত্রিত গত ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি বাস্তবায়নে আবেদন করেন। সমাধান যোগ্য পদক্ষেপ সমূহ নিচে কিছু তুলে ধরা হলো।
সড়ক পরিবহন খাতের বর্তমান প্রেক্ষপট:
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)’র বর্তমান চিত্র:
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যা রাষ্ট্রের সেবামূলক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর হিসেবে চিহিৃত, কিন্তু উক্ত দপ্তর থেকে বিগত ৬৪ বছরের ধারাবাহিকতার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বহরে মোট বাসের সংখ্যা ১২৮৪ টি এর মধ্যে ৪৫১ টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্টাফ বাস হিসেবে পরিচালিত হয় অবশিষ্ট ৮৩৩ টি বাস বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহন সেবা দিয়ে আসছে এবং পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাকের সংখ্যা বর্তমানে ৫২৫ টি। বাস ডিপো- ২৪টি, ট্রাক ডিপো- ০২টি, ট্রেনিং ইন্সটিটিউট-০৪টি, ট্রেনিং সেন্টার-২৪টি, মেরামত কারখানা- ০২টি। বর্তমানে বিআরটিসি’তে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৩৯০০ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) দেশের দৈনন্দিন যাত্রী চাহিদার মোট ১% সেবা দিতে ও হিমসিম খেয়ে আসছে, তবে যতটুকু সেবা প্রদান করে আসছে তাতে নিরাপদ পরিবহন সেবা দিয়ে আসছে। তবে বিআরটিসি সড়ক পরিবহন আইন ও শ্রম আইন মেনে সড়কের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।
বেসরকারী ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিবহনের বর্তমান অবস্থা:
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে অনুমোদিত বৈধ বাস ও মিনি বাসের সংখ্যা মোট ৮৪,২৯৬টি, যার মধ্যে বাসের সংখ্যা মোট ৫৫ হাজার ৮৪২টি এবং মিনিবাসের সংখ্যা ২৮ হাজার ৪৫৪ টি। এছাড়াও মেয়াদউত্তীর্ণ বাসের সংখ্যা প্রায় ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার), বেসরকারী ব্যক্তি মালিকানা নিবন্ধিত পরিবহন কোম্পানীর পরিমাণ জঔঝঈ এর তথ্য অনুযায়ী ১২০০ টি। কিন্তু বেসরকারী/ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিবহন কোম্পানীগুলি দৈনন্দিন যাত্রী চাহিদার ৯৯% (শতাংশ) পূরণ করে আসছে, তবে সড়ক পরিবহন আইন ও শ্রম আইন এর কোন তোয়াক্কা না করায় সড়ক পথে দুর্ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খল ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ:
ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)’র নেতৃত্ব প্রদান করার জন্য পরিবহন খাতের উপর বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি কে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া অপরিহার্য। যাতে নি¤েœর পদ্দক্ষেপগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানী ও রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিআরটিসি বিশেষ ভুমিকা পালন করতে পারে। নির্ভরযোগ্য টেকসই সড়ক পরিবহন সেবা নিশ্চিত করণে নিম্মে পদক্ষেপ সমূহ উল্লেখ করা হলো:
১। টেকসই (Sustainable) সড়ক পরিবহন:
টেকসই পরিবহন বলতে বোঝায় এমন ব্যবস্থা যা দীর্ঘমেয়াদে চলাচলের চাহিদা পূরণ করে এবং পরিবেশ, অর্থনীতি ও সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখে। এতে জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন,কার্যকর রক্ষণাবেক্ষণ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক অপারেশন অন্তর্ভুক্ত হয়।
২। নিরাপদ (Safe) সড়ক পরিবহন:
দুর্ঘটনার ঝুঁকি হ্রাস, ফিটনেস পরীক্ষা চলমান রাখা, প্রশিক্ষিত ড্রাইভার, ট্র্যাফিক আইনের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে একটি নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়, এতে মানুষের জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
৩। আধুনিক (Modern) সড়ক পরিবহন:
যুগোপযোগী পরিবহন বৃদ্ধি করা ডিজিটাল টিকিটিং, জিপিএস ট্র্যাকিং, সফটওয়্যার ভিত্তিক ও ঠঞঝ পদ্ধতিতে যাত্রী উঠা-নামার নির্দিষ্ট স্টপেজ মনিটরিং করা, কন্টোল রুম, রুট অপটিমাইজেশন ও অনলাইন সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকে। যা যাত্রাকে দ্রুত, সহজ ও নির্ভরযোগ্য করে তোলে।
