০৫:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

সালথায় শিক্ষা খাতে দুর্নীতির মহোৎসবঃ সাবেক টিইও ও শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাৎ অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ১০:২৭:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১১৩

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট : মুজাহিদ খাঁন কাওছার

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার শিক্ষা খাতে চলছে চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে তোলপাড়। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ক্ষুদ্র সংস্কার ও নির্বাচনকালীন জরুরি মেরামতের নামে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) আতিকুর রহমান এবং শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মাইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে তদন্তে জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা এ বরাদ্দের বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। শিক্ষা অফিস থেকে কোনো লিখিত বা মৌখিক নির্দেশনাও তাদের কাছে পৌঁছায়নি। অথচ এসব বিদ্যালয়ের নামে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে বিপুল অঙ্কের সরকারি অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। ভুয়া প্রত্যয়নপত্রে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগও রয়েছে।

আত্মসাৎ করা অর্থের বৈধতা দিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রত্যয়নপত্র নকল করে একটি ভুয়া প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়া হয়। এমনকি কিছু বিদ্যালয়ের নামও পরিবর্তন করে একই কাগজপত্র একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে সালথা উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের না জানিয়ে বিদ্যালয়ের নামে বিল তৈরি করা হয়েছে।
এক শিক্ষক বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের কোনো সংস্কার কাজই হয়নি। অথচ পরে শুনছি আমাদের স্কুলের নামে কয়েক লক্ষ টাকার বিল উঠেছে।”
আরেক শিক্ষক অভিযোগ করেন, “সাবেক টিইও এবং মাইনুল ইসলাম ফোন করে বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর দিতে চাপ দেন, স্বাক্ষর না দিলে বদলির ভয় দেখানো হয়।”

দুদক ও সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে হুমকির ঘটনাও ঘটেছে। গত ৮ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বিষয়টি নিয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগের পর স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করলে সাবেক টিইও আতিকুর রহমান ও শিক্ষক নেতা মাইনুল ইসলাম তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে শুরু করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তদন্ত বন্ধ করতে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোরও চেষ্টা চালান।
কয়েকজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, “আমরা তথ্য যাচাই করতে গেলে ফোনে হুমকি আসে— ‘তদন্ত করলে ভালো হবে না’। বিষয়টি আমরা স্থানীয় প্রশাসনকেও জানিয়েছি।”

সচেতন মহলের দাবি, দ্রুত তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।
সালথা উপজেলার সচেতন নাগরিক ও শিক্ষক সমাজ বলছেন, বছরের পর বছর ধরে শিক্ষা অফিসে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। ক্ষুদ্র সংস্কার, রং করার কাজ, বেঞ্চ ক্রয়, টয়লেট সংস্কার ইত্যাদি উন্নয়ন খাতের টাকায় নিয়মিত অনিয়ম চলে আসছে।
তারা অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও আত্মসাৎ করা সরকারি অর্থ পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

বিজ্ঞাপন: ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট এর জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৮২৪৯০৯০১০
বিজ্ঞাপন: ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট এর জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৮২৪৯০৯০১০

সালথায় শিক্ষা খাতে দুর্নীতির মহোৎসবঃ সাবেক টিইও ও শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাৎ অভিযোগ

আপডেট: ১০:২৭:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট : মুজাহিদ খাঁন কাওছার

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার শিক্ষা খাতে চলছে চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে তোলপাড়। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ক্ষুদ্র সংস্কার ও নির্বাচনকালীন জরুরি মেরামতের নামে সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) আতিকুর রহমান এবং শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি মাইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে তদন্তে জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা এ বরাদ্দের বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। শিক্ষা অফিস থেকে কোনো লিখিত বা মৌখিক নির্দেশনাও তাদের কাছে পৌঁছায়নি। অথচ এসব বিদ্যালয়ের নামে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে বিপুল অঙ্কের সরকারি অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। ভুয়া প্রত্যয়নপত্রে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগও রয়েছে।

আত্মসাৎ করা অর্থের বৈধতা দিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রত্যয়নপত্র নকল করে একটি ভুয়া প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়া হয়। এমনকি কিছু বিদ্যালয়ের নামও পরিবর্তন করে একই কাগজপত্র একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে সালথা উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের না জানিয়ে বিদ্যালয়ের নামে বিল তৈরি করা হয়েছে।
এক শিক্ষক বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ের কোনো সংস্কার কাজই হয়নি। অথচ পরে শুনছি আমাদের স্কুলের নামে কয়েক লক্ষ টাকার বিল উঠেছে।”
আরেক শিক্ষক অভিযোগ করেন, “সাবেক টিইও এবং মাইনুল ইসলাম ফোন করে বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর দিতে চাপ দেন, স্বাক্ষর না দিলে বদলির ভয় দেখানো হয়।”

দুদক ও সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে হুমকির ঘটনাও ঘটেছে। গত ৮ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বিষয়টি নিয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। অভিযোগের পর স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করলে সাবেক টিইও আতিকুর রহমান ও শিক্ষক নেতা মাইনুল ইসলাম তাদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে শুরু করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তদন্ত বন্ধ করতে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোরও চেষ্টা চালান।
কয়েকজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, “আমরা তথ্য যাচাই করতে গেলে ফোনে হুমকি আসে— ‘তদন্ত করলে ভালো হবে না’। বিষয়টি আমরা স্থানীয় প্রশাসনকেও জানিয়েছি।”

সচেতন মহলের দাবি, দ্রুত তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হোক।
সালথা উপজেলার সচেতন নাগরিক ও শিক্ষক সমাজ বলছেন, বছরের পর বছর ধরে শিক্ষা অফিসে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। ক্ষুদ্র সংস্কার, রং করার কাজ, বেঞ্চ ক্রয়, টয়লেট সংস্কার ইত্যাদি উন্নয়ন খাতের টাকায় নিয়মিত অনিয়ম চলে আসছে।
তারা অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও আত্মসাৎ করা সরকারি অর্থ পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন।