রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও অদৃশ্য ক্ষমতা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পর্যায়ের একাধিক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে আজহারের ছিল ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত ও আর্থিক সম্পর্ক। এ সম্পর্কের জোরে তিনি দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন এবং পদোন্নতি পেতে কোনো বাধার মুখে পড়েননি। দলীয় ‘আশীর্বাদে’ প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যেই তিনি গড়ে তোলেন নিজের একপ্রকার নিরাপত্তা বলয়, যেখানে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেত না।
অভিযোগ— শত কোটি টাকার অঘোষিত সম্পদ
গোপন সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ উত্তর ভূইগর এলাকায় আজহারের মালিকানায় রয়েছে তিনটি বিলাসবহুল বাড়ি। এই এলাকায় প্রতি কাঠা জমির দাম ৫০ লাখ টাকা বা তারও বেশি। শুধু বাড়িই নয়, স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী এই সম্পদের পেছনে রয়েছে ঘুষ, কমিশন, নিয়োগে অনিয়ম ও সরবরাহ খাতে দুর্নীতির টাকায় গড়ে তোলা বিশাল অঘোষিত সাম্রাজ্য। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছেন, “এই এলাকার মানুষ জানে আজহার কতটা ক্ষমতাধর। তার এক ইশারায় অনেক কাজ হয়ে যায়। সরকারি চাকরি করেও তার জীবনযাপন একজন বড় ব্যবসায়ীর মতো।”
তাদের দাবি, আজহারের মোট সম্পদের পরিমাণ শত কোটি টাকারও বেশি, যার বড় অংশই অর্জিত হয়েছে ঘুষ ও অবৈধ উপায়ে।
রাজধানীর বাণিজ্যিক মার্কেটে দোকান ও সম্পত্তি
তদন্তে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পাতাল মার্কেট, রাজধানী সুপার মার্কেট, গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ডসহ দেশের বিভিন্ন নামিদামি মার্কেটে আজহারের নামে বা বেনামে রয়েছে একাধিক দোকান ও ফ্ল্যাট। এসব দোকান থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের ভাড়া এবং পণ্য ব্যবসা করে তিনি গড়ে তুলেছেন বিশাল আর্থিক সাম্রাজ্য। স্থানীয়দের ধারণা— তার এই সম্পদ ও প্রভাব কেবল ব্যক্তিগত নয়, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক লেনদেনের বড় চক্র।
আজহারের বক্তব্য: ‘পৈতৃক সম্পদ’
এ বিষয়ে আজহারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,“আমি পৈতৃক সূত্রে ও নিজের উপার্জনে এই সম্পদের মালিক হয়েছি। আমি জাপানে ছিলাম।”
তাকে প্রশ্ন করা হলে— “জাপানে থাকলেই কীভাবে শত কোটি টাকার মালিক হওয়া সম্ভব?”— তিনি জবাব দেন,“অনেক সাংবাদিক চেষ্টা করেছে, আমার কিছুই করতে পারেনি।”
গুলিস্তান পাতাল মার্কেট বা অন্যান্য মার্কেটে তার দোকানের সংখ্যা জানতে চাইলে আজহার বলেন,“আপনাকে বলব কেনো।”
দুর্নীতি দমন কমিশন ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ
আজহারের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি থেকে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে জেলা প্রশাসন, খাদ্য অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন—“আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, আজহারের মতো প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কেউ টুঁ শব্দ করে না। এখন সময় এসেছে এই দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহির আওতায় আনার।”
তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দ্রুত তদন্ত করে আজহারের সম্পদের উৎস যাচাই করবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।