৪। পরিবেশবান্ধব (Environment-Friendly)) সড়ক পরিবহন:
জ্বালানি নির্ভরতা হ্রাস করে বিদ্যুৎ বা সিএনজি চালিত যানবাহনের ব্যবহার, গাড়ির কার্বন নিঃসরণ কমানো, এবং পুরনো পরিবহন অপসারণ করে পরিবেশ সুরক্ষায় মুখ্য ভূমিকা রাখা।
৫। সু-শৃঙ্খল (Well-Organized) সড়ক পরিবহন:
নির্ধারিত রুট ও স্টপেজ, ডিজিটাল প্রযুক্তিগত সকল সেবা, সময়ানুবর্তিতা ও সিডিউল মেনে গাড়ী চলাচল, সু-শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত চালক, কন্টাক্টর দ্বারা যানবাহন পরিচালনা, ট্র্যাফিক আইন মেনে চলা, ওভারটেকিং বা রুশ ড্রাইভিং বন্ধ করা, যাত্রীদের প্রতি সৌজন্যমূলক আচরণ, পরিবহন নীতিমালা মেনে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পরিবহন পরিচালনার
ব্যবস্থা করতে পারলেই নির্ভরযোগ্য টেকসই সুশৃঙ্খল সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা দৃশ্যমান হবে। উল্লেখযোগ্য সমস্যার সংস্কারমূলক কৌশলগত সমস্যা চিহ্নিতকরণ সড়ক পরিবহন আইন ও শ্রম আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় মুল কারণ ঃ অধিকাংশ যৌথ বা অংশীদারী কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের সদস্যগণ দলীয় বিবেচনায় নির্বাচিত হন এবং দেশের অধিকাংশ কোম্পানির মালিক শিল্পপতি বা রাজনীতিবিদ। বাস্তবতায় দেখা যায় ৩৫-৪০ টি কোম্পানীর হাতে ৭৫ শতাংশ বাসের মালিকানা রয়েছে। এ অল্প সংখ্যক কোম্পানী/মালিকের নিয়ন্ত্রণে দেশের অধিকাংশ বাস থাকায় তারা এ খাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে। বাস্তবতায় আরো উঠে আসে অন্তর্ভুক্ত এসব বৃহৎ বাস কোম্পানির প্রায় ৯২ শতাংশ ক্ষেত্রে পরিচালনা পরিষদের সদস্যগণের সাথে রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বৃহৎ বাস কোম্পানিসমূহের প্রায় ৭০ শতাংশের মালিক/পরিচালনা কমিটির প্রধানের সাথে সরাসরি রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সংস্কারমূলক সমাধান: ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি অবলম্বন করলে অধেকাংশ পরিবহন এইসব ক্ষমতাবান কোম্পানী/মালিকের নিয়ন্ত্রণ হইতে বের হয়ে ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানীর মাধ্যমে যাত্রী সেবা প্রদান করবে। যার ফলে উপরোল্লেখিত কোম্পানীগুলি বাধ্য হয়ে রাষ্ট্রের নিয়ম নীতির জালে আটকে যাবে।
পরিবহন ব্যবসা পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো:
পর্যবেক্ষণে ২৫ শতাংশ কোম্পানির নিজস্ব কোন অবকাঠামো নেই। এ হার আন্তঃজেলা বাস কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ এবং সিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ। বিধিমালা অনুযায়ী জরিপে দেখা যায় ডিপো নেই ৭৫ শতাংশ কোম্পানীর এ হার আন্তঃজেলার ক্ষেত্রে ৭৪ শতাংশ এবং সিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ। গ্যারেজ ও মেরামত কারখানা নেই ৫৮ দশমিক ৩
শতাংশ বাস কোম্পানির। সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২ অনুযায়ী বাস ব্যবসা পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো (ডিপো ও মেরামত কারখানা) সুবিধা থাকা বাধ্যতামূলক ধারা [ধারা ৬৩(৩)] সংস্কারমূলক সমাধান ঃ সড়ক পরিবহন আইন ও শ্রম আইন মেনে ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানী সকল ধরনের অবকাঠামোগত পদক্ষেপ সমূহ যেমনঃ ডিপো, টার্মিনাল, কাউন্টার, কন্টোল রুম সহ সকল ধরনের পদক্ষেপ শর্ত সাপেক্ষে সড়ক পরিবহন ও মহা সড়ক বিভাগের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বাস্তবায়ন করবে।
যাত্রীসেবা ও টার্মিনাল উন্নয়ন: আধুনিক ও নিরাপদ টার্মিনাল স্থাপন। যাত্রী ছাউনি, টয়লেট, তথ্যকেন্দ্র চালু করা। নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানামা বন্ধে অভিযান জোরদার।
শ্রমিকদের মাসিক আয়/মজুরি: ২০২০ সালে প্রকাশিত গেজেটে মজুরি বোর্ড কর্তৃক সুপারিশকৃত মূল মজুরি/বেতনের সাথে ৫% বৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য ২০২৩ সালের মজুরি/বেতন সমন্বয় করা হয়েছে। বেশিরভাগ বাসকর্মী/শ্রমিক চুক্তিভিত্তিক হওয়ায় মালিক পক্ষকে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধের পর অবশিষ্ট অর্থ আয় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। গবেষণা ভিত্তিক দেখা যায় ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসার সাথে জড়িত কর্মী/শ্রমিকদের উপার্জিত আয় গেজেট অনুসারে সমন্বয়কৃত মজুরি/বেতন থেকে কম।
সংস্কারমূলক সমাধান: ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) ঠিক যেভাবে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে আসছে ঠিক একই ভাবে ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানীর কর্মচারীদের মাসিক বেতন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করবে। দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কোন শ্রমিক/কর্মচারী নেয়া হবে না। শ্রমিক ও কর্মচারী নিয়োগ ও কর্মঘন্টা ঃ সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮ (ধারা ১৩ ও ১৪) এবং শ্রম আইন, ২০০৬ (ধারা ১০২ (২) অনুযায়ী গণপরিবহনের নিয়োগকৃত সকল শ্রমিককে লিখিত নিয়োগপত্র প্রদান, শিশু শ্রমিক নিষিদ্ধ করা এবং আনুষ্ঠানিক নিয়োগ পদ্ধতি চলমান রাখা। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় এসব আইনি বিধানের অনেকাংশে ঘাটতি রয়েছে। কর্মী/শ্রমিকদের ৮০ শতাংশ লিখিত নিয়োগপত্র নেই, ৭০ শতাংশ শ্রমিককে ট্রিপ/দৈনিকভিত্তিক মজুরি প্রদান করে আসছে।
সংস্কারমূলক সমাধান: ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি বাস্তবায়নে শ্রমিক, কর্মচারী আনুষ্ঠানিক নিয়োগ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, শিশু শ্রমিক নিষিদ্ধ, অতিরিক্ত কর্মঘন্টা সহ সকল নিয়ম-কানুন মেনে পরিচালনা করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। শুদ্ধাচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি অংশীজন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ঃসড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, বিআরটিসি, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ, ডিটিসিএ, আরজেএসসি, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা, মালিক ও শ্রমিক সমিতি। ব্যক্তিমালিকানা কোম্পানী এককভাবে শুদ্ধাচার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে আসছে না।
সংস্কারমূলক সমাধান: এ খাতে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করণে ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানী নিয়ম অনুসারে শুদ্ধাচার ব্যবস্থা চলমান রাখবে, তাতে উক্ত খাতের অংশীজন সকল দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিতরে কাজের প্রফুল্লতা বৃদ্ধি পাবে।
দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ ও অনুদান: শ্রম আইন, ২০০৬-এর খন্ড ২ (ধারা ১৯) এবং সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৫২ অনুযায়ী দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসকর্মী বা তার উত্তরাধিকারীগণ ২০২২ সালে বিআরটিএ’র তত্ত্বাবধানে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড ও বাস মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসার খরচ প্রাপ্য হবেন। এছাড়া মোটরযানে দুর্ঘটনার ফলে
কোনো ব্যক্তি (বাসযাত্রী, কর্মী/শ্রমিক ও পথচারী) আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা মারা গেলে তিনি বা ক্ষেত্রমত তার উত্তরাধিকারীদের পক্ষে মনোনীত ব্যক্তি ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ অর্থ গ্রহণ করে থাকে।
সংস্কারমূলক সমাধান: ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে পরিবহন খাতে শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য এককালীন ভবিষ্যত তহবিল গঠন করবে ও বীমা, চিকিৎসা, দুর্ঘটনাজনিত কারণে অর্থ বরাদ্দ ব্যবস্থা করবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ বাহন আধুনিক ও পরিবেশ বান্ধব রূপান্তর: যেহেতু মেয়াদউত্তীর্ণ গাড়ীর বাৎসিরক সকল ফি পুনরায় গ্রহণ করা শুরু করেছে এবং যাত্রী চলাচলের জন্য বিকল্প ভাবে গাড়ীর ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের ভিতর করা সম্ভব নয় সেইক্ষেত্রে মেয়াদউত্তীর্ণ গাড়ি চলাচলে যথাযথ মান যাচাই সাপেক্ষে সচল রাখলে নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে উক্ত গাড়ীগুলো পরিবেশবান্ধব ভাবে নতুন করে চলাচল উপযোগী করা সম্ভব এবং মেয়াদউত্তীর্ণ ও পুরাতন যানবাহনগুলি নির্দিষ্ট্য কিছু ডিজাইনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)’র নিয়ম মাফিক নূন্যতম ১০০(একশত) প্রাইভেট যানবাহন মেরামত কারখানার সাথে চুক্তিপত্র করে উক্ত পরিবহনগুলি চুক্তিবদ্ধ মেরামত কারখানায় পুনরায় মেরামত করে ও অর্ধেকাংশ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত করে
চলাচল উপযোগী করা যেতে পারে তাহলে পরিবেশবান্ধব ও হবে এবং চলাচলের ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে সিটি সার্ভিস, ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানী অথবা বিআরটিসি’র যৌথ পরিচালনায় পরিচালিত করা হবে।
যেহেতু গাড়ীর চেসিস ব্যতিত সকল যন্ত্রাংশ পরিবর্তনশীল সেই ক্ষেত্রে নিম্নে পদক্ষেপগুলি তুলে ধরা হলো:
১। ২০ বছরের অধিক পুরাতন যানবাহনের চেসিস ও ইঞ্জিন পরীক্ষার ভিত্তিতে মডিফাইড অনুমোদন। ২। চেসিস সক্ষমতা পরীক্ষা (Government Load Test)৩। পুরাতন যানবাহনের পরীক্ষার নিরিক্ষার ভিত্তিতে চলাচল করার উপযোগী করতে ব্যাংক ঋীনের ব্যাবস্থা করা।৪। ইঞ্জিন আধুনিকায়ন ঈঘএ অথবা খএচ তে রূপান্তর করা যায় তাহলে পরিবেশের
দিক দিয়েও ভালো হবে। ৫। নতুন বডি ফ্রেম ও পরিবেশবান্ধব রঙ। ৬। স্বল্প দূরত্বে চলাচল যেমন সিটি সার্ভিস।
পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন: সারা দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু, ব্যবসায় শুদ্ধাচার চর্চায় নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা। পরিবহন শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু, দক্ষ চালক পশিক্ষণ বৃদ্ধি করা। জনগণের অভিযোগ গ্রহণ ও দ্রুত সমাধানের টোল-ফ্রি হটলাইন, বার্ষিক পাবলিক রিপোর্ট ও অপারেশনাল অডিট চালু।
যানবাহনের মানোন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষা, অবৈধ পার্কিং ও হকারদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ, সিটি কর্পোরেশন শহর ভিত্তিক প্রতিটা ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেস এ উঠা-নামার ০২ (দুই) কিঃ মি আগে পরে যাত্রী উঠা নামার ক্ষেত্রে ট্র্যাফিক পদ্ধতি কঠোর ভাবে গ্রহণ করতে হবে, সিটি কর্পোরেশন শহর ভিত্তিক প্রতিটা ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেস এ শহর কেন্দ্রিক সকল ধরনের যানবাহন, টোল প্লাজায় ১০০% অনলাইন ভিত্তিক কার্যকর রাখতে হবে, শহরের মুল পয়েন্টে গণ পরিবহনের যাত্রার শেষ গন্তব্যস্থল হওয়ায় যানবাহনগুলি সেই পয়েন্টেই ঘোরার কারণে যানজট তৈরি হয়। যানজটের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জায়গা ভিত্তিক যানবাহন ঘোরার জন্য দূরত্ব সীমা বজায় রেখে বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।
১। নিম্নে উল্ল্যেখিত কার্যক্রম সমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যাত্রীগণ ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানির উপর নির্ভরশীল ও আস্থাশীল হয়ে উক্ত ফ্রাঞ্চাইজি পরিবহনে যাত্রীদের যাতায়াতের আগ্রহ প্রকাশ পাবে এবং ফ্রাঞ্চাইজি গ্রহনকারী পরিবহন মালিকগণ শর্ত সাপেক্ষে ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানিতে যাত্রী সেবা ও আর্থিক ভাবে লাভবান হবে এবং নির্ভরযোগ্য সড়ক পরিবহন সেবা বাস্তবায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
২। পরিবহন মালিক পক্ষ ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পনির সাথে খুব সহজে চুক্তিবদ্ধ হবে তার কিছু বিশেষ উল্লেখ যোগ্য কারন হল আধুনিক মানের কাউন্টার সেবা, অনলাইন ভিত্তিক টিকিটিং পদ্ধতি, কোম্পানীর নিজস্ব ডিপো, যানবাহন মেরামত কারখানা,পরিস্কার পরিছন্নতা রাখা, যাত্রাপথে বের হওয়ার আগে ইঞ্জিন জনিত ফিটনেস পরিক্ষা করা, ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতিতে সফটওয়্যার ভিত্তিক চালক ও কন্ডাকটর নাম প্রকাশ করা। যাত্রীদের জন্য ভালো মানের পরিবেশের হোটেলে যাত্রা পথের বিরতী দেওয়া, নির্দিষ্ট স্থান হইতে সঠিক সময়ে পরিবহন ছেড়ে যাওয়া ও সঠিক সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌছানোর ধার অব্যাহত রাখতে যার ভিত্তিতে পরিবহন মালিকগণ ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি খুব সহজেই গ্রহণ করবে।
৩। প্রযুক্তিগত ভাবে গাড়ীর ভিতরে ডিজিটাল স্কীনে গতিবিধি প্রদর্শন, চালক ও কন্টাকটর এর নাম ও মোবাইল নাম্বার, অভিযোগ কেন্দ্রের টোল-ফ্রি হটলাইন নাম্বার, ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানীর অফিসের ঠিকানা ইত্যাদি রাখা। যার ফলে সম্মানীত যাত্রীগণও চলমান পরিবহনের স্টাফদের কে সতর্ক করতে পারে এবং ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানিকে অনলাইনের মাধ্যমে ও হট লাইনের মাধ্যমে নোটিশ করতে পারবে।
৪। পরিবহন মালিকগণ চালক ও কন্ডাকটর দিতে চাইলে সড়ক পরিবহন আইন ও শ্রম আইনের সকল বিধি বিধান মেনে এবং ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানির অর্গানোগ্রামের ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক নিয়োগ পদ্ধতির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে উত্তীর্ণ হয়ে মাসিক বেতন ভিত্তিক ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানির কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হতে হবে।
৫। ফ্রাঞ্চাইজি গ্রহনকারী পরিবহন মালিকগণ ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানির নির্ধারিত মাসিক সার্ভিস চার্জ প্রদান করবে।
৬। ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানীর সকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য অনলাইন ভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন মূলক (এসিআর) গোপনীয় অনুবেদন ফর্ম পদ্ধতি চালু রাখবে। যার ফলে তাদের প্রমোশনাল বিষয় ও বেতন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
৭। প্রতি বছর কাজের দক্ষতার উপর নির্ভর করে নানা মূখী বাৎসরিক ফ্যামিলি ভ্রমন, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা পুরুস্কার/অভ্যার্থনা/সংবর্ধনা ও স্বারক লিপি প্রদান করা হবে।
৮। ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানির সকল কর্মকর্তা-কর্মাচারীদের পদ ভিত্তিক নির্দিষ্ট ড্রেস কোড, পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক ব্যবহার হবে।
৯। সড়কে চলমান বাহনের বেপরোয়া গতিনিয়ন্ত্রণ, CCTV ও VTS পদ্ধতির মাধ্যমে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। ১০। দূর্ঘটনার ক্ষেত্রে সঠিক তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিকে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করণে আইনকে সহযোগীতা করা হবে।
১১। আমাদের দেশে পরিবহনের তুলনায় পরিবহন পরিচালনা কোম্পানি অধিকতর বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে শহরের ভিতর টার্মিনাল এলাকায় যানজট ও সড়ক পথে ওভার টেকিং বৃদ্ধি পাচ্ছে যার জন্য দূর্ঘটনার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে নতুনতœ যুগোপযোগী কৌশলগত দিক সমূহ নিয়ে উক্ত খাতের সহযোগী অর্ন্তভূক্ত সকল দপ্তরের সাথে সব সময় আলোচনা করে চলমান সমস্যার সমাধান করা হবে।
১২। ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানি উক্ত ধাপ গুলি বাস্তবায়নের ফলে নির্ভরযোগ্য টেকসই সড়ক পরিবহন সেবা নিশ্চিত হবে এবং পরিবহন খাত রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পাবে।
১৩। ফ্রাঞ্চাইজি কোম্পানির কৌশলগত দিকগুলি অবলম্বন করার ফলে আমাদের দেশের চলমান বৃহৎ পরিবহন কোম্পানিগুলো পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের জন্য উক্ত পদক্ষেপগুলো তারাও বাস্তবায়ন করতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। যার ফলে পরিবহন খাতের উপর সকলের আস্থা আসবে। পাশাপাশি দেশ ও দশের জন্য আর্থসামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা (Action Plan): একটি জাতীয় সড়ক পরিবহন উন্নয়ন নীতিমালা ২০৩০ গঠন করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।